বার কাউন্সিল কিভাবে কাজ করে

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল যেভাবে কাজ করে

বিবিধ আইন

গত পর্বে আমরা দেখেছি যে, বার কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা মোট ১৫ জন। এর মধ্যে একজন সিলেক্টেড বা পূর্ব নির্ধারিত বা মনোনীত আর বাকি ১৪ জন্য হচ্ছেন ইলেক্টেড বা নির্বাচিত। নির্বাচিত ১৪ জন সদস্যদের মধ্যে সাধারণ আসন থেকে নির্বাচিত ৭ জন আইনজীবী; এবং ৭ টি গ্রুপে বিভক্ত আঞ্চলিক বার সমিতি হতে নির্বাচিত ৭ জন আইনজীবী। আর, বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল হচ্ছেন সিলেক্টেড বা পূর্ব নির্ধারিত এবং তিনি পদাধিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।
বার কাউন্সিল অর্ডারের ৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বার কাউন্সিলের ১ জন চেয়ারম্যান এবং ১ জন ভাইস-চেয়ারম্যান থাকবে।
এখন বার কাউন্সিল অর্ডারের ৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, চেয়ারম্যান তো পদাধিকার বলে এটর্নি জেনারেল। তাহলে ভাইস-চেয়ারম্যান কে হবেন?
বার কাউন্সিল অর্ডারের ৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্য হতে বার কাউন্সিলের সদস্যগণ কর্তৃক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ, বাকি ১৪ জন নির্বাচিত সদস্য থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হবে।

ভাইস চেয়ারম্যান কবে নির্বাচন করা হবে?
নির্বাচনের পর বার কাউন্সিলের প্রথম মিটিং-এ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান বা সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হবে।

বার কাউন্সিল কি কি কাজ করে?
বার কাউন্সিল অর্ডারের ১০ অনুচ্ছেদে বার কাউন্সিলের কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

  • যেহেতু পূর্বেই বলেছিলাম যে, বার কাউন্সিল হচ্ছে আপাদমস্তক আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা এবং আইনজীবীদের অভিভাবক, তাই নিয়মিত আইনজীবী অন্তর্ভূত তথা নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তি করা হচ্ছে বার কাউন্সিলের কাজ। এই উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়া, সনদ প্রদান এবং আইনজীবী তালিকাভূক্তি থেকে বাদ দেওয়া সবই বার কাউন্সিলের কাজ।
  • আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের বিচার করা এবং প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান করা।
  • আইনজীবীদের পেশাগত আচার আচরণ এবং নৈতিকতা নির্ধারণ করা।
  • ঘুমিয়ে আছে সকল পিতা, সব শিশুরই অন্তরে, তেমনি ভাবে আজকের আইনের ছাত্র আগামীর আইনজীবী, তাই আইন শিক্ষার উন্নয়ন করা।
  • ৩ বছর পর পর বা প্রয়োজন অনুযায়ী বার কাউন্সিলের সদস্যদের নির্বাচনের আয়োজন করা।

বার কাউন্সিলের এই কাজগুলো কিভাবে সম্পাদন করা হয়?
বার কাউন্সিল বিভিন্ন কমিটি গঠন করে তাদেরকে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার মাধ্যমে এর কাজ গুলো সম্পাদন করে থাকে। বার কাউন্সিলের অধীন ৩ টি স্থায়ী কমিটির পাশাপাশি একটি নিবন্ধন কমিটি রয়েছে। ৩ টি স্থায়ী কমিটি সম্বন্ধে বার কাউন্সিল অর্ডারের ১১ অনুচ্ছেদে এবং নিবন্ধন কমিটি সম্বন্ধে ১১খ অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে।
স্থায়ী কমিটি ৩ টি নিম্নরূপ:
১. নির্বাহী কমিটি বা Executive Committee:- এতে মোট সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ৫ জনের সবাই বার কাউন্সিলের সদস্য। নির্বাহী সকল কাজ বা সিদ্ধান্ত এই কমিটি নিয়ে থাকেন।
২. আর্থিক কমিটি বা Finance Committee:- এতেও মোট সদস্য সংখ্যা ৫ জন। এই ৫ জনের সবাইও বার কাউন্সিলের সদস্য। আর্থিক বিষয়টি এই কমিটি দেখে থাকেন।
৩. আইন শিক্ষা কমিটি বা Legal Education Committee:- এতে মোট সদস্য সংখ্যা ৯ জন। এই কমিটিতেই সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ৫ জন হচ্ছে বার কাউন্সিলের সদস্য আর অবশিষ্ট ৪ জনের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ জন বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের আইনের শিক্ষক হবেন। এই কমিটি প্রতিনিয়ত আইন শিক্ষাকে কিভাবে মান সম্মত এবং যুগোপযোগী করা যায় সেই বিষয়ে কাজ করে থাকেন।

