Commissible and non-commissible offences

আমলযোগ্য এবং আমলঅযোগ্য অপরাধ বলতে কি বুঝায়?

ফৌজদারি আইন

একটি অভিযোগ পুলিশের কাছে করবো নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে, একটি মামলা থানায় দায়ের করবো নাকি আদালতে, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে সবসময় একটা কনফিউশন বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। আজকে আমরা উক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করার চেষ্টা করবো। তো চলুন শুরু করা যাক:

কোন মামলায় কোথায় যেতে হয়, সেটি বুঝার আগে বুঝতে হবে দেওয়ানী মোকদ্দমা আর ফৌজদারি মামলা সম্বন্ধে। কোন সম্পত্তি বা দাবী বা অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে কোন বিরোধের ক্ষেত্রে মোকদ্দমা দায়ের করতে হয় দেওয়ানী আদালতে। এর বাহিরে ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ সংগঠিত হলে সেগুলো হল ফৌজদারি অপরাধ, যেগুলো দায়ের করতে হয় থানা বা আদালতে। আজকে আমরা জানবো, কোন মামলা থানায় আর কোন মামলা আদালতে দায়ের করতে হয় সে সম্বন্ধে।
এক কথায় উত্তর দিলে বলা যায়, যে অপরাধটি আমলযোগ্য সেই অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে হবে থানায় আর যে অপরাধটি আমলঅযোগ্য সেই অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে হবে আদালতে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন অপরাধটি আমলযোগ্য আর কোন অপরাধটি আমলঅযোগ্য?

বিষয়বস্তু আমলযোগ্য অপরাধ আমলঅযোগ্য অপরাধ
সংজ্ঞাগত আমলযোগ্য অপরাধ হচ্ছে সে সকল অপরাধ, যেসব অপরাধের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২য় তফসিল অনুযায়ী বা অন্য যেকোন ফৌজদারি আইন অনুযায়ী পুলিশ বিনা ওয়ারেন্ট বা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে।

একটি আমলযোগ্য অপরাধ একটি গুরুতর অপরাধ যেখানে পুলিশের কাছে পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা রয়েছে। আমলযোগ্য অপরাধের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খুন, অপহরণ এবং ডাকাতির মত অপরাধ সমূহের কথা।

আমলঅযোগ্য অপরাধ হচ্ছে সে সকল অপরাধ, যেসব অপরাধের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২য় তফসিল অনুযায়ী বা অন্য যেকোন ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ব্যতীত পুলিশ বিনা ওয়ারেন্ট বা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না।

আমলঅযোগ্য অপরাধ একটি কম গুরুতর অপরাধ যেখানে ওয়ারেন্ট ছাড়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের নেই। আমলঅযোগ্য অপরাধের উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এবং ট্রাফিক লঙ্ঘনের মত লঘু অপরাধ সমূহ। আমলঅযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতার করার আগে পুলিশকে প্রথমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছ থেকে পরোয়ানা নিতে হবে।

তদন্ত শুধু গ্রেফতার নয়, পুলিশ আদালত বা ম্যাজিষ্ট্রেটর আদেশ ছাড়াই আমলযোগ্য অপরাধের তদন্তও করতে পারে। অর্থাৎ, আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অপরাধ তদন্ত করার এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রথমে ওয়ারেন্ট না নিয়ে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রয়েছে।

আমলযোগ্য অপরাধগুলো সাধারণত অপরাধের মানের দিক থেকে গুরুতর এবং শাস্তির দিক থেকেও এসব অপরাধের অপরাধীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। এর ফলে, পুলিশের কাছে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তদন্ত ও গ্রেফতার করার অধিক ক্ষমতা রয়েছে।

ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ বা অনুমতি ব্যতীত পুলিশ অফিসার আমলঅযোগ্য অপরাধের তদন্ত করতে পারেন না।

আমলঅযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রাপ্ত সংবাদ থানায় রক্ষিত সাধারণ ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করবেন এবং অপরাধের সংবাদদাতাকে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট প্রেরণ করবেন। আমলঅযোগ্য অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্তের আদেশ বা অনুমতি ব্যতীত তদন্ত করবেন না। তবে, তদন্তের আদেশপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার তদন্তের ব্যাপারে আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ন্যায় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারলেও বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন না।

অপরাধসমূহ আমলযোগ্য অপরাধের উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতমঃ

হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, ধর্ষণ, সন্ত্রাস ইত্যাদি। 

আমলঅযোগ্য অপরাধের উদাহরণগুলোর মধ্যে অন্যতমঃ

উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অনুপ্রবেশ, মানহানি, প্রতারণা ইত্যাদি।

থানা আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ভিক্টিম বা সংবাদদাতা মৌখিক বা লিখিত আকারে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। আমলঅযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে ভিক্টিম বা সংবাদদাতা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সেটি মামলার পরিবর্তে শুধু জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
রেফারেন্স ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪(চ); পি আর বি (পুলিশ রেগুলেশনস, বেঙ্গল) ২৪৩ বিধি ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪(ট); পি আর বি (পুলিশ রেগুলেশনস, বেঙ্গল) ২৫৪ বিধি

আমলযোগ্য এবং আমলঅযোগ্য অপরাধের মধ্যে মূল পার্থক্য তদন্ত ও গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় পুলিশের সম্পৃক্ততার মাত্রা নিয়ে হলেও এখানে মূলত অপরাধের গুরুতর মাত্রার ভিত্তিতেই এগুলোকে শ্রেণি বিন্যাস করা হয়েছে। অনেকেই আমলযোগ্য এবং আমলঅযোগ্য অপরাধকে ভাগ করেন শাস্তির বিচারে; সাজা ৩ বছরের কম বেশির ভিত্তিতে। ৩ বছর বেশি হলে আমলযোগ্য আর এর কম হলে আমলঅযোগ্য। যদিও কোন অপরাধ আমলযোগ্য আর কোন অপরাধ আমলঅযোগ্য সেটি জানতে হলে যাচাই করতে হবে ফৌজদারি কার্যবিধি অথবা অপরাধটি যে আইনের অধীন। তবে বেশির ভাগ ক্রিমিনাল বা ফৌজদারি অপরাধ যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির অন্তর্ভুক্ত সেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ২য় তফসিলের ৩য় কলামে চোখ বুলালেই দেখতে পাওয়া যাবে, কোন অপরাধটি আমলযোগ্য আর কোন অপরাধটি আমলঅযোগ্য।

আশা করি, উপরের আলোচনায় আমলযোগ্য আর আমলঅযোগ্য অপরাধের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সরাসরি থানায় যাবেন আর আমলঅযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে আদালতে। তবে, সকল অপরাধের ক্ষেত্রেই শুরুতে থানায় যাওয়া উত্তম। থানা অভিযোগ গ্রহণ করলে তো ভালো, নাহলে আদালতের দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত।

তবে হ্যাঁ, এটাও সত্য যে সর্বদা আমলযোগ্য আর আমলঅযোগ্য অপরাধের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট বা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার নয়। এমনও কিছু সময় আছে যখন আমলযোগ্য আর আমলঅযোগ্য অপরাধের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটে যায়। একটি অপরাধ আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে শুরু হলেও সেটি পরবর্তীতে আমলঅযোগ্য অপরাধে পরিণত হতে পারে আবার একইভাবে একটি অপরাধ আমলঅযোগ্য অপরাধ হিসেবে শুরু হয়ে সেটি পরবর্তীতে আমলযোগ্য অপরাধে পরিণত হতে পারে। তবে সেগুলোর উদাহরণ টানলে আর্টিকেল আরও বড় হয়ে যাবে, ভবিষ্যতে কোন একদিন; আজকে বরং এ পর্যন্তই। আল্লাহ্‌ হাফেজ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.