শ্রম আদালত

শ্রম আদালত গঠন এবং মামলা দায়ের প্রক্রিয়া: পর্ব ১

দেওয়ানি আইন শ্রম আইন

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ আইনের অধীনে যত অপরাধ রয়েছে, তার প্রতিটি অপরাধের বিচারই উক্ত আইনের ২১৪ ধারা অনুসারে কেবলমাত্র শ্রম আদালতে অধীনে বিচারকার্য পরিচালিত হবে। উক্ত আইনের ৩১৩ ধারায় আরও বর্ণিত আছে যে, শ্রম আদালত ব্যতীত অন্য কোন আদালত এই আইন বা কোন বিধি, প্রবিধান বা স্কিমের অধীন কোন অপরাধের বিচার করবে না। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়ে যে, শ্রম আইনের অধীন অপরাধ সমূহের বিচার হবে এখতিয়ার সম্পন্ন শ্রম আদালতে।

যেহেতু, শ্রম আদালতের দেওয়ানী এবং ফৌজদারি উভয় ধরনের এখতিয়ার রয়েছে, সেহেতু এখন ভিকটিম যেভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন, ন্যায় বিচারের জন্য অবশ্যই শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। আসুন এবার আমরা আইনের ধারায় প্রবেশ করি এবং সাবলীল ভাষায় বুঝার চেষ্টা করি।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১৪ ধারাতে শ্রম আদালতের গঠন সম্বন্ধে বলা হয়েছে। শ্রম আদালত তিন সদস্য বিশিষ্ট হবে। আর-

(১) এই আইনের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রম আদালত স্থাপন করতে পারবে৷ শ্রম আইনকে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর করার জন্য সরকার গেজেটের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুসারে শ্রম আদালত স্থাপন করতে পারবে, এতে শ্রম আদালতের সংখ্যা এলাকা ভিত্তিতে কম বেশি হতে পারে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন একাধিক শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে, সরকার উক্ত প্রজ্ঞাপনে তাদের প্রত্যেককে যে এলাকায় এই আইনের অধীন এখতিয়ার প্রয়োগ করবে তা নির্ধারণ করে দিবে৷
–এলাকার ভিত্তিতে শ্রম আদালতের সংখ্যা যদি একাধিক হয়, তবে কোন আদালতের এখতিয়ার কতটুকু তা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে।

(৩) শ্রম আদালতের একজন চেয়ারম্যান এবং তাকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য, দুইজন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে, তবে কোন অপরাধের বিচার অথবা দশম এবং দ্বাদশ অধ্যায়ের অধীন কোন বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কেবল মাত্র চেয়ারম্যান সমন্বয়ে গঠিত হবে৷
–একজন চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ২জন সদস্য নিয়ে শ্রম আদালত গঠিত হবে। কিন্তু, অপরাধের বিচার অথবা দশম অধ্যায় তথা মজুরী ও উহার পরিশোধ, দ্বাদশ অধ্যায় তথা দুর্ঘটনা জনিত কারণে জখমের জন্য ক্ষতিপূরণ বিষয়ে নিষ্পত্তির বেলায় কেবলমাত্র চেয়ারম্যান সমন্বয় করবে।
(৩ক) শ্রম আদালতের সদস্যগণ তাদের মতামত লিখিতভাবে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানকে জানাতে পারবেন এবং সদস্যগণ কোন মতামত জানালে তা মামলার রায়ে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
–উপধারা ৩ এ যেহেতু বর্ণিত আছে যে, শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ২ জন সদস্য থাকবে, তাই উপধারা ৩ক এ বলা হয়েছে যে, শ্রম আদালতের সদস্যগণ যদি কোন মতামত দিয়ে থাকে তাহলে মৌখিকের পরিবর্তে লিখিতভাবে জানাতে পারবেন এবং ওনাদের মতামত অবশ্যই মামলার রায়ে উল্লেখ করতে হবে।
আবদুস সাত্তার বনাম শ্রম আদালত, চট্টগ্রাম (১৯৯৬) ৪৮ ডিএলআর ৫২৫ মামলার রায়ে বলা হয়েছে, শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের উচিত সদস্যদের যুক্তিপূর্ণ মতামত গ্রহণ করা। আবার, ন্যাশনাল ব্যাংক, পাকিস্তান বনাম গোলাম মোস্তফা, ২৭ ডিএলআর ১৫৮ মামলার রায়ে বলা আছে যে, সদস্যদের পরামর্শ অবশ্যই চাইতে হবে এবং তা বিবেচনা করতে হবে। সদস্যদের পরামর্শ প্রদানে ব্যর্থতা বাধ্যতামূলক বিধানের লঙ্ঘন। এর ফলে আদালতের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে যাবে।

