You are making a mistake by not knowing the basics of property distribution

সম্পত্তি বণ্টনের যে মৌলিক বিষয়টি না জানার কারণে আপনি হিসেবে ভুল করছেন

উত্তরাধিকার আইন

পেশাগত কাজে অনেক সময় অনেককেই অনেকবার বুঝিয়ে বলার পরও দেখা যায় যে, মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের মৌলিক একটি বিষয় বুঝতে পারে না, যার ফলে একটা কমন বা সাধারণ ভুল করে থাকে, যার ফলে সম্পত্তি বণ্টনে গড়মিল করে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ঐ মৌলিক বিষয়টি পানির মত সহজ করে বুঝানোর চেষ্টা করবো। একটু মনোযোগ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে দুই তিনবার পড়ুন।
মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমাদেরকে ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং আত্মস্থ করতে হবে, সেটি হচ্ছে ওয়ারিশরা কখন উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পায় বা ঠিক কখন উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়াটি শুরু হয়?
এই আর্টিকেলটি সাধারণ যারা মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টন সম্বন্ধে জানতে চান তাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি আইনের শিক্ষার্থী যারা ফারায়েজ বুঝতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য ফাউন্ডেশন মজবুত করার সুযোগ। আজকের মৌলিক বিষয়টি ভালো ভাবে বুঝলে কখনোই আর উত্তরাধিকার সূত্র সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ঝামেলা বা গোলযোগ হবে না; এতটুকু আশ্বস্ত করতে পারে ইনশাআল্লাহ্‌।

মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে আমরা জানি যে, সম্পত্তি বণ্টন করা হয় একজন মৃত ব্যক্তির। মৃত ব্যক্তি যেই মুহূর্তে মারা যাচ্ছে তখন থেকে তিনি আর উনার নিজের রেখে যাওয়া সম্পত্তির মালিকানা ধরে রাখতে পারেন না। মৃত ব্যক্তির পক্ষে যেটা স্বভাবতই সম্ভব না। কারণ তিনি ইহকাল থেকে গত হয়ে গেছেন, তাহলে ওই মুহূর্ত থেকে উনার সম্পত্তির মালিক হবে উনার উত্তরাধিকাররা। এতটুকু পর্যন্ত আমরা সবাই অবগত, কিন্তু যেটা নিয়ে আমরা অবগত নই বা বিপত্তি তৈরি করি সেটা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যুকালে উত্তরাধিকার যারা জীবিত আছেন, তারাই কেবল উনার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাবে। ওনার উত্তরাধিকার যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন, তারা কিন্তু কখনোই ওনার সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করবে না।
বুঝার জন্য আপনাকে দিয়েই উদাহরণ দিচ্ছেন, ধরুন আপনি মারা গেছেন। আপনি সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। কেন করা হবে? কারণ আপনি মারা যাওয়ার পর ঐ সম্পত্তির মালিকানা আর আপনি ধরে রাখতে পারবেন না। তাই, আপনার উত্তরাধিকারদের মধ্যে আপনার সম্পত্তি বণ্টন করা হবে। এখন যদি আপনার কোন উত্তরাধিকার আপনার আগেই মারা গিয়ে থাকে, তাহলে সে কিভাবে আপনার সম্পত্তি পাবে? আপনার আগে যে মারা যাবে, সে তো আপনার উত্তরাধিকার হওয়ার সুযোগই পেলো না। আপনি জীবিত থাকাবস্থায় আপনার উত্তরাধিকার তো হওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই নয় কি?

এই মৌলিক বিষয়টি যারা বুঝতে পারেননি, তারা সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে পদে পদে জটিলতা সম্মুখীন হবেন। তাই, আমি অনুরোধ করবো, না বুঝে থাকলে পরের অংশটিতে বাড়তি মনোযোগ দিন। এখনকার উদাহরণে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ্‌।
আপনাকে দিয়ে দেওয়া উদাহরণ না বুঝে থাকলে আসুন আপনার বাবাকে দিয়ে উদাহরণ দেই। ধরুন, আপনার বাবা যদি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের এক তারিখ মৃত্যুবরণ করে থাকে, আপনাকে ২০২০ সালে এপ্রিল মাসের এক তারিখ এবং আরও সুস্পষ্টভাবে বললে আপনার বাবা যেই সময় মারা গেলো ধরুন দুপুর বারোটায় মারা গেছে, ঠিক দুপুর বারোটা বাজে আপনার বাবার যেসব উত্তরাধিকার জীবিত ছিল, শুধুমাত্র তারাই মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পাবে। যদি আপনার বাবার কোন উত্তরাধিকার আপনার বাবার মৃত্যুর এক মিনিট আগেও মারা যায়, সেক্ষেত্রে ওই এক মিনিট পূর্বে মৃত্যুবরণ করার কারণে তিনি আপনার বাবার সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পাবে না। আবার আপনার বাবা মারা যাওয়ার মাত্র এক মিনিট পরে যদি আপনার বাবার কোন উত্তরাধিকার মারা গিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও তিনি কিন্তু আপনার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পাবে।

