বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকার

বিবিধ আইন

গত পর্বে আমরা জেনেছি যে, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল ৩ সদস্য নিয়ে গঠিত একটি ট্রাইব্যুনাল যার মধ্যে বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ১৪ জন সদস্যদের মধ্য হতে বার কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত ২ জন সদস্য এবং আইনজীবীদের মধ্য হতে একজন নিয়ে ‘বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল’ গঠিত হবে। বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ৩ জন সদস্য মধ্যে যিনি প্রবীণ, তিনিই বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হবে।

তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এটর্নি জেনারেল বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য হতে পারবেন না। তাই, বার কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত ২ জন সদস্য হবেন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত ১৪ জন সদস্যদের মধ্য হতে।

 

বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা

বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার এবং বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩৫ এ বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করবো, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের সামগ্রিক ক্ষমতা এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকার সম্বন্ধে।

Bangladesh Legal Practitioners And Bar Council Order 1972 এর ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে, নিম্নলিখিত বিষয়ে দেওয়ানী আদালতের যে এখতিয়ার বা ক্ষমতা রয়েছে, বার কাউন্সিল কর্তৃক গঠিত ট্রাইব্যুনালের সেই একই ধরনের ক্ষমতা থাকবে। অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালঃ

  • কোন ব্যক্তির হাজিরা কার্যকর করার জন্য আদেশ দিতে পারে,
  • কোন দলিল দাখিলে বাধ্য করতে পারে এবং
  • সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের জন্য কমিশন ইস্যু করতে পারবে।

তবে, যেকোন ব্যক্তির হাজিরা কার্যকর করার জন্য আদেশ দিতে পারে বলে দেওয়ানী আদালতের মূলকর্তাকে বা বিচারককে হাজির হতে বলার ক্ষমতা কিন্তু বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের থাকবে না। কিন্তু, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্ট বিভাগের পূর্বানুমতি নিয়ে দেওয়ানী আদালতের বিচারককে হাজির হতে বলতে পারবে বা ফৌজদারী আদালত বা রাজস্ব আদালতের কর্মকর্তার বা বিচারকের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমতি নিয়ে হাজির হতে বলতে পারেন।

 

ফৌজদারি প্রেক্ষাপটে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা কেমন?

বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার এবং বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পরিচালিত প্রতিটি অনুসন্ধান দণ্ডবিধির ১৯৩ এবং ২২৮ ধারার অর্থ অনুসারে বিচারিক কার্যধারা হিসাবে গণ্য হবে এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮০ এবং ৪৮২ ধারার উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল একটি দেওয়ানী আদালত হিসাবে গণ্য হবে।

Bangladesh Legal Practitioners And Bar Council Order 1972 এর ৩৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল একজন অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রেখে তাকে বরখাস্ত করতে পারবে; যদিও বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাক্টিশনারস এবং বার কাউন্সিল রুলস, ১৯৭২ এর ৫১ বিধি অনুযায়ী, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল এমন বরখাস্তের আদেশ পরিবর্তন বা রদও করতে পারে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার এবং বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল একজন অভিযুক্ত আইনজীবীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান সমাপ্তি হলে অভিযোগটি খারিজ যেমন করতে পারেন আবার পেশাগত অসদাচরণ বা অন্য কোন অসদাচরণ প্রমাণিত হলে, একজন আইনজীবীকে কঠোর তিরস্কার করতে পারে অথবা একজন আইনজীবীকে আইন পেশা হতে সাময়িক বরখাস্ত বা অপসারণ করতে পারেন। যদি বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল কোন আইনজীবীকে তার আইন পেশা করতে সাময়িক বরখাস্ত করে, তাহলে উক্ত বরখাস্তের মেয়াদ কতদিন সেটি উল্লেখ করবে।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, যদি বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল মনে করেন যে, একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা, সে ক্ষেত্রে Bangladesh Legal Practitioners And Bar Council Order 1972 এর ৩৪(৬) অনুচ্ছেদ অনুসারে, অভিযোগকারীকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা করতে পারেন। এই জরিমানার পরিমাণটি বৃদ্ধি করা উচিত, কেননা মিথ্যা অভিযোগের ফলে আইনজীবীর মানহানি এবং হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাক্টিশনারস এবং বার কাউন্সিল রুলস, ১৯৭২ এর ৪১ক বিধি অনুযায়ী, বার কাউন্সিলে কোন আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করতে হলে ১০০০ টাকা ফি জমা দিতে হয়। কিন্তু, মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হলে মাত্র ৫০০ টাকা জরিমানা। তাহলে কোন ব্যক্তি যদি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে একজন আইনজীবীর মানহানি বা হয়রানি করার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাহলে মাত্র ১৫০০ টাকা হলেই যথেষ্ট। ১০০০ টাকা দিয়ে অভিযোগ দায়ের করবেন আর অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর ৫০০ টাকা জরিমানা দিবেন।

অথচ, আইন পেশায় গুড উইল বা সুখ্যাতি একবার হারিয়ে গেলে সেটি ফিরে পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। কোন দুষ্টু লোক যদি একজন আইনজীবীর সুখ্যাতি বা যশ বা প্রসার দেখে হিংসা করে নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে একজন মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তাহলে তার বিনিয়োগ এবং আর্থিক ঝুঁকি অতি সামান্য কিন্তু ঐ ইনোসেন্ট আইনজীবীর ক্ষতি হবে বিশাল অংকের। ভবিষ্যতে মক্কেল পাওয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি সবই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। তাই, প্রায় ৫০ বছরের পুরনো আইনের আর্থিক বিষয়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে আসলে বর্তমানের সাথে মিল রেখে যুগোপযোগী পরিবর্তন করার পাশাপাশি মিথ্যা অভিযোগের জন্য কারাদণ্ডের বিধান প্রণয়নের অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকার

এখন কথা হচ্ছে, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে বা সিদ্ধান্তে যদি কোন ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়, সেটি আইনজীবীও হতে পারেন আবার অভিযোগকারী বা অভিযোগকারীনিও হতে পারেন, তবে তিনি বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার এবং বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৩৪(৮) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের ঐ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল বা রিভিউ করতে পারবেন।

বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিভিউ

Bangladesh Legal Practitioners And Bar Council Order 1972 এর ৩৪(৮) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনাল নিজ উদ্যোগে বা ট্রাইব্যুনালের নিকট রিভিউ-এর জন্য কোন আবেদন করা হলে, ট্রাইব্যুনাল তার নিজের আদেশ রিভিউ করে নিজের কোন আদেশ বহাল রাখতে পারেন বা পরিবর্তন করতে পারেন বা বাতিল করতে পারেন।

বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল

Bangladesh Legal Practitioners And Bar Council Order 1972 এর ৩৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারবেন।

এই হল, বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের সামগ্রিক ক্ষমতা এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রতিকার সম্বন্ধে।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.