যৌথ ব্যবসা আইন

পার্টনারশিপ বা অংশীদারি ব্যবসার আদ্যোপান্ত : পর্ব ২

দেওয়ানি আইন ব্যবসায়িক আইন

গত পর্বে আমরা অংশীদারি কারবার বা পার্টনারশিপ ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো অংশীদারি কারবারে অংশীদার বা পার্টনারদের যোগ্যতা সম্বন্ধে।
সর্বনিম্ন ২ জন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন পর্যন্ত যেহেতু অংশীদারি কারবার বা পার্টনারশিপ ব্যবসা সংগঠিত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সকল অংশীদারদেরকে কিছু এক বিষয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ব্যবসায়িক জ্ঞান নিয়ে নয় বরং মূলত একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে যেসব যোগ্যতা থাকা বাঞ্ছনীয়, সেগুলোসহ আরও কিছু যোগ্যতা নিয়েই এই পর্বে আলোচনা করা হবে যেগুলো ছাড়া একজন ব্যক্তি অংশীদারি কারবারে অংশীদার হতে পারবেন না।
চুক্তি আইন ১৮৭২ এর ১১ ধারা অনুসারে, একজন ব্যক্তি চুক্তি সম্পাদন করতে হলে, তাকে অবশ্যই সাবালক হতে হবে, অপ্রকৃতিস্থ হতে পারবেন না, আইনবলে অযোগ্য হিসেবে ঘোষিত হতে পারবেন না। অংশীদারি কারবারের মূল ভিত্তি হচ্ছে, চুক্তি। চুক্তির মাধ্যমেই দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একটি অংশীদারি কারবার শুরু করে। সেই দিক থেকে চিন্তা করলে, অংশীদারি কারবার করতে যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হলে প্রথমেই চুক্তি করার জন্য যোগ্য হতে হবে। চুক্তি আইনের এই ৩ টি যোগ্যতা ছাড়াও কিছু অযোগ্যতাও রয়েছে। প্রতিষ্ঠান, বিদেশী শত্রু, রাষ্ট্রদূত এই ৩ টিও অংশীদারি কারবারে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত। আসুন এই যোগ্যতা – অযোগ্যতা সম্বন্ধে আমরা একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।