আশা করি বুঝতে পেরেছেন, তবে এতটুকু বুঝার পরও একটা বিপত্তি বাঁধায় ফারায়েজ করতে বিলম্ব করার কারণে। যেমন, এখন আজকে আপনি ২০২৪ সালে বসে যদি আপনি আপনার বাবার সম্পত্তি বণ্টন করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার বাবার কোন উত্তরাধিকার জীবিত আছে এবং কারা সম্পত্তি পাবে, এসব হিসাব করতে চান, তাহলে উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন সঠিক হবে না। সঠিক উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনায় নিতে হবে, যেই দিন যেই মুহূর্তে আপনার বাবা মারা গিয়েছে সেই দিন ওই মুহূর্তে যারা যারা জীবিত ছিল শুধুমাত্র তারাই উত্তরাধিকার সূত্র সম্পর্কে পাবে। কেননা, একজন ব্যক্তি যখন মারা যায় ঠিক তখনই তার উত্তরাধিকারের সূত্রের সম্পত্তি বণ্টনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে আমরা একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার সম্পত্তি বণ্টন করি না। অনেক সময় এক বছর পর অনেক সময় ১০ বছর বা তারও বেশী সময় পর আমরা বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করি। এখন আমরা যখনই বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করব তখন ওই মৃত ব্যক্তির কোন কোন উত্তরাধিকার জীবিত আছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সম্পত্তি বণ্টন করা যাবে না। বরং বিবেচনা নিতে হবে ওই ব্যক্তি যখন মারা গিয়েছিল, ঠিক তখন কারা কারা জীবিত ছিল অর্থাৎ ২০২০ সালের পহেলা এপ্রিল দুপুর বারোটায় যদি আপনার বাবা মারা গিয়ে থাকে তাহলে ঠিক ওই মুহূর্তে যারা যারা জীবিত ছিল তারাই সম্পত্তি পাবে। আপনার বাবা মারা যাওয়ার সময় কোন ওয়ারিশ জীবিত ছিল, কিন্তু এখন আপনি সম্পত্তি বণ্টনের সময় তিনি নেই অর্থাৎ মৃত, এই অজুহাতে আপনি তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন না।

উপরের স্তবকটা বুঝলে চলুন আরেকটা উদাহরণ দেই। মনে করুন, একটি গাড়িতে করে আপনার বাবা, আপনার মা এবং আপনার এক ভাই কোথাও যাচ্ছিলেন। এমন সময় সড়ক দুর্ঘটনা হলো, উক্ত দুর্ঘটনায় ঘটনা স্থলেই আপনার মা মারা গেল। হাসপাতালে নেওয়ার পর আপনার বাবা মারা গেল। তার একদিন পর আপনার ভাই মারা গেছে। এখন আপনার বাবার সম্পত্তি বণ্টন করা হবে, সেক্ষেত্রে আপনার বাবার সম্পত্তি থেকে আপনার মা কোন অংশ পাবে না। কেননা আপনার বাবা যখন মারা যায় তখন আপনার মা জীবিত ছিল না, আপনার মা আপনার বাবার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন। কারো কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার শর্ত হচ্ছে, ঐ ব্যক্তি যখন মারা যাবে, তখন আপনাকে জীবিত থাকতে হবে। আপনার বাবা যখন মারা যায়, তখন আপনার মা জীবিত ছিল না, তাই তিনি আপনার বাবার কাছ থেকে সম্পত্তি পাবে না। অন্যদিকে, আপনার ভাই আপনার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবে। কেননা আপনার বাবা যখন মারা যায় তখন আপনার ভাই মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকলেও জীবিত ছিল। তাই আপনার ভাই আপনার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পাবে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন, তারপরও কোন কনফিউশন থাকলে জানাতে পারেন, আমরা ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো আরও সহজ ভাষায় উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোধগম্য করে তুলতে। ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.