আদালতে উপস্থিত হওয়া না হওয়ার উপকারিতা অপকারিতা

বিবিধ আইন

উট পাখিকে যখন কেউ তাড়া করে তখন উটপাখি দৌড়ে গিয়ে বালুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। উট পাখির খুশীতে আত্নহারা হয়ে ভাবতে থাকে যে, আমি যেহেতু বালুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেওয়ার কারণে আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, সেহেতু কেউ আমাকেও দেখতে পাচ্ছে না। অথচ, বাস্তবতা আমরা জানি যে বালুর মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দেওয়ার কারণে উটপাখি নিজে বরং কাউকে দেখতে পারছে না, বাকীরা কিন্তু সবাই উটপাখিকে দেখতে পাচ্ছে। 

একইভাবে আমাদের সমাজে অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজে লুকিয়ে থেকে মনে করে যে, আমি যেহেতু কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, আমাকেও কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আমাদের একটি আর্টিকেলে ইতিমধ্যে আমরা দেখিয়েছিলাম যে, আদালত বা অন্য যেকোনো জায়গা থেকে কোন নোটিশ আসলে সেই নোটিশটি গ্রহণ করা বা না করা প্রতিক্রিয়া একই থাকবে। বরং কোন নোটিশ আসলে সেটি গ্রহণ না করার কারণে আপনি জানতে পারছেন না কিসের নোটিশ এসেছে এবং তার বিপরীতে আপনার কি ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। যেহেতু নোটিশটি গ্রহণ করুন আর না করুন একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে, সেহেতু নোটিশটি গ্রহণ করে সে অনুসারে নিজের প্রস্তুতি বা নিজের দায়িত্বটুকু পালন করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। আজকের আর্টিকেলে আমরা দেখানোর চেষ্টা করবো, আদালতে কোন মোকদ্দমা আপনি নিজে দায়ের করলে বা আপনার বিরুদ্ধে দায়ের করা হলে, সেক্ষেত্রে আদালতে উপস্থিত এবং অনুপস্থিত থাকার সুবিধা-অসুবিধা গুলো। 

 

যেহেতু আদালতের প্রতি আমাদের একটি ভীতি সবসময় কাজ করে, তাই আমরা আদালতে উপস্থিত হতে চাই না। আদালতের প্রতি ভীতি রোগটি দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষের মধ্যেই কমবেশি রয়েছে। তাই আমরা এই বিষয়টি নিয়ে হয়তো কয়েকটি আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করব, যার মাধ্যমে আমরা প্রকৃতপক্ষে বোঝানোর চেষ্টা করব যে, আদালতে উপস্থিত থাকলে কি সুবিধা আর অনুপস্থিত থাকলে কি অসুবিধা? আবার কখন কখন উপস্থিত থাকলেও অসুবিধা হতে পারে সেটিও জানানোর চেষ্টা করবো।

আমরা আজকের আর্টিকেলে সম্পূর্ণরূপে দেওয়ানি মামলা অর্থাৎ যাকে আইনের ভাষায় মোকদ্দমা বলে সেই বিষয়ে আলোচনা করব। প্রথমেই বলি আপনি যদি কারো বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা করেন, আপনার দায়িত্ব হচ্ছে বিবাদী একজন হোক বা একাধিক, সবাইকে ঐ মোকদ্দমার সম্বন্ধে অবগত করা। এই অবগত কিন্তু আপনি তাকে মুখে বা মোবাইল ফোনে করে বা কোন লোক মারফতে জানালে চলবে না, বরং আপনাকে জানাতে হবে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে; যাকে আইনের ভাষায় সমন বলে। 

 

বাদী হয়ে মোকদ্দমা করার পর আপনি যদি যথাযথ উপায়ে বা সঠিকভাবে বিবাদীর বরাবর সমন না পাঠান, সেক্ষেত্রে বিবাদী যদি আদালতে উপস্থিত হয় না হয়, সেক্ষেত্রে আপনি কিন্তু একটি বিশাল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। কতটা বিশাল, সেটা শুনুনঃ একজন বাদী যদি আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করার পর সঠিকভাবে বিবাদীর বরাবর সমান পাঠায় এবং তারপরও বিবাদী আদালতে উপস্থিত না হয়, সেক্ষেত্রে আদালত বাদির পক্ষে একতরফা ডিক্রি প্রদান করবেন। একতরফা ডিক্রি প্রদান করার মাধ্যমে আপনি খুবই অল্প সময়ে, বলতে গেলে প্রথম তারিখেই আদালতের কাছে আপনি যে প্রতিকার চেয়েছিলেন বা আপনার যে দাবি আদায়ের জন্য মোকদ্দমা করেছিলেন, সেই দাবিটি আদায় করতে পারবেন। কিন্তু, সামান্য কিছু টাকা এবং আইন না জানার কারণে আপনি যদি সমন পাঠাতে গড়িমসি করেন, সেক্ষেত্রে আপনি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

