এনজিও রেজিস্ট্রেশন

NGO বা সামাজিক সংগঠন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

ব্যবসায়িক আইন

NGO/ এনজিও- নন গভমেন্ট অর্গানাইজেশন, আসলে কি সেটা সম্বন্ধেই আমাদের ধারনা অতি সামান্য। এনজিও মানে একটি সংগঠন। বিশেষ কোন সামাজিক উদ্দেশ্যে, যেমন কোন সামাজিক উন্নয়ন বা কোন সামাজিক সমস্যা নিরসনে কয়েকজন মানুষের একটি সংগঠন। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি রাষ্ট্র যেখানে রয়েছে অনেক ধরনের সমস্যা আর রয়েছে অনেকগুলো স্তর যেখানে রয়েছে উন্নয়নের যথেষ্ট অভাব। কিন্তু, আমি আপনি যেখানে সমস্যা বা অভাব দেখছি, সেখানেই কেউ একজন দেখছে সমাধান বা সম্ভাবনা। কিন্তু, আমাদের দেশে যদি একটা অনলাইন কিংবা অফলাইন জরীপ চালানো হয় এই বিষয়ে যে, এনজিও বলতে কি বুঝে, তাহলে আমি মোটামুটি হলফ করে বলতে পারি যে, হিংস ভাগ মানুষই এনজিও বলতে তা যা বুঝে তা হল, যেখানে ঋণ দেওয়া হয় এবং কিস্তির মাধ্যমে তা আদায় করা হয়। সত্য কথা বলতে এটাই বাস্তবতা বা প্র্যাকটিস হচ্ছে এটাই। কিন্তু, এনজিও’র কাজ যে ঋণ দেওয়া না, এটাই আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ জানে না। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে যেসব এনজিও মানুষকে ঋণ দিচ্ছে, তারা কিভাবে ঋণ দিচ্ছে? উত্তর হচ্ছে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ অথরিটি থেকে অনুমতি সাপেক্ষে আপনাকে আমাকে ঋণ দিচ্ছে। এই অনুমতি ব্যতীত যদি কোন এনজিও ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে, তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ঐ ঋণ কার্যক্রম অবৈধ।

আসুন অন্যের দোষ না ধরে এনজিও কি সেটা নিয়ে একটু কথা বলি। এনজিও- নন গভমেন্ট অর্গানাইজেশন, যা সরকারি নয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা মানুষের উপকারে বা মানুষের স্বার্থে নিঃশর্তে কাজ করে। সবাই তো আসলে আমরা নিজের জন্য কাজ করি, অন্যের জন্য কাজ তো কেবল সরকার করে থাকে, তাও অবশ্যই জনগণের করের টাকায়। কিন্তু, এনজিও সরকারি প্রতিষ্ঠান না হয়েও নিজেদের টাকায় আমাদের উপকারে সামাজিক কাজ করে থাকে। আবার এনজিও’র মত একই ধরনের কাজ করে থাকে ফাউন্ডেশন বা সোসাইটি বা সামাজিক সংগঠন যে নামেই আমরা ডাকি না কেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো, এনজিও, সোসাইটি নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া নিয়ে।

এনজিও এবং সোসাইটি’র মধ্যে পার্থক্য কি?
এনজিও নিবন্ধন করা হয়ে থাকে এনজিও ব্যুরো থেকে আর সোসাইটি নিবন্ধন করা হয়ে থাকে সমাজ সেবা অধিদপ্তর বা জয়েন ষ্টক থেকে। নিবন্ধিত এনজিও’র মাধ্যমে আপনারা দেশী বিদেশী যেকোনো ভাবে ডোনেশন বা দান গ্রহণ করতে পারবেন। কিন্তু, সোসাইটি দিয়ে সেটা আনতে পারবেন না। তবে, যেহেতু বিদেশ থেকে টাকা আসার ব্যাপার রয়েছে, সেহেতু এখানে দুর্নীতির সম্ভাবনাও রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এখন এনজিও ব্যুরো থেকে নিবন্ধন পাওয়া সরকারি চাকরি বা আমেরিকার ভিসা পাওয়ার চেয়েও কঠিন হয়ে গিয়েছে। তবে, দান অনুদানের বিষয় ছাড়া শুধুমাত্র জয়েন ষ্টক থেকে নিবন্ধিত সোসাইটি আর এনজিও’র কার্যক্রমের পরিধি অনেকটাই কাছাকাছি। তাই, আজকে আমরা কেবল জয়েন ষ্টক থেকে কিভাবে ‘সোসাইটি’ বা সংগঠন নিবন্ধন করাবেন, তা দেখব। তবে যারা এনজিও’র নিবন্ধন সম্বন্ধে জানতে ক্লিক করেছেন, তারা হতাশ হবেন না। জয়েন ষ্টক থেকে রেজিস্ট্রেশন করার পরও আপনি চাইলে আপনার সংগঠনটি এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধন করিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার এনজিওটি পরিপূর্ণতা পাবে। এনজিও ব্যুরোতে নিবন্ধন পাওয়া যেতে এখন অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে, তাই এনজিও ব্যুরো থেকে নিবন্ধন না ফেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি জয়েন ষ্টক থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে আপনার সংগঠনের কার্যক্রম দেশব্যাপী পরিচালনা করতে পারবেন। আসুন জেনে নেই, কিভাবে জয়েন ষ্টক থেকে আপনার সংগঠনটি রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিবেনঃ



