অগ্রক্রয়ের মামলাঃ কি, কেন, কিভাবে?

জমি-জমার আইন

কি
প্রিয়েমশন বা অগ্রক্রয় বলতে বোঝায়, কোন একটা জিনিস আগে ক্রয় করার অধিকার। আমরা যেমন নিলামে দেখে থাকি যে, সর্বোচ্চ বিট বা দর করে কোন ব্যক্তি একটি জমি বা বস্তু তার কেনার অধিকার অর্জন করে থাকে; কিন্তু অগ্রক্রয় হচ্ছে টাকার মূল্যে নয় বরং উত্তরাধিকার সূত্রে শরীক বা পাশাপাশি জমি থাকার দরুন আগে ক্রয় করার যে অধিকার, সেটাই হচ্ছে অগ্রক্রয়। অগ্রক্রয়ের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয় সাধারণত জমি ক্রয় বিক্রয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে।

 

কেন
আপনি নিশ্চয়ই চান না যে, সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার প্রতিবেশী চাচার বাড়িতে বা জমিতে অন্য কোনো আগন্তুক এসে বসবাস শুরু করুক, যে চাচা আপনাদের সাথে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন যে সম্পত্তিটুকু একসময় আপনার দাদার ছিল হয়ত, যেখানে আপনাদের অবাধ যাওয়া-আসা ছিল, রয়েছে পূর্ব পুরুষদের অনেক ইতিহাস, স্মৃতি; সেখানেই হুট করে কোথাকার কোন আগন্তুক এসে বসবাস করছে, আগন্তুক ভাল হোক আর খারাপ হোক কিন্তু আপনার কাছে ফ্যামিলিয়ার মনে হচ্ছে না, অচেনা অজানা কেউ এসে আপনার প্রতিবেশী হোক, সেটা আপনি চাচ্ছেন না। আচ্ছা চাচার উদাহরণটা হয়ত আপনাকে ঐভাবে আকৃষ্ট নাও করতে পারে, ধরুন আপনার ভাই বা বোন, আপনার প্রতিবেশী ছিল। এই জায়গা আপনার বাবার ছিল একসময়, ভাগ হয়ে যাওয়ায় এখন একটা অংশে আপনি থাকেন একটা অংশ আপনার ভাই থাকেন। আপনার ভাই আপনাকে না জানিয়ে ঐ সম্পত্তি যদি বাইরের কারো কাছে বিক্রি করে ফেলেন এবং বাহিরের কোন আগন্তুক এসে এখানে বসবাস করতে চায় বা ফসল আবাদ করতে চায় সেটা কি আপনি আদৌ সহ্য করতে পারবেন?

যে জায়গাগুলোতে আপনার মা-বাবার অনেক স্মৃতি রয়েছে, যেখানে একটা সময় অবাধ বিচরণ ছিল আপনাদের, সেখানে এখন অন্য কোনো একজন এসে মালিকানা অর্জন করেছে, যেখানে কিনা আপনার অলরেডি সামর্থ্য ছিল ওই জমি ক্রয় করার এবং আপনি নিজেই কমিটেড, সেই ক্ষেত্রে আপনার ভাই আপনার কাছে বিক্রি না করে বাহিরের একজনের কাছে বিক্রি করে আপনার পরোক্ষ শান্তি নষ্ট করল, এই ধরনের আগন্তুকদের ঠেকানোর জন্যই হচ্ছে প্রিয়েমশনের মামলা। প্রিয়েমশন আগুন্তুক ঠেকানোর জন্য একটি অধিকার বা বলা যায় সেইফ গার্ড, যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

 

