বাবার সম্পত্তিতে মায়ের আগের সংসারের সন্তানরা কি ভাগ পাবে

বাবার সম্পত্তিতে মায়ের আগের সংসারের সন্তানরা কি ভাগ পাবে?

উত্তরাধিকার আইন

সম্পত্তি বণ্টনের উপর আমরা লাগাতার অনেক গুলো আর্টিকেল লিখেছি, কিন্তু তারপরও অনেকেই অনেকগুলো বেসিক বিষয় বুঝতে পারছেন না দেখে আমরা সেই বেসিক বিষয় গুলো নিয়ে আরও সহজ ভাষায় আর্টিকেল লেখার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে, এই আর্টিকেলের টপিকটি বেশ অন্যতম। বাবার সম্পত্তিতে মায়ের আগের সংসারের সন্তানরা কি ভাগ পাবে?
অনেকের কাছেই বিষয়টি খুবই সহজ বা বাহুল্য মনে হতে পারে। তবে, বিশ্বাস করুন শুধু এই টপিক বা এর প্রাসঙ্গিক অনেক টপিক নিয়ে প্রায়শই আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তাই, অনেকের কাছেই বাহুল্য মনে হলেও আজকে আমরা বেশ সহজ ভাষায় আলোচনা করবো। চলুন, শুরু করা যাক।

