আদালতে সাজা

ফৌজদারি আদালত এবং এর এখতিয়ার

ফৌজদারি আইন

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট, যার দুটো বিভাগ রয়েছে। আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ। আমরা সুপ্রিম কোর্টকে সাধারণত হাইকোর্ট বলে অভিহিত করে থাকলেও হাইকোর্ট আসলে সুপ্রিম কোর্টের একটি বিভাগ, যার অন্য বিভাগের নাম হচ্ছে আপীল বিভাগ। হাইকোর্টের কোন রায়ের বিরুদ্ধে কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে আপীল করতে পারেন, সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে। আজকে আমরা আলোচনা করবো, কোন আদালত কোন সাজা দিতে পারে।

আমরা সাধারণত জানি যে, অপরাধের ভিত্তিতে সাজা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যেমন চুরির শাস্তি ৩ বছর, খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন ইত্যাদি। যার ফলে, কোন অপরাধ কোন আদালতে বিচার হবে সেটি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে কোন আদালতের কত টুকু শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে সেটির উপর। কোন আদালতের যদি ৫ বছরের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার থাকে, সেই আদালত অনায়াসেই চুরির বিচার করতে পারবে। কেননা, চুরির শাস্তি হচ্ছে ৩ বছর। কিন্তু, ঐ একই আদালত কিন্তু চাইলে খুনের বিচার করতে পারবে না, কেননা খুনের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, চুরির শাস্তি ৩ বছর মানেই কিন্তু এটা নয় যে, চুরি করলেই ৩ বছরের সাজা হবে; বরং চুরির সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে ৩ বছর, এখন আদালত চাইলে ৩ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সাজা প্রদান করতে পারেন।

আবার, যে আদালত খুনের শাস্তির বিচার করতে পারবে, সে আদালত কিন্তু চুরির বিচার করতে পারবে না। কেননা, মামলা করার সময় সবচেয়ে আদি এখতিয়ার রয়েছে এমন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। যেমন, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ৫ বছর পর্যন্ত যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন আবার দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ৩ বছর পর্যন্ত যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন। এখন, চুরির মামলা পরিচালনা করার এখতিয়ার উভয় আদালতের থাকলেও মামলাটি দায়ের করতে হবে সর্ব নিম্ন স্তরের আদালতের নিকট, অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। 

এখন ছকের মাধ্যমে খুব সহজেই মনে রাখার মত করে আদালত সমূহের নাম এবং কতটুকু শাস্তি প্রদান করার জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন সেটি নিয়ে আলোচনা করবো। তো চলুন, ছক কষা যাক,

আদালতের নাম এখতিয়ার
সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ বাংলাদেশের আইনে অনুমোদিত যে কোন ধরনের অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশের আইনে অনুমোদিত যে কোন ধরনের অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে।
দায়রা আদালতের দায়রা জজ

উল্লেখ্য, দায়রা আদালতে ৩ শ্রেণির জজ থেকে থাকেন।

(১) দায়রা জজ,

(২) অতিরিক্ত দায়রা জজ,

(৩) যুগ্ম দায়রা জজ

বাংলাদেশের আইনে অনুমোদিত যে কোন ধরনের অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে, তবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে সেটি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর কার্যকর হবে।
দায়রা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা জজ দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজের আদালত ভিন্ন হলেও উভয়ের ক্ষমতা সমান। যার ফলে, অতিরিক্ত দায়রা জজ বাংলাদেশের আইনে অনুমোদিত যে কোন ধরনের অপরাধের বিচার করার জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন, তবে দায়রা জজের ন্যায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে সেটি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর কার্যকর হবে। তবে, অতিরিক্ত দায়রা জজ কোন মামলা আদি এখতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন না। অর্থাৎ, আপনি চাইলে অতিরিক্ত দায়রা জজের আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন না।

তাহলে, অতিরিক্ত দায়রা জজ কোন মামলা গুলো পরিচালনা করে থাকেন?—সাধারণত মামলা দায়ের করা হয়ে থাকে দায়রা জজের আদালতে, দায়রা জজ সেই মামলা থেকে কিছু মামলা অতিরিক্ত দায়রা জজের আদালতে প্রেরন করে থাকেন। একজন দায়রা জজের অধীনে একাধিক অতিরিক্ত দায়রা জজ থাকতে পারেন এবং একেকজন অতিরিক্ত দায়রা জজের আদালতে একেক ধরনের মামলা প্রেরন করা যেতে পারে।   

দায়রা আদালতের যুগ্ম দায়রা জজ যুগ্ম দায়রা জজ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন। অর্থাৎ, যে সকল অপরাধের শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, সেই সকল অপরাধের বিচার যুগ্ম দায়রা জজ করতে পারবে। উল্লেখ্য, ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সাথে অর্থদণ্ড থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।

 

দায়রা আদালতের পরেই হচ্ছে, ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতকে অঞ্চল ভেদে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। মহানগর এলাকায় বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ২ শ্রেণির আর মহানগরের বাহিরে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ৪ শ্রেণির। নিম্নে উভয় অঞ্চলের ম্যাজিস্ট্রেটদের শ্রেণি এবং এখতিয়ার নিয়ে আলোচনা করা হলঃ     

মহানগরের ভেতর মহানগরের বাহিরে এখতিয়ার
চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সাথে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট)

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সকল ক্ষমতা অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চর্চা করতে পারবেন।

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সাথে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট)

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সকল ক্ষমতা অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চর্চা করতে পারবেন।

চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, সাথে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সাথে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যে কোন বর্ণনার ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন। সাথে অর্থদণ্ড থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট যে কোন বর্ণনার ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন সাথে সর্বোচ্চ ১০,০০০/- টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড প্রদান করতে পারবেন।
মহানগর এলাকায় কোন দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট থাকে না। দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট যে কোন বর্ণনার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন সাথে সর্বোচ্চ ৫,০০০/- টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড প্রদান করতে পারবেন।
মহানগর এলাকায় কোন তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট থাকে না। তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট যে কোন বর্ণনার ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন সাথে সর্বোচ্চ ২,০০০/- টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড প্রদান করতে পারবেন।
close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.