স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা – কি, কেন, কিভাবে?

বিবিধ আইন

সাধারণ অর্থে আমরা নিষেধাজ্ঞা বলতে বুঝি যে, কোনো একটি কাজ করা হতে কাউকে নিষেধ করা। আমরা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রেও দেখেছি যে, মামলার যেকোনো এক পক্ষকে কোন একটি কাজ করা হতে নিষেধ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা পরবর্তী নির্দেশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত যে আদেশ প্রদান করা হয়, তাকেই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বলে। তবে, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা কিন্তু, সবসময়ের জন্য। মামলার বিচারকার্য শেষ হওয়ার পর আদালত যখন বিবাদীর উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন, তখন সেটি চিরস্থায়ী হয়ে যায়, যদি না আপীল বা আইনি কার্যধারার মাধ্যমে গিয়ে সেটি বাতিল হয়। অন্যান্য দেওয়ানি মামলার মত করেই স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের করতে হয়, যেখানে কিনা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ছিল শুধুমাত্র একটি দরখাস্তের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিকার।

 

আপনার জমিতে কেউ এখন দখল নিতে চায়, সে আপনাকে উচ্ছেদ করে নিজের বসতি স্থাপন করতে আপনাকে ভয় দেখাচ্ছে যাতে আপনি আশঙ্কা করছেন যে, যেকোনো মুহূর্তে আপনি আপনার সম্পত্তি থেকে বেদখল হতে পারেন। আপনি বেদখল হলে, আমরা জানি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় ৬ মাসের মধ্যে দখল পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারেন। আবার, একই আইন অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারার অধীন ১২ বছরের মধ্যে স্বত্বসহ দখল পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে পারেন। কিন্তু, আমরা জানি যে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি হতে একে তো লম্বা সময় লাগে, তার উপর দখল হারিয়ে আপনি থাকবেন কোথায়, এতো সময় ধরে মামলা চালানো খরচ সাপেক্ষ। এজন্য আমরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি, সেটি হচ্ছে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual injunction)। ইংরেজিতে আমরা পড়েছি, Prevention is better than cure অর্থাৎ,প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভাল।

 

আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, কেউ একজন বা দল বল মিলে আপনাকে উচ্ছেদ, এরপর আপনি দখলচ্যুত হয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নিলেন, সেখান থেকে আপনি আদালতে মামলা করলেন। আপনার যেমন, মামলার পিছনে অর্থ খরচ করতে হবে, তেমনি আপনি নিজে বসবাসের জন্যও ব্যয় করতে হবে, যদি ঐ জমিটি আপনার একমাত্র বসবাস স্থল হয়ে থাকে। তারপর, ঐ জমির মামলা নিষ্পত্তি হয়ে কি পরিমাণ সময় লাগবে সেটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিবাদী যদি দুষ্টু প্রকৃতির হয়ে থাকে, তাহলে তো সে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি করার জন্য আরও অর্থ খরচ করবে, কেননা সে যেহেতু দখলে আছে কিছু না কিছু তো সে সুবিধা পাচ্ছেই। তাই, আপনি উচ্ছেদের জন্য অপেক্ষা না করে, নিজ দখল বজায় রেখে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের করবেন।

 

এবার আসুন, উচ্ছেদের মামলা নয়, তবে প্রতিপক্ষ চাচ্ছে আপনার জমির উপর দিয়ে কোন রাস্তা বা খাল বা এমন কিছু স্থাপন করতে যা পূর্বে কখনোই ছিল না এবং যেটি কিনা আপনার জন্য অসুবিধাজনক। ঐ অবস্থায় আপনি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Perpetual injunction)’র মামলা করবেন, যাতে আপনার জায়গায় উপর কখনোই ঐ ধরনের কোন স্থাপনা করা সম্ভব না হয়। তবে, সরকার যদি অধিগ্রহণের মাধ্যমে আইন সম্মত উপায়ে আপনাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে আপনার কাছ থেকে জমি নিতে চায়, সেক্ষেত্রে আপনাকে দিতে হবে। তাছাড়া, এখন অধিগ্রহণের জন্য যেই অর্থ দেওয়া হয় তার পরিমাণ বেশ ভালো। জমির মূল্যের প্রায় ৩ গুন পরিশোধ করা যায়, যা কিনা যেকোনো পরিস্থিতিতেই সহনীয়। তাই, সরকার ব্যতীত অন্য কেউ অবৈধ ভাবে আপনার জমির উপর রাস্তা বা অন্য কিছু স্থাপন করতে চাইলে আপনি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের করতে পারবেন।

 

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৪ ধারা অনুসারে, যখন বিবাদী বাদীর সম্পত্তির অধিকার অথবা সম্পত্তির ভোগ করার অধিকারে অন্যায় ভাবে হস্তক্ষেপ করে অথবা হস্তক্ষেপ করার হুমকি প্রদান করে তখন আদালত নিম্ন বর্ণিত পাঁচটি ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করতে পারেন:

১। যেখানে বিবাদী বাদীর জন্য সম্পত্তির জিম্মাদার।
২। যেখানে অধিকার লঙ্ঘনের কারণে সংঘটিত বাস্তব সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণের কোন মানদণ্ড নেই।
৩। যেখানে অধিকার লঙ্ঘন এমন ধরনের যে আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অধিকার পাওয়া যাবে না।
৪। যেখানে এমন সম্ভাবনা থাকে যে অধিকার লঙ্ঘনের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না।
৫। যেখানে বিচার বিভাগীয় কার্যধারায় জটিলতা নিবারণের জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজনীয়।

তবে, সবক্ষেত্রেই যে আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবেন তা কিন্তু নয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৬ ধারা অনুযায়ী ১১ টি ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করবে না। ক্ষেত্রগুলো নিম্নরূপ:

১। বিচার বিভাগীয় কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য।
২। কোন অধীনস্থ আদালতের কার্যধারা স্থগিত রাখার জন্য।
৩। কোন ব্যক্তিকে আইন প্রণয়ন বিষয়ক কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা থেকে বিরত রাখার জন্য।
৪। সরকারের কোন বিভাগের সরকারি কর্তব্যে বা বিদেশি সরকারের কোন কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য
৫। কোন ফৌজদারি বিষয়ে কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য।

৬। কোন চুক্তি সুনির্দিষ্ট ভাবে কার্যকর করা যায় না তেমন চুক্তি ভঙ্গ নিরোধের উদ্দেশ্যে।
৭। উৎপাত নয় এমন কাজ নিরোধ করার জন্য।
৮। বাদীর সম্মতি আছে এমন ক্রমাগত লঙ্ঘন নিরোধের জন্য।
৯। যখন জিম্মা ভঙ্গের প্রতিকার অন্য কোন সাধারণ কার্যধারার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
১০। যখন আবেদনকারীর আবেদন এমন যে তা তাকে আদালতে সাহায্য থেকে বঞ্চিত করে।
১১। যেখানে মামলার বিষয়বস্তুতে আবেদনকারীর কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই।

আজকে এ পর্যন্তই, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.