বুঝার সুবিধার্থে আমরা একটি কাল্পনিক পরিবার নিয়ে চিন্তা করি চলুন। রিনা এবং মফিজ স্বামী স্ত্রী এবং তাদের ১ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে। মফিজের এটি প্রথম বিয়ে বা সংসার হলেও রিনার কিন্তু এটি ২য় বিয়ে। এর আগে রিনার একটি বিয়ে হয়েছিল এবং ১টি মেয়েও আছে কিন্তু স্বামীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন মফিজ সাহেবের ২ সন্তান অর্থাৎ ১ ছেলে ১ মেয়ে হলেও, রিনার কিন্তু ৩ সন্তান, ১ ছেলে ২ মেয়ে। রিনার আগের সংসারের মেয়েটি মফিজ সাহেবকেই বাবা বলে ডাকে। তিনি সৎ মেয়েকে আপন মেয়ের মতই স্নেহ করেন। বেশ ভালোই চলছে ওনাদের সুখের সংসার। কিন্তু, সুখ বেশি দিন স্থায়ী হল না। অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মফিজ সাহেব মারা গেলেন। মফিজ সাহেব মারা যাওয়ার আগে কোন উইল করে যান এবং রেখে গেলেন স্ত্রী রিনা এবং ২ সন্তান। এমতাবস্থায়, মফিজ সাহেবের সম্পত্তি বণ্টন হবে ওনার স্ত্রী রিনা এবং ১ ছেলে, ১ মেয়ের মধ্যে। অর্থাৎ, স্ত্রী রিনা বেগম ১/৮ অংশ, আর বাকি ৭/৮ অংশ ছেলে মেয়ের মধ্যে ২ঃ১ অনুপাতে বণ্টন হবে। অনেকেই এই ভাবে বললে, সম্পত্তির ভাগ বুঝতে পারে না। তাই, পারসেন্টের হিসেবে বলছি, রিনা বেগম ১২.৫০%, বাকি ৮৭.৫০% ছেলে আর মেয়ের মধ্যে ২ঃ১ অনুপাতে বণ্টন হবে। ছেলে পাবে ৫৮.৩৩% আর মেয়ে পাবে ২৯.১৭%। আর বাকি রইল রিনার আগের সংসারের মেয়ে, ধরুন তার নাম মনি। মনি যেহেতু মফিজ সাহেবের বায়োলজিক্যাল সন্তান নন, তাই মনি মফিজ সাহেবের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কোন অংশ পাবেন না। এই পর্যন্ত আশা করি, সবাই বুঝতে পেরেছেন।
এবার আসুন মূল বিষয়ে। আমরা জানি, ধূমপানের কারণে ধূমপায়ী নিজে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার আশপাশের লোকজন। প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী যেমন ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে, তেমনি পরোক্ষ ধূমপায়ীরও ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। ধরুন, রিনা বেগমও এমন যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলো। এখন, রিনা বেগম যেহেতু উইল করে যাননি, তাই ওনার সম্পত্তিও বণ্টন করতে হবে মুসলিম আইন অনুসারে। রিনার উত্তরাধিকার হচ্ছে ১ ছেলে ২ মেয়ে। এখন ধরুন, রিনার নিজস্ব কোন সম্পত্তি ছিল না। যা আছে তার পুরোটাই হচ্ছে তার মৃত স্বামী মফিজ সাহেবের কাছ থেকে পাওয়া ১২.৫০%, যার পরিমাণ যে কোন পর্যায়ের হতে পারে। এখন, রিনা বেগমের ঐ সম্পত্তি যেহেতু তিনি ওনার মৃত স্বামী মফিজ সাহেবের কাছ থেকে পেয়েছেন, সেহেতু ঐ সম্পত্তিতে রিনা বেগমের আগের সংসারের মেয়ে মনি কি কোন সম্পত্তি পাবে কিনা?
উত্তরটি এক শব্দে বললে, হ্যাঁ। কেন হ্যাঁ, সেটি বুঝতে হলে আপনাকে অনেক বড় গণিতবিদ হতে হবে না, শুধু কমন সেন্সটুকু সতেজ রাখতে হবে। আচ্ছা, এখানে আরও সহজ করে বুঝানোর জন্য নগদ টাকার উদাহরণ টানা যেতে পারে। আমাদের দেশের টাকার নোট গুলোতে বঙ্গবন্ধুর ছবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো আর টাকার পরিমাণ সম্বন্ধে লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নাম ও স্বাক্ষর দেওয়া থাকে। কিন্তু, টাকাটার মালিক কে সেটা কিন্তু লেখা থাকে না। আপনার কাছে থাকলে আপনি মালিক, আমার হাতে আসলে আমি মালিক, আবার এই টাকা কার কাছ থেকে কার কাছে গেলো সেটারও কোন রেকর্ড নেই। আপনি যদি সম্পত্তির বিষয়টিও একটু এইভাবে ভাবতে পারেন, তাহলে আপনার বুঝতে সহজ হবে। ধরুন, মফিজ সাহেব ১ কোটি টাকা রেখে মারা গেছেন, যার মধ্যে সাড়ে ১২ লাখ টাকা স্ত্রী হিসেবে রিনা বেগম পেলেন। ছেলে ৫৮ লাখ ৩৩ হাজার আর মেয়ে ২৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা। মনি কিন্তু তখন কিছুই পেল না।
কিন্তু, রিনা বেগম যখন স্বামীর কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পেলেন উত্তরাধিকারসূত্রে, তখন ঐ টাকার একান্ত মালিক তিনি নিজেই। ঐ টাকায় উনি যা খুশি তাই করতে পারেন। তিনি চাইলে ঐ টাকা পুরোটাই মনিকে অর্থাৎ ওনার আগের সংসারের মেয়েকে দিয়ে দিলেও কোন আইনি বাঁধা নেই। কিন্তু, তিনি যেহেতু তা করেননি, সেহেতু তিনি মারা যাওয়ার পর ওনার সাড়ে ১২ লাখ টাকা ৪ ভাগ হবে। ২ ভাগ পাবে ছেলে আর বাকি ২ ভাগ পাবে ২ মেয়ে। অর্থাৎ, মনি সাড়ে ১২ লাখ টাকার ৪ ভাগের ১ ভাগ পাবে, আর পারসেন্টের হিসেবে ২৫%। এখানে, মফিজ সাহেবের ছেলে মেয়ে এটা দাবি করতে পারবে না যে, রিনা বেগমের ঐ অর্থ মফিজ সাহেব থেকে প্রাপ্ত বলে রিনা বেগমের আগের সংসারের মেয়ে মনি কোন ভাগ পাবে না। যখন উত্তরাধিকার হিসেবে কেউ কোন সম্পত্তি পায়, সেই সম্পত্তি তার একান্ত নিজের সম্পত্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে, যেমনটা তার নিজের উপার্জিত সম্পত্তিকে মূল্যায়ন করা হয়। আশা করি, এখন এই নিয়ে আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়। আজ এই পর্যন্তই, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.