এবার আসুন নিবন্ধন কমিটি বা Enrolment Committee’র কাছে। পূর্বেই বলেছিলাম যে, বার কাউন্সিল হচ্ছে আপাদমস্তক আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা এবং আইনজীবীদের অভিভাবক, তাই নিয়মিত আইনজীবী অন্তর্ভূত তথা নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তি করা হচ্ছে বার কাউন্সিলের কাজ। এই উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়া, সনদ প্রদান এবং আইনজীবী তালিকাভূক্তি থেকে বাদ দেওয়া সবই বার কাউন্সিলের কাজ। বার কাউন্সিল অর্ডারের ১১খ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের নিবন্ধন কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে, এই আইনজীবী অন্তর্ভূত তথা নিবন্ধন বা তালিকাভুক্তি করন।

নিবন্ধন কমিটি গঠিত হয় ৫ জন সদস্য নিয়ে। নিবন্ধন কমিটি বেশ versatile বা বহুমুখী এবং সবচেয়ে অভিজ্ঞ বলা চলে। কেননা, নিবন্ধন কমিটির সদস্যদের ৩ জনই হচ্ছেন বিচারপতি এবং ৩ জনই প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত।
প্রথমত, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের ১ জন বিচারক যিনি নিবন্ধন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
দ্বিতীয়ত, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের ২ জন বিচারক।
বাকি ২ জন হচ্ছে, বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল এবং বার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে হতে নির্বাচিত ১ জন। তাহলে বলা চলে, নিবন্ধন কমিটির ৫ জনের মধ্যে ৩ জন হচ্ছেন বিচারপতি এবং ২ জন হচ্ছেন বার কাউন্সিলের সদস্য, একজন এটর্নি জেনারেল এবং আরেকজন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য।
নিবন্ধন কমিটি একইসাথে নিম্ন আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবীদের নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে।
উপরিউক্ত ৪টি কমিটির বাহিরেও আরও কিছু কমিটির বিধান রয়েছে বার কাউন্সিল অর্ডারের ৭৫ক অনুচ্ছেদে,

  • আইন সংস্কার কমিটি বা Law Reform Committee,
  • মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কমিটি বা Human Rights & Legal Aid Committee,
  • গৃহ/হাউস কমিটি বা House Committee,
  • ত্রাণ কমিটি বা Relief Committee,
  • তালিকা এবং প্রকাশনা কমিটি বা Roll and Publication Committee,
  • অভিযোগ এবং সতর্কতা কমিটি বা Complaint and Vigilance Committee.

প্রতিটি কমিটিতেই বার কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত অনধিক ৫ জন করে সদস্য থাকবে। এই কমিটি গুলোর মেয়াদকাল সাধারণত বার কাউন্সিলের মেয়াদ তথা ৩ বছর করে হবে, যদি না কমিটি গঠনের সময় বার কাউন্সিল ভিন্ন কোন বিধান করে। এই হল, বার কাউন্সিলের কার্যাবলীসমূহ এবং কমিটির মাধ্যমে কার্যসম্পাদন করার পূর্ণ প্রক্রিয়া।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.