  •  সাবালক: একটি চুক্তি করার জন্য চুক্তির প্রত্যেক পক্ষকে বয়সের দিক থেকে অবশ্যই চুক্তির বিষয়বস্তু বুঝার মত যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। চুক্তির পক্ষ যদি চুক্তির বিষয়বস্তু না বুঝে, তাহলে চুক্তিতে তার সম্বন্ধে কি লিখা হচ্ছে বা তার সুবিধা অসুবিধা সম্বন্ধে চুক্তিতে কি আছে, সেটি যদি সে না বুঝে, তাহলে সেই চুক্তি দিন শেষে চুক্তির পক্ষকে বা পক্ষ দ্বারা বিপরীত পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেহেতু, অংশীদারি কারবার একটি চুক্তির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, সেহেতু চুক্তির জন্য যোগ্যতা অযোগ্যতা গুলো অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সুতরাং, সাবালক না হলে অংশীদারি কারবারে অংশীদারি হওয়া সম্ভব নয়।
    নাবালক ব্যক্তি অংশীদারি কারবারে অংশীদার হতে না পারলেও সকল অংশীদারদের সম্মতিতে একজন নাবালককে কেবলমাত্র অংশীদারি কারবারের সুবিধাদি প্রদান করা যাবে। তবে, এই সুবিধাদি গ্রহণ করার জন্য ব্যবসার কোন কার্যক্রম ও দায়ের জন্য উক্ত নাবালককে কোন ভাবেই দায় করা যাবে না। এমনকি চুক্তিতে যদি এমন উল্লেখ থাকে যে, কোন অংশীদারের মৃত্যুতে তার উত্তরাধিকার হিসেবে নাবালক সন্তানকে লাভের অংশ দেওয়া যাবে তবে কোন মতেই ব্যবসার অংশীদার করা যাবে না। উত্তরাধিকারকে দায় না করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, পার্টনারশিপ আইনের ৩৫ ধারার উল্লেখ্য যে, কোন অংশীদারের মৃত্যুর পর কারবারের যাবতীয় কার্যক্রম ও ধার দেনার জন্য মৃত্যু ব্যক্তির সম্পত্তি দায়বদ্ধ হবে না। আবার, ৩৭ ধারায় বলা আছে যে, মৃত অংশীদারের প্রাপ্য পরিশোধ করা না হলে, যতদিন পর্যন্ত কারবারে ঐ প্রাপ্য সম্পদ ব্যবহৃত হবে ততদিন তার উত্তরাধিকারদেরকে ৬% হারে মুনাফা দিতে হবে।
  • অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি: কোন ব্যক্তি যদি পাগল হয়ে থাকে বা তার মস্তিষ্ক যদি বিকৃত অথবা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয় তাহলে সেই ব্যক্তি চুক্তি সম্পন্ন করতে পারবে না। কেননা, চুক্তির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে বুঝতে হলে সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হয়। অসুস্থ মস্তিষ্ক, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কর্তৃক একটি চুক্তির বিষয়বস্তু বুঝে উঠা সম্ভব না, না সম্ভব কোন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে নিজের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। অতএব, এই প্রকৃতির ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দ্বারা অংশীদারি কারবার করা সম্ভব নয়।
  • আইনবলে অযোগ্য: আইনবলে যদি কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, তবে সেই ব্যক্তিও অংশীদারি কারবারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যেমন, একজন দেউলিয়া ব্যক্তি যাকে আইন সম্মত উপায়ে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে এবং তিনি সেই ঘোষণা থেকে এখনো অব্যাহতি পায়নি, সেই ব্যক্তি কোন অংশীদারি কারবারে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
  • প্রতিষ্ঠান: আর্টিফিশিয়াল পার্সন বা কৃত্রিম ব্যক্তি তথা কোন কোম্পানি, সমবায় সমিতি, সংগঠন অংশীদারি কারবার বা পার্টনারশিপ ব্যবসা করতে পারবে না। পার্টনারশিপ ব্যবসা করার জন্য ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক ব্যক্তি হতে হবে। অংশীদারি কারবারের জন্য কৃত্রিম ব্যক্তিকে অযোগ্য হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তবে, এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলো যেকোনো অংশীদারি কারবারের সাথে চুক্তি করতে পারবে। অর্থাৎ, কোন প্রতিষ্ঠান একটি অংশীদারি কারবারের অংশীদার হিসেবে অযোগ্য হলেও, ব্যবসায়িক কারণে কোন প্রতিষ্ঠানকে যদি কোন অংশীদারি কারবারের সাথে চুক্তি করতে হয়, তাহলে সেটা বৈধ হিসেবে গণ্য হবে।
  • বিদেশী শত্রু: এই পয়েন্টটার বাস্তবে তেমন কোন প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তারপরও বিদেশী কোন শত্রুর সাথে অংশীদারি কারবার করা সম্ভব নয়। কেননা, বাংলাদেশের সাথে কোন দেশের যুদ্ধ চলছে, এমন সময় ঐ দেশ আমাদের শত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে। শত্রু দেশের কেউ আমাদের দেশের কার সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসা করতে পারবে না, শত্রু দেশের নাগরিক পার্টনারশিপ ব্যবসার জন্য অযোগ্য।
  • এম্বাসেডর/রাষ্ট্রদূত: বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটা দেশ ব্যতীত পৃথিবীর প্রায় সব দেশের একজন করে এম্বাসেডর বা রাষ্ট্রদূত রয়েছে যারা বাংলাদেশে বসে তাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। তারা যদি বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশের কোন নাগরিকের সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসা করতে চায়, তবে সেটাও সম্ভব নয়। একজন রাষ্ট্রদূত অংশীদার হিসেবে অযোগ্য।

মোটামুটি এই কয়টা পয়েন্টই হচ্ছে, অংশীদারি কারবার বা পার্টনারশিপ ব্যবসার জন্য যোগ্যতা অযোগ্যতা। এই যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা মেনেই অংশীদারদেরকে অংশীদারি কারবার শুরু করতে হবে।

 

[ বাকি পর্বগুলোঃ পর্ব ১পর্ব ৩ ]

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.