আসাবা লিস্ট

Residuaries বা আসাবা তালিকা

উত্তরাধিকার আইন

পূর্বে আমরা দেখেছি যে, শেয়ারার লিস্টে ১২ জনের নাম দেওয়া রয়েছে, সেখানে আসাবা লিস্টে কতজন রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয় না। আসাবা লিস্টে বরং ৪ টি ক্যাটাগরিতে মোটামুটি ১৯ জনের একটা লিস্ট দেওয়া রয়েছে। এখানে ১৯ জন বলতে আসলে ১৯ টি সম্পর্ক, প্রত্যেক সম্পর্কে একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারে। আমরা প্রথমেই জেনে নিবো, আসবা লিস্টকে যে ৪ টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে, সেই ক্যাটাগরি গুলো:

  • মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরি/বংশধর
  • মৃত ব্যক্তির পূর্বসূরি
  • মৃত ব্যক্তির বাবার বংশধর
  • মৃত ব্যক্তির দাদার বংশধর

 

মৃত ব্যক্তির বংশধর: মৃত ব্যক্তির বংশধর বলতে এখানে মৃত ব্যক্তির ছেলে, মৃত ব্যক্তির ছেলে ছেলে এভাবে যত নিচে যাওয়া যায়, ততদূর পর্যন্ত বুঝাবে। এখানে মৃত ব্যক্তির ছেলের সাথে যদি মেয়ে থেকে থাকে তাহলে মেয়েকেও আসাবা অনুসারে সম্পত্তি দেওয়া হবে।

মৃত ব্যক্তির পূর্বসূরি: মৃত ব্যক্তির পূর্বসূরি বলতে বুঝাবে মৃত ব্যক্তির পূর্বপুরুষদেরকে। উত্তরসূরি পূর্বসূরি বুঝানোর জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ‘মেসি হচ্ছে ম্যারাডোনার উত্তরসূরি, আর ম্যারাডোনা হচ্ছে মেসির পূর্বসূরি’ বা ‘পেলে হচ্ছে নেইমারের পূর্বসূরি আর নেইমার পেলের উত্তরসূরি’। যাই হোক সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে, মৃত ব্যক্তির পূর্বসূরি অর্থাৎ পূর্বপুরুষরা।

মৃত ব্যক্তির বাবার বংশধর: মৃত ব্যক্তির বাবার বংশধর বলতে এখানে বুঝাচ্ছে, মৃত ব্যক্তির বাবার উত্তরসূরিদের। মৃত ব্যক্তি নিজেও তার বাবার বংশধর অবশ্যই, কিন্তু এক্ষেত্রে আসাবা লিস্টে মৃত ব্যক্তির বাবার বংশধর বলতে বুঝাবে, মৃত ব্যক্তির আপন ভাই বোন এবং বৈমাত্রেয় ভাই বোন এবং তাদের ছেলেরা।

মৃত ব্যক্তির দাদার বংশধর: মৃত ব্যক্তির দাদার বংশধর বলতে বুঝাবে আপন চাচা, বৈমাত্রিয় চাচা এবং তাদের ছেলেদেরকে।

এখানে বাবার বংশধর, দাদার বংশধর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। মূলত বাবার বংশধর বলতে বুঝায়, আপনার বাবার বংশধর কিন্তু আপনি বা আপনার উত্তরসূরিরা নয় (তারা প্রথম ক্যাটাগরিতে চলে গেছে)। বরং, আপনার ভাই বোন বা আপনার বাবার যদি অন্য কোন সংসার থেকে থাকে ওখানকার ছেলে মেয়ে তথা আপনার বৈমাত্রেয় ভাই বোন; তারাও কিন্তু আপনার বাবার বংশধর। এখন আপনার সম্পত্তি বণ্টন করার ক্ষেত্রে যদি আপনার অবশিষ্ট অংশ আপনার নিজের বংশধরদের মধ্যে অর্থাৎ আপনার ছেলে মেয়ে বা ছেলে ছেলেদের মধ্যে বণ্টন করা না যায় মানে হচ্ছে, তারা জীবিত না থাকে এবং উপরের দিকে আপনার বাবা, দাদা জীবিত না থাকে, তখন আপনার ওই অবশিষ্ট সম্পত্তি আপনার বাবার বংশধরদের কাছে চলে যাবে। অর্থাৎ আপনার আপন ভাই বোন বা আপনার বৈমাত্রেয় ভাই বোনদের কাছে। আমরা যে দেখে থাকি মৃত ভাই-বোনদের কাছে সম্পত্তি চলে যায় এটা কিন্তু এই ক্যাটাগরিতে। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির বাবার বংশধর ক্যাটাগরিতেই সম্পত্তি ভাই-বোনদের কাছে চলে যায়। শুধুমাত্র আপন ভাই বোনদের কাছে না, বৈমাত্রেয় ভাই বোনদের কাছে পর্যন্ত চলে যায়, এখানে বৈমাত্রেয় বলতে বোঝায়, বাবা এক মা ভিন্ন।



