একমাত্র কন্যা সম্পত্তি উত্তরাধিকার

কন্যা যখন আপনার একমাত্র উত্তরাধিকার

উত্তরাধিকার আইন

উত্তরাধিকার নিয়ে কার্যত যে চিন্তাটা আমাদের মাথায় সবচেয়ে বেশি কাজ করে সেটা হচ্ছে আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের সম্পত্তি যারা ভোগ দখল করবে বা মানুষের কাছে আমাদের নাম-পরিচয় বাঁচিয়ে রাখবে বা আমরা আমাদের লিগ্যাসি যাদের মাধ্যমে তৈরি করে যাবো; অর্থাৎ আমাদের সন্তানদেরকে। সন্তান বলতে এখানে ছেলে মেয়ে উভয়কেই বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা দুই পর্বে ছেলে-মেয়ের সম্পত্তিতে অধিকার নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমেই সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করছি। ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে একটা কমন জিনিস আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে, যদি কোন বাবা কিংবা মায়ের ছেলে, মেয়ে উভয়ই থাকে সেক্ষেত্রে তারা সর্বদা একটাই অনুপাত অনুসরণ করবে, আর তা হচ্ছে ছেলে যা পাবে মেয়ে তার অর্ধেক পাবে অর্থাৎ একটি ছেলে যা পাবে, দুইটি মেয়ে মিলে তার সমান পাবে। আপনি একজন মেয়ে, আপনার বাবা, মা মারা যাওয়ার পরে উত্তরাধিকার হিসেবে আপনারা ভাই-বোন উভয়ই যদি থেকে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার ভাই যা পাবে আপনি তার অর্ধেক পাবেন; অর্থাৎ ভাইঃবোন=২:১, এই অনুপাতে ভাগ করতে হবে। কিন্তু আপনারা যদি এক ভাই, দুই বোন হয়ে থাকেন তাহলে সম্পত্তি চার ভাগ হবে, দুই ভাগে পাবে আপনার ভাই আর বাকি দুই বার এক ভাগ করে প্রত্যেক বোন পাবেন। কিন্তু বিপত্তিটা কখন হয় যখন কোন ভাই থাকে না। কোন দম্পতির যখন কোন ছেলে সন্তান থাকে না সেই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মেয়ে থাকলে, সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়াটা কেমন সেটা নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করব।

অসংখ্য নাটক-সিনেমায় আমরা দেখে থাকি, কোন দম্পতির মাত্র একটি মেয়ে। বাস্তবে এমনটা খুব একটা দেখা যায় না। তারপরও যদি কোন দম্পতির শুধুমাত্র একটি মেয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে ওই মেয়ে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যেহেতু কোন ছেলে নাই সে ক্ষেত্রে বাকি সম্পত্তি অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কিন্তু যদি একাধিক মেয়ে সন্তান থেকে থাকে তাহলে মোট সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ মেয়েদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা হবে, বাকি সম্পত্তি উত্তরাধিকারদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। এখানে ২/৩ বা তিন ভাগের দুই ভাগ এটা নিয়ে আবার বিভ্রান্তিতে পড়ার কিছু নেই। ১০০ টাকার তিন ভাগের দুই ভাগ হচ্ছে ৬৬ টাকা। এই টাকা বণ্টন করা হবে একের অধিক যতজন বোন থাকবে তাদের মধ্যে। যদি দু’জন থাকে তাহলে প্রত্যেকে ৩৩ করে পাবে, যদি তিনজন থাকে প্রত্যেকে ২২ করে পাবে, এভাবে যতজন হবে ততো জনকেই তিন ভাগের দুই ভাগ অংশটি সমানভাবে বণ্টন করে দেয়া হবে।