কিভাবে
আপনার প্রতিবেশী কেউ তার জমিটি যখন বিক্রি করবে তখন সেটি স্বাভাবিক চারদিকে জানাজানি হবে। আপনার দায়িত্ব হচ্ছে আপনার যদি সামর্থ্য থাকে এবং ওই জমি কেনার ইচ্ছা থাকে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটা বিক্রেতাকে জানানো। বিক্রেতা আপনার সাথে যে মূল্যে দর কষাকষি করবে সে মূল্যে যদি আপনি সন্তুষ্ট থাকেন এবং বিক্রেতাও সন্তুষ্ট থাকে, সে ক্ষেত্রে আপনি সেটা ক্রয় করে ফেললে আপনার প্রতিবেশী হিসেবে বাহিরের কোন আগন্তুক আসার সুযোগ পাবে না। কিন্তু আপনি যদি ওই জমি কিনতে সামর্থ্যবান হোন তবে জমি কেনার ইচ্ছে না থাকবে অথবা আপনার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনার কাছে টাকা না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে বিক্রেতার কোনো দোষ দেওয়া যাবে না। কেননা, সকলেই তাঁর প্রিয় জমিটি বিক্রি করে নগদ অর্থের প্রয়োজনে; এখন আপনি যদি ক্রয় করতে ইচ্ছুক থাকেন কিন্তু সেই অর্থ দিতে না পারেন সেক্ষেত্রে আপনার কাছে বিক্রি করবে না। তবে এক্ষেত্রে বিক্রেতার অন্তত দায়িত্ব হচ্ছে আশেপাশে প্রতিবেশী সবাইকে জানানো কিন্তু কোন বিক্রেতা যদি তার আশেপাশের কাউকে না জানিয়ে একেবারে বাহিরের কারো কাছে বিক্রি করে ফেল সেই ক্ষেত্রে যেদিন আপনি জানবেন জমিটি বিক্রি হয়েছে সেদিন থেকে কৃষি জমি হলে দুই মাস, অকৃষি জমি হলে চার মাসের মধ্যে আপনি মামলা দায়ের করতে পারবেন। তাছাড়া মুসলিম আইন অনুসারে আপনি এক বছরের মধ্যে অগ্রক্রয় মামলা দায়ের করতে পারবেন। এখানে কথা হচ্ছে, অনেক সময় দেখা যায় যে কিছু বিক্রেতা চালাকি করে তার ভাই বোন বা প্রতিবেশীকে তার জমি ক্রয় করা থেকে বঞ্চিত করার জন্য দলিলের জমির মূল্য অধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। কেননা অগ্রক্রয় মামলা করার সময় আপনাকে দলিলে উল্লেখিত মূল্য পরিশোধ করা লাগে, যার ফলে কেউ যদি চালাকি করে দলিলে অধিক মূল্য দেখিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় মামলা করার জন্য যারা প্রার্থী থাকে, তারা উত্তম মূল্য পরিশোধ করতে না পারলে আর মামলা করার সাহস করে না।(এই চালাকি ঠেকাতে কি করতে হবে, তা নিয়ে ভবিষ্যতে লিখবো) তাই যখন কেউ আপনার কাছে জমি বিক্রি করতে চায় সে অবশ্যই আপনাকে জানিয়ে বিক্রি করবে আর যারা আগে থেকেই নিয়ত করে রাখছে, আপনার কাছে বিক্রি করবে না সে ঐ ধরনের বিভিন্ন চালাকি করে থাকেন। তারপরও কোন কোন জমি থাকে যেগুলো বেশি দিয়ে হলেও ক্রয় করে নিতে হয় যাতে জমি হাতছাড়া না হয়; সে ক্ষেত্রে আপনি এই নীতি অনুসরণ করে অর্থাৎ অগ্রক্রয়ের মামলা করে জমি রক্ষা করে রাখতে পারেন।

কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে যেখানে কোনো জমি হস্তান্তরিত হলে আপনি অগ্রক্রয় মামলা করতে পারবেন না। যেমন,

  • স্বামী-স্ত্রী তাদের নিজেদের মধ্যে যদি কোন সম্পত্তি হেবা বা দান করে থাকে
  • রক্ত সম্পর্কিত যারা রয়েছেন তারা যদি তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি হেবা করে থাকেন বা দান করে থাকেন
  • যৌথ সম্পত্তির মধ্যে মালিকরা একে অন্যের মধ্যে হস্তান্তর করলে সেক্ষেত্রে আপনি ওই হস্তান্তরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না
  • ধর্মীয় কোন কাজে ওয়াকফ করে দেয় সেক্ষেত্রেও উক্ত হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আপনি অগ্রক্রয় মামলা করতে পারবে না
  • তাছাড়া আপনি অগ্রক্রয় মামলা করবেন এটা জানতে পেরে ক্রেতা যদি জমি আবার বিক্রেতার কাছে ফিরিয়ে দেয় সে ক্ষেত্রে যার জমি তার কাছে চলে গেল তখন আর আপনি অগ্রক্রয় মামলা করতে পারবেন না।
close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.