আর মৃত ব্যক্তির দাদার বংশধর বলতে বুঝায়, আপনার বাবা ব্যতীত আপনার দাদার যত উত্তরসূরি হয়েছে ((আপনার বাবার উত্তরসূরি তৃতীয় ক্যাটাগরিতে চলে গেছে)); অর্থাৎ আপনার চাচারা। আপনার দাদার যদি একাধিক সংসার থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার আপন চাচা, বৈমাত্রীয় চাচা, তাদের ছেলেরাও আসাবা হিসেবে সম্পত্তি পাবে। আমরা যে দেখে থাকি, চাচা সম্পত্তি পেয়ে থাকে, চাচাতো ভাই সম্পত্তি পায়, এটা হচ্ছে মৃত ব্যক্তির দাদার বংশধর এই ক্যাটাগরিতে। আপনার যদি পুত্র সন্তান না থাকে, আপনার ভাই, বোন, বাবা, যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার মৃত্যুর পরে আপনার সম্পত্তির একটা অংশ আপনার নিজের সন্তানের অভাবে, নিজের বাবা দাদার অভাবে এবং আপন ভাই বোন কিংবা বৈমাত্রেয় ভাই বোন না থাকার কারণে আপনার চাচা কিংবা চাচাতো ভাই যারা রয়েছে তাদের কাছে চলে যাবে।

 

থিউরিটিক্যালি বুঝানোর পরেও আমরা নিচে আসাবার মোটামুটি ১৯ জনের একটি লিস্ট দিয়ে দিলাম। লিস্টের যদিও ১৯ জনের কথা বলা হয়েছে, সেটা অবস্থা বুঝে আরও নীচেও নামতে পারে, তখন সংখ্যাও বাড়বে। তারপরও এই ১৯ জনই হচ্ছে বেসিক। তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, এর ১৯ জনের মধ্যে প্রথমে যাকে পাওয়া যাবে অর্থাৎ জীবিত থাকবে, সেই অবশিষ্ট পুরো সম্পত্তি আসাবা হিসেবে পাবে, বাকীরা বঞ্চিত হবেন। নিম্নে দেওয়া হল, আসাবার লিস্ট বা তালিকা:

 

মৃত ব্যক্তির নিজের বংশধর
১। ছেলে। আসাবা তালিকায় সর্বপ্রথমে রয়েছে ছেলে। যদি কোন ব্যক্তির ছেলে থেকে থাকে তাহলে এই লিস্টে নীচের দিকে আর যাওয়ার দরকার নেই। শেয়ারারে যারা রয়েছে তাদেরকে সম্পত্তি দেওয়ার পরে যা থাকবে তার পুরোটাই ছেলের কাছে চলে যাবে। তবে ছেলের সাথে যদি মেয়ে থেকে থাকে তাহলে মেয়েও আসাবা হিসেবে সম্পত্তি পাবে। সেক্ষেত্রে ছেলেঃমেয়ে=২:১ অনুপাতে সম্পত্তি বণ্টন করা হবে।
২। ছেলের ছেলে (এভাবে যত নীচে যাওয়ার যায়)

মৃত ব্যক্তির পূর্বসূরি
৩। বাবা/ পিতা
৪। দাদা

মৃত ব্যক্তির বাবার বংশধর
৫। আপন ভাই- আপন ভাইয়ের সাথে যদি আপন বোনও থাকে তাহলে ভাইঃবোন= ২:১ অনুসারে সম্পত্তি বণ্টন করা হবে।
৬। আপন বোন- আপন ভাই না থাকলে এবং উপরের কেউই না থাকলে আপন বোন ।
৭। বৈমাত্রেয় ভাই
৮। বৈমাত্রেয় বোন
৯। আপন ভাইয়ের ছেলে
১০। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলে
১১। আপন ভাইয়ের ছেলের ছেলে
১২। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের ছেলের ছেলে

মৃত ব্যক্তির দাদার বংশধর
১৩। আপন চাচা
১৪। বৈমাত্রেয় চাচা
১৫। আপন চাচার ছেলে
১৬। বৈমাত্রেয় চাচার ছেলে
১৭। আপন চাচার ছেলের ছেলে
১৮। বৈমাত্রেয় চাচার ছেলের ছেলে
১৯। দাদার দূরের কোন পুরুষ বংশধর

উপরোক্ত তালিকার শুরু থেকেই যে ক্যাটাগরির ওয়ারিশদের সর্বপ্রথম জীবিত পাওয়া যাবে, আসাবার সম্পত্তি কিন্তু সরাসরি তার বা তাদের কাছে চলে যাবে। এই ক্ষেত্রে এই জীবিতের হিসেবটা করা হবে ঠিক যেই মুহূর্তে যার সম্পত্তি বণ্টন করার কথা হচ্ছে, তিনি মারা গিয়েছিলেন।

আশা করি বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.