এখন কারো প্রশ্ন থাকতে পারে যে, আমার নিকটাত্মীয় যারা রয়েছে তারা খুব একটা সুবিধার লোক নয় বা কোন বাবা-মা নিজেও চিন্তা করতে পারে না যে, তাদের অবর্তমানে তাদের সন্তানদেরকে দেখা শুনার করার মতো তাদের নিকট আত্মীয় কেউ ওই ভাবে আছে বা যারা আছে তারা সম্পদ লোভী বই আর কিছুই নয়। তাহলে কেন আমার সারাজীবনের কষ্টার্জিত সম্পত্তি তাদের জন্য রেখে যাবে? এখন যদি আমার ছেলে সন্তান নেই, সেক্ষেত্রে মেয়েরা তো পুরো সম্পত্তির মালিক হবে না। কিভাবে তাহলে আমি আমার সম্পত্তি শুধুমাত্র আমার মেয়েদেরকে মালিক করে দিয়ে যেতে পারে? এক্ষেত্রে একটি উপায় হচ্ছে, আপনাকে আপনার জীবদ্দশায় আপনার পুরো সম্পত্তি আপনার মেয়েদের নামে লিখে দিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ হেবা দলিলের মাধ্যমে আপনি আপনার সম্পত্তি আপনার মেয়েদেরকে দিয়ে যেতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্য সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অন্যদেরকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে গিয়ে আবার নিজেরাই যাতে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয় যান, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যে, মেয়েদেরকে পুরো সম্পত্তি লিখে দেওয়ার পরে মেয়েদের বিবাহের পরে মেয়েদের স্বামীদের কাছে অনেক নির্যাতিত হতে হয়েছে। তাছাড়া অবিবাহিত মেয়ে থাকলে ঐ মেয়ে সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে ফেললে তখন ঐ মেয়ের সম্পত্তির লোভে তাকে বিয়ে করার জন্য আশেপাশে কত প্রকারের যে সমস্যা তৈরি হয়, তা আর লিখতে হবে না। তাই, পুরো সম্পত্তি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়ার আগে একাধিকবার চিন্তা করা উচিত, নিজেদের জন্যও ব্যবস্থা রাখা উচিত।
এবার আসি আর একটি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে, আমাদের সমাজে একটি ধারণা রয়েছে, কিছুদিন আগে গ্রামে আমি এ ধরনের উদাহরণ দেখেছি যে বাবার সম্পত্তিতে ছেলের অধিকার বেশি, মায়ের সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার বেশি, এই ধারণা পোষণ করে অনেকেই। মায়েদেরকে ভুল বুঝিয়ে সম্পত্তি বণ্টনের নিয়ম পাল্টে থাকে কিন্তু আপনাকে জানিয়ে রাখা ভাল যে, সম্পত্তি বণ্টনের হিসেবে সন্তানদের ক্ষেত্রে তার বাবা-মা উভয়ই সমান; অর্থাৎ বাবা বা মায়ের সম্পত্তি বণ্টনের জন্য ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য একটাই অনুপাতে ছেলেঃমেয়ে=২:১; এটার কোন নড়চড় নেই।

আমাদের দেশে বাবার মৃত্যুর পরে ভাইরা সাধারণত তাদের বোনদেরকে সম্পত্তি দিতে চাই না। এমনও বলে থাকে যে, বোনের বিয়েতে অনেক খরচ করেছে, এজন্য বোনকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে থাকে। বোনরা বিয়ের পরে চলে যায় স্বামীর বাড়িতে, সেক্ষেত্রে বাবার সম্পত্তির কাগজপত্রের ওই ধরনের ব্যবস্থা থাকে না, যার কারণে ছেলেরা যদি সম্পত্তি দিতে না চায়, সেক্ষেত্রে মেয়েদেরকে আসলেই যথেষ্ট অসহায় অবস্থায় পড়তে হয়। এজন্য প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত হচ্ছে তাদের জীবদ্দশায় তাদের ছেলেদেরকে যাতে তাদের মেয়েদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না করে, সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত করা। সম্ভব হলে মেয়েদেরকে কোন জায়গাটা দিতে চাচ্ছেন সেই বিষয়টিও অন্তত মৌখিকভাবে বলে দিয়ে যাওয়া। আরও ভালো হয়, মেয়েদেরকে কিছু সম্পত্তি জীবদ্দশায় উইল বা হেবা করে দেওয়া যেতে পারে। তারপরও যদি কোন ধরনের ব্যবস্থা না থাকে, ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা যদি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চায়, আপনাকে মেয়ে হিসেবে আপনার বাবার সম্পত্তিতে আপনার হক বা উত্তরাধিকার আদায় করতে হলে আপনার বাবার মৃত্যু সনদ এবং বাবার ওয়ারিশ সনদ নিয়ে আপনার বাবার সম্পত্তিতে আপনার উত্তরাধিকার সূত্রে যে অধিকার বা হিস্যা রয়েছে, সেটি আদায় করার জন্য বাটোয়ারা মামলা করার মাধ্যমে আপনি উক্ত সম্পত্তি আদায় করতে পারবেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তিতে যে অধিকার সেটি কোনভাবেই বিলুপ্ত হয় না, তবে আগে আসলে আগে পাবেন, পরে গেলে পস্তাবেন, হয়ত লম্বা যুদ্ধ করে কিছুই পাবেন না। তাই, বাবা মারা যাওয়ার পরপরই এই বিষয় গুলো নিয়ে ঘরোয়া ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা যদি আপনার বাবার সম্পত্তি সব বা বেশীর ভাগ বিক্রি করে দেয়, তাহলেও আপনি কিভাবে প্রতিকার পেতে পারেন, তা নিয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে আর্টিকেল রয়েছে, দেখে আসতে পারেন। আজকে এই পর্যন্তই, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.