 

একই ভাবে এতটুকু পড়ার পর আপনি অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে, আপনি যদি বিবাদী হয়ে থাকেন, অর্থাৎ আপনার বিরুদ্ধে যদি কেউ মোকদ্দমা দায়ের করে থাকে এবং আপনার বরাবর সমন জারি করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার কি করা উচিত? অবশ্যই অবশ্যই আপনার আদালতে হাজির হয়ে আপনার বিরুদ্ধে যে দাবি বা প্রতিকার চেয়েছে সেই বিষয়ে আপনার যে বক্তব্য, সেটি উপস্থাপন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত মোকদ্দমায় আপনি জিতেন বা হারেন সেটা দেখা যাবে, কিন্তু প্রথম তারিখেই আপনার অনুপস্থিতির কারণে যাতে বাদী একতরফা ডিক্রি না পায় সে সুযোগটি আপনি কখনোই বাদিকে দিবেন না। এটা অনেকটাই খেলা শুরুর আগেই হেরে যাওয়ার মত। তাহলে খেলার শুরুতেই আপনি হার মানবেন না, শেষ বল পর্যন্ত বা শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত আপনাকে লড়াই করে যেতে হবে।

আমরা দেখতে পেলাম যে, সমন সঠিকভাবে জারি হওয়ার পর প্রথম তারিখে বিবাদী যদি উপস্থিত না থাকে সেক্ষেত্রে মোকদ্দমাটি একতরফাভাবে নিষ্পত্তি হবে। এখন মজার বিষয় হচ্ছে, যদি প্রথম তারিখে বাদি নিজে উপস্থিত না হয়, সেক্ষেত্রে কি হবে? 

সমান জারি হওয়ার পরে নির্দিষ্ট তারিখে বিবাদী উপস্থিত থাকে কিন্তু বাদী যদি অনুপস্থিত থাকে, সেক্ষেত্রে মোকদ্দমা খারিজ হয়ে যাবে। তাহলে একজন বাদী হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে, মোকদ্দমা করার পর অবশ্যই আদালতে উপস্থিত থাকা।

আমরা দেখলাম বাদী অনুপ্সথিত থাকলে কি হয় আর বিবাদী অনুপস্থিত থাকলে কি হয়। এখন ধরুন, বাদী এবং বিবাদী উভয়জনই আদালতে অনুপস্থিত, সেক্ষেত্রে কি হবে? উত্তরঃ সেক্ষেত্রেও মোকদ্দমা খারিজ হয়ে যাবে। 

এই ক্ষেত্রে একটা মজার বিষয় হচ্ছে, মোকদ্দমা করার পর যদি বাদী বিবাদীর মধ্যে আপোষ মীমাংসা হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছেন আদালতে উপস্থিত না হওয়ার কারণে মামলা আপনাআপনি খারিজ হয়ে যাবে। তবে কোন এক পক্ষ আপোষ করার পরে গোপনে আদালতে গিয়ে ঝামেলা করার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে বাদী; সেক্ষেত্রে বিবাদীর দায়িত্ব হবে আদালতে আপনাদের আপোষের বিষয়টি অবগত করে মোকদ্দমাটিকে নিষ্পত্তি করা।

আজকের পর্বে এতটুকুই; আমরা পরবর্তী একটি পর্বে দেখানোর চেষ্টা করব একতরফা ডিক্রি হলে সেটার বিরুদ্ধে কিভাবে বিবাদী প্রতিকার পেতে পারে এবং বাদীর মোকদ্দমা খারিজ হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে বাদির কি প্রতিকার রয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ্‌। ধন্যবাদ, আসসালামুয়ালাইকুম। 

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.