পার্টনারশিপ বা অংশীদারি ব্যবসার আদ্যোপান্ত : পর্ব ৪

যৌথ ব্যবসা আইন

পার্টনারশিপ আইন, ১৯৩২ অনুযায়ী বাংলাদেশে অংশীদারি কারবারের রেজিস্ট্রেশন ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। পার্টনাররা ইচ্ছে করলে পার্টনারশিপ ডিড রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন আবার নাও করতে পারেন। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও অংশীদারি কারবার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে কোন বাধা নেই। কিন্তু, রেজিস্ট্রেশন না করলে এডভান্স লেভেলের কিছু কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হতে হয়। মূলত কিছু আইনানুগ অসুবিধা এড়ানোর জন্যই অনেকেই অংশীদারি কারবারকে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলে। পার্টনারশিপ আইন, ১৯৩২ এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী, কোন অংশীদারি প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন না হলে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, তা নিম্নরূপ:

  • অংশীদারি কারবার রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধিত না হলে কোন অংশীদার, অপর কোন অংশীদার বা চুক্তি থেকে সৃষ্ট অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারবে না।
  • অংশীদারি কারবার রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধিত না হলে এবং মামলাকারী অংশীদারের নাম নিবন্ধন বহিতে না থাকলে উক্ত অংশীদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিভুক্ত অধিকার আদায়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। কিন্তু, তৃতীয় পক্ষ সর্বদাই মামলা করতে এখতিয়ারাধিন।
  • কোন তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করলে, উক্ত প্রতিষ্ঠান বাদী পক্ষের নিকট হতে নিজস্ব প্রাপ্য অর্থের জন্য পাল্টা পাওনা দাবি করতে পারবে না।
  • ১০০ টাকার অধিক কোন পাওনা আদায়ের জন্য অংশীদারি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে না।

তবে, এই ধারা অন্য কোন দেওয়ানী মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধাগ্রস্ত করবে না। রেজিস্ট্রেশন বিহীন অংশীদারি কারবারের অংশীদাররা উপরিউক্ত ৪ অবস্থায় মামলা দায়ের করতে না পারলেও নিম্নোক্ত ৬ অবস্থায় মামলা দায়ের করতে পারবে:

  • রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও অংশীদারিরা অংশীদারি কারবারের বিলোপ সাধন ও বিলুপ্ত ফার্মের হিসাব নিকাশ যাচাইয়ের জন্য মামলা দায়ের করতে পারবে।
  • রেজিস্ট্রেশন বিহীন অংশীদারি কারবার বিলুপ্ত হয়ে গেলে অংশীদাররা নিজ বা অংশ আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করতে পারবে।
  • রেজিস্ট্রেশন বিহীন অংশীদারি কারবার বিলুপ্ত হয়ে গেলে বিলুপ্ত প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য অংশীদারগণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে।
  • রেজিস্ট্রেশন নেই এমন কোন অংশীদারি কারবারের কোন অংশীদার দেউলিয়া ঘোষিত হলে, অপর অংশীদারগণ তাদের সম্পত্তি উদ্ধার ও তা হতে নিজ বা পাওনা আদায় করতে পারবে।
  • রেজিস্ট্রেশন বিহীন অংশীদারি কারবারের কোন অংশীদার বিশ্বাস ভঙ্গ করলে অন্যান্য অংশীদারগণ তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
  • রেজিস্ট্রেশন বিহীন অংশীদারি কারবার নিম্ন আদালতে তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবীর জন্য মামলা দায়ের করতে পারবে।

 

রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন না থাকলেও যেহেতু রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে বিভিন্ন আইনানুগ সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়াই ভালো। অংশীদারি কারবার যেহেতু ব্যবসা তথা মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই করা হবে, সেক্ষেত্রে একে অন্যের মাঝে লেনদেনের ব্যাপারটা অবশ্যম্ভাবী। এখন যদি কোন অংশীদারি কারবার করতে গিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে টাকা পয়সা পাওনা হয়ে যায় এবং সেই টাকা তুলতে না পারে, তাহলে সেই টাকা উদ্ধার করতে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এই আইনানুগ ব্যবসা নিতে না পারলে হয়ত টাকাটা উদ্ধার করতে হিমশিম খেতে হবে অংশীদারি কারবারকে। লেনদেনের এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না এমন কোন ব্যবসা নেই। বাকিতে লেনদেন না করে ব্যবসা করাটাই এখন আমাদের দেশে জটিল। কিন্তু, কাউকে বাকি দিলে যদি সেই টাকা উদ্ধার করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেই টাকা হয়ত কোন প্রতিষ্ঠানের মূল মুনাফা হতে পারে আবার মূল মূলধন থেকেও হতে পারে। যখন ব্যবসার মূলধন চলে যায় অন্যের পকেটে তখন সেই টাকা তোলা যে কত মুশকিল, সেটা কেবল যার টাকা আটকেছে সেই জানে। এসব জটিলতা এড়ানোর জন্যই সাধারণত অংশীদারি কারবার গুলো রেজিস্ট্রেশন করতে বাধ্য হয়। রেজিস্ট্রেশন করলে কোন তৃতীয় পক্ষের কাছে টাকা পয়সা পাওনা হলে এবং সেই টাকা উদ্ধার করতে না পারলে মামলা করে টাকা উদ্ধার করতে পারবে। এখন আসুন কীভাবে একটি অংশীদারি কারবার রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।

পার্টনারশিপ আইনের ৫৮(১) ধারা অনুসারে, অংশীদারি কারবার রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে স্থানে বা এলাকায় কারবার স্থাপিত হয়েছে বা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, উক্ত এলাকায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং নিযুক্ত নিবন্ধকের দপ্তরে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে এবং আবেদন পত্রের সাথে নিম্নোক্ত বিষয়াদি সংযুক্ত করতে হবে:

  • অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের নাম,
  • প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিসের ঠিকানা,
  • কারবারের শাখা অফিসের ঠিকানা (যদি থাকে),
  • কারবার আরম্ভের তারিখ,
  • অংশীদারদের নাম, ঠিকানা ও পেশা,
  • অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠানে প্রত্যেকের যোগদানের তারিখ,
  • কারবারের মেয়াদ ও উদ্দেশ্য সংক্রান্ত তথ্যাদি (যদি থাকে)

 

উপরোক্ত তথ্য সম্বলিত আবেদন পত্রটি পার্টনারশিপ আইনের ৫৮ ধারার বিধান অনুসারে সকল অংশীদার বা তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন প্রতিনিধি কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। তবে, কোন অংশীদারি কারবারের নামে ‘রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত’ কোন নাম বা শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না; তবে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহার করা যেতে পারে। জাতিসংঘ বা এর অঙ্গ সংগঠনের নাম ব্যবহার করতে চাইলে সেক্রেটারি জেনারেলের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে তা ব্যবহার করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, অংশীদারি চুক্তিপত্র রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধিত হলে প্রতিষ্ঠান ও অংশীদারগণ বেশ কিছু আইনগত সুবিধা লাভ করে। রেজিস্ট্রেশন করা বা নিবন্ধিত চুক্তিপত্র আদালতে দালিলিক সাক্ষ্য তথা প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হবে; যার ফলে এই দলিলের মাধ্যমে অংশীদারদের মধ্যে ভবিষ্যতে সৃষ্টি হতে পারে এমন অনেক সমস্যা বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির আগেই সমাধান হয়ে যাবে। ব্যবসা একটা অবস্থায় চলে আসলে তখন যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত চুক্তিপত্র রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করা।

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

ডিভোর্স ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে: আইন কি বলছে?

ব্যাংকের নমিনি কাকে করবেন? 

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?