ভালো কথা, রেজিস্ট্রেশন করার আগে আপনার জানা স্বত্বেও আবার বলছি, আপনাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা অন্তত ৭ জন হতে হবে। বলা বাহুল্য, প্রত্যেককেই প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। আর পরিচয়পত্র স্বরূপ আপনাদের জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড থাকতে হবে সাথে প্রত্যেকের ছবি। ব্যক্তিগত ভাবে সকলেই যখন আপনারা প্রস্তুত তখন আপনাদের প্রয়োজন হবে আপনাদের সংগঠনের নাম। যদি ইতিমধ্যে কোন নাম থেকে থাকে তাহলে তো ভালো আর না থাকলে একটা নাম নির্ধারণ করে নিন। তারপর সেই নামে অন্য কোন সংগঠন আছে কিনা সেটা যাচাই করে নিন, যদি একই নামে কোন সংগঠন থাকে তাহলে ভিন্ন নাম সিলেকশন করুন আর না থাকলে আপনাদের নির্ধারিত নামেই নামের ছাড়পত্র নিন। এই নামের ছাড়পত্রের জন্য আপনাদের যেতে হবে, http://app.roc.gov.bd:7781/psp/nc_search এই লিংকে। লিংকে গিয়ে আপনি দেখতে পাবেন।

এরপর আপনার পছন্দের নাম পেয়ে গেলে আপনি নামের ছাড়পত্রের জন্য নির্ধারিত ফী ব্যাংকে পরিশোধ করে নামটি নিজের করে নিতে পারবেন।

ফী সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়ে থাকে, এই মুহূর্তে ১০০০/- টাকা দেখাচ্ছে। আপনি যখন রেজিস্ট্রেশন করবেন, তখন আপনি নিম্নোক্ত লিংকে গিয়ে চেক করে নিবেন, http://123.49.32.37:7781/psp/fee_calculator

নামের ছাড়পত্র পেয়ে গেলে আপনার কাজ হচ্ছে, আপনার সংগঠনের গঠনতন্ত্র তৈরি করা। গঠনতন্ত্র মূলত আপনার প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিচালিত হবে, কি কি পদ থাকবে, পদ গুলোর জন্য কিভাবে নির্বাচন হবে, অর্থনীতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভবিষ্যতে গঠনতন্ত্রের নমুনা নিয়ে আমরা লিখবো, তখন দেখে দেখে তা আপনিও করতে পারবেন। 

যাই হোক গঠনতন্ত্র তৈরির পর আপনাদের কাজ হচ্ছে সোসাইটির রেজিস্ট্রেশন ফী ব্যাংকে পরিশোধ করা। রেজিস্ট্রেশন ফী এই মুহূর্তে যা দেখাচ্ছে তা নিম্নে দেখান হল। তবে আপনি যখন রেজিস্ট্রেশন করবেন, তখন উপরিউক্ত লিংকে গিয়ে আবার চেক করে নিবেন।

সোসাইটির রেজিস্ট্রেশন ফী’র রসিদ সহ, নামের ছাড়পত্র, গঠনতন্ত্র, আপনারা যতজন সদস্য সকলের পরিচয়পত্র, ছবি ইত্যাদি সবকিছু আপনি এবার জয়েন ষ্টকে সাবমিট বা জমা দিবেন। জমা দেওয়ার পর জয়েন ষ্টক সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন এবং NSI এর মাধ্যমে আপনাদের সকল তথ্য এবং কার্যক্রম তদন্ত করে দেখবে। NSI সন্তুষ্টজনক রিপোর্ট দিলেই কেবল আপনারা রেজিস্ট্রেশন পাবেন, না হলে আবেদন খারিজ হয়ে যাবে।

যেহেতু NSI বা গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট যদি আপনাদের পক্ষে আসে, তাহলে আপনাদেরকে জয়েন ষ্টক থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে দিবে, সেহেতু রিপোর্ট আপনাদের পক্ষে আসার জন্য যে বিষয়গুলোতে আপনারা সচেতন থাকতে পারেন:

  • আগে দর্শনদারি, তারপর গুন বিচারী। আপনি কেমন, আপনার বাকী সদস্যরা কেমন, সেটা যাচাই বাছাই করে সন্তুষ্ট হলেই কেবল গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট পজেটিভ আসবে।
  • গঠনতন্ত্র সঠিক নিয়মে তৈরি করতে পারে না। নিজেরা কিভাবে লাভবান হবেন, সেটা গঠনতন্ত্রে ফুটে উঠে। তাই ব্যক্তি স্বার্থ দেখলেই চলবে না, সমাজের জন্য কি অবদান রাখতে চান সেটাই গঠনতন্ত্রে তুলে ধরুন।
  • সোসাইটির নাম দিয়ে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করতে চাইলে ধরা খাবেন। তবে, বৈধভাবে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ অথরিটি থেকে অনুমতি নিয়ে তারপরও এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ অথরিটি থেকে কিভাবে অনুমতি নিতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত পরে কোন একসময় লেখার চেষ্টা করবো।

সর্বোপরি, morning shows the day, আপনার সবকিছু আপনার গঠনতন্ত্রের মধ্যেই নিহিত। তাই, নিজেদের উদ্দেশ্য সৎ রাখুন, গঠনতন্ত্র ঠিক রাখুন, ইনশাআল্লাহ্‌ রেজিস্ট্রেশন পাবেন। আজ এই পর্যন্তই।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.