(৪) শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান সরকার কর্তৃক কর্মরত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজগণের মধ্য হতে নিযুক্ত হবেন৷
–জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজদের মধ্য থেকে সরকার শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিবেন।

(৫) শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণের নিযুক্তির শর্তাবলী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে৷
–চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ নিয়োগ সংক্রান্ত শর্তাবলী স্বয়ং সরকার নির্ধারণ করবে। যেমন, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বয়স, মেয়াদ ইত্যাদি

(৬) শ্রম আদালতের দুইজন সদস্যের মধ্যে একজন মালিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী এবং অপরজন শ্রমিকগণের প্রতিনিধিত্বকারী হবেন, এবং তারা উপ-ধারা (৯) এ বর্ণিত পন্থায় নিযুক্ত হবেন৷
–শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান কোন নির্দিষ্ট শিল্প বিরোধের শুনানি বা নিষ্পত্তির জন্য মালিক এবং শ্রমিক, উভয় তালিকা হতে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। উক্তরূপ নির্বাচিত প্রতিনিধিদ্বয় এবং চেয়ারম্যান সহকারে উক্ত শিল্প বিরোধ সম্পর্কে শ্রম আদালত গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।

(৭) সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পন্থায়, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দুইটি সদস্য তালিকা প্রস্তুত করবে, যার একটিতে ছয়জন মালিক প্রতিনিধির নাম এবং অপরটিতে ছয়জন শ্রমিক প্রতিনিধির নাম থাকবে৷
–উভয় ক্যাটাগরিতে ৬ জন করে প্রতিনিধির নাম সরকার গেজেটের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করবেন।

(৮) উপ-ধারা (৭) এর অধীন প্রস্তুতকৃত সদস্য তালিকা প্রতি দুই বৎসর অন্তর পুনর্গঠিত হবে, তবে উক্ত দুই বৎসর শেষ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববর্তী তালিকার অন্তর্ভুক্ত সদস্যগণ নতুন তালিকা সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপিত না হওয়া পর্যন্ত তালিকাভুক্ত থাকবেন৷
–উভয় ক্যাটাগরিতে ৬ জন করে যে প্রতিনিধির তালিকা সরকার গেজেটের মাধ্যমে প্রস্তুত করবে তার মেয়াদ থাকবে ২ বছর পর্যন্ত। ২ বছর পর পর এই তালিকা পুনর্গঠন হবে। তবে, কোন কারণে ২ বছর সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও যদি তালিকা পুনর্গঠন করে সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপিত না হয়, তবে প্রজ্ঞাপিত না হওয়ার পর্যন্ত পূর্বের বা চলমান তালিকার সদস্যদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। মোদ্দা-কথা, নতুন তালিকা গঠিত না হওয়া অবধি বর্তমান তালিকার সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

(৯) শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান কোন নির্দিষ্ট শিল্প বিরোধের শুনানি বা নিষ্পত্তির জন্য উপ-ধারা (৭) এ উল্লিখিত উভয় তালিকা হইতে একজন করিয়া প্রতিনিধিকে নির্বাচন করিবেন এবং উক্তরূপ নির্বাচিত প্রতিনিধিদ্বয় এবং চেয়ারম্যান সহকারে উক্ত শিল্প বিরোধ সম্পর্কে শ্রম আদালত গঠিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে: তবে শর্ত থাকে যে, শিল্প বিরোধ সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানির জন্য চেয়ারম্যান উক্ত যে কোন তালিকা হইতে যে কোন একজন প্রতিনিধিকে আদালতের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করিতে পারিবেন৷

শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান কোন নির্দিষ্ট শিল্প বিরোধের শুনানি বা নিষ্পত্তির জন্য মালিক এবং শ্রমিক, উভয় তালিকা হতে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। উক্তরূপ নির্বাচিত প্রতিনিধিদ্বয় এবং চেয়ারম্যান সহকারে উক্ত শিল্প বিরোধ সম্পর্কে শ্রম আদালত গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, শিল্প বিরোধ সংক্রান্ত একাধিক মামলার শুনানির জন্য চেয়ারম্যান উক্ত যে কোন তালিকা হতে যে কোন একজন প্রতিনিধিকে আদালতের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করতে পারবেন৷

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.