তৃতীয় পক্ষের দেয়া চেক ডিসঅনার হলে কি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে?

ব্যবসায়িক আইন

বলা হয়ে থাকে যে, ডাক্তারের হাতে ছুরি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ আর ডাক্তারের বলা Sorry পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ংকর Sorry। একই ডাক্তার যখন অস্ত্র পাচারের জন্য হাতে ছুরি নেয় তখন আমরা খুবই স্বস্তিবোধ করি কিন্তু ওই ডাক্তারি যখন অস্ত্র পাচারের পর Sorry বলে তখন আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যথিত হই। আমাদের জীবনযাত্রাকে উন্নত করতে চেকের ভূমিকা অত্যাধিক। ব্যাংক ব্যবস্থা আমাদেরকে টাকা-পয়সার মত তরল অর্থকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে হস্তান্তর করতে যতটা সহজলভ্য করেছে, চেক তার মধ্যে অন্যতম মাধ্যম। চেকের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই ইচ্ছেমতো যেকোন পরিমাণ অর্থ লেনদেন করতে পারি। কিন্তু এই চেকই অনেক সময় আমাদের জন্য কাল হয়ে যেতে পারে। এমনকি নিজে কোন অপরাধ না করেও অন্যের উপকার করতে গিয়ে যেভাবে চেকের মাধ্যমে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি আজকে আমরা সেই বিষয়ে আলোচনা করবো। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, অনেক সময় আমরা বলে থাকি  উপকারকারী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা অনেকে বলে থাকে উপকারের বিনিময় হচ্ছে থাপ্পড় বা আরেকটু ব্যঙ্গ করে বললে বলা হয় যে, যেই উপকার করে সেই বাঁশ খায়। তাই চেক দিয়ে কারো উপকার করতে গেলে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন কিনা সেই বিষয়টি জেনে তারপরে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাউকে চেক প্রদান করবেন। নিম্নের আইনি জটিলতাগুলো সহজে বুঝার জন্য বলে রাখি, ধরুন আপনার কোন বন্ধুর কাছে আমি টাকা পাই। এখন আপনি আপনার বন্ধুর হয়ে আমাকে একটি চেক প্রদান করলেন। এখন আমি ব্যাংকে গিয়ে যদি ওই চেক ভাঙ্গাতে যাই, কিন্তু আপনার একাউন্টে যদি টাকা না থাকে সেই ক্ষেত্রে আমি কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারব। যদিও মামলাটি করার কথা ছিল অর্থাৎ আমি টাকা পেতাম আপনার বন্ধুর কাছে। তাই বন্ধু বা অন্য কোন আত্মীয়স্বজনের উপকার করতে গিয়ে এমন কিছু করবেন না যেটা বিপদ নিজের ঘাড়ে টেনে আনে। তো চলুন, শুরু করা যাক। 

চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলাগুলিতে মূল বিবেচ্য বিষয় হল চেক প্রদানকারী সম্পূর্ণ সচেতনভাবে এবং বুঝেশুনে চেকটি ইস্যু করেছেন কি না। চেক গ্রহণকারী সাধারণত এই চেকটি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে জমা দেন। যদি চেকটি নগদায়িত না হয়, তবে এটি ডিসঅনারের পর্যায়ে পড়ে এবং নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস আইনের ১৩৮ ধারা অনুযায়ী একটি অপরাধ সংঘটিত হয়।

চেক ডিসঅনার একটি গুরুতর আইনি অপরাধ যা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় বর্ণিত আছে। এই ধারা অনুযায়ী, যখন একটি চেক পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে অনাদায়ী হয়, তখন চেক প্রদানকারী আইনি দায়বদ্ধতার মুখোমুখি হন।

তৃতীয় পক্ষের দেয়া চেকের ক্ষেত্রে, যেখানে একজন ব্যক্তি অন্য কারো দায় মেটানোর জন্য চেক ইস্যু করেন, আইনি পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়ে ওঠে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, প্রশ্ন ওঠে: তৃতীয় পক্ষের দেয়া চেক ডিসঅনার হলে কি ১৩৮ ধারার অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে?

আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর হ্যাঁ। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি বলতে পারি, তৃতীয় পক্ষ যদি স্বেচ্ছায় এবং সজ্ঞানে অন্য কারো দায়িত্ব পূরণের জন্য চেক ইস্যু করেন, তাহলে সেই চেক ডিসঅনার হলে তিনিও ১৩৮ ধারার আওতায় পড়বেন।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক, রহিম সাহেব তার বন্ধু করিমের ঋণ পরিশোধের জন্য একটি চেক দিলেন। যদি এই চেকটি পরবর্তীতে ডিসঅনার হয়, তাহলে রহিম সাহেবও আইনি দায়বদ্ধতার মুখোমুখি হতে পারেন, যদিও তিনি মূল ঋণগ্রহীতা নন।

চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলার মূল বিষয় হলো যিনি চেক দিবেন তিনি বুঝে শুনেই উহা ইস্যু করবেন। গ্রহীতা ঐ চেক পাওয়ার পর নগদায়নের জন্য জমা দিবেন। চেকটি নগদায়িত না হলেই তা ডিসনারের পর্যায়ে পড়বে এবং ১৩৮ ধারার অপরাধ সংঘটিত হবে। নিজের কোন দায়-দায়িত্ব না থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় পক্ষ ঋণ গ্রহীতার ঋণ পরিশোধ বা পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের লক্ষ্যে well wisher হিসাবে চেক প্রদান করলেও এবং তা পরবর্তীতে ডিসঅনার হলে ঐ তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধেও ১৩৮ ধারার মামলা দায়ের করা যাবে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে Surya Advertising (Pvt.) Ltd. v. Arti Press, Shivakasi [ (1992) 1 BC 361] মামলায় বোম্বে হাইকোর্ট বর্ণনা করেনঃ

“In case of a third party cheque, the party who issued the cheque for within the liability of another party who was liable to meet the liability, shall be responsible for having committed the offence even though there is no liability by the said company.”

যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়াল: 

“তৃতীয় পক্ষের চেকের ক্ষেত্রে, যে পক্ষ অন্য পক্ষের দায়বদ্ধতা মেটানোর জন্য চেক ইস্যু করেছে, সে নিজেই দায়বদ্ধ না থাকলেও অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী থাকবে।”

এই রায় স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তৃতীয় পক্ষের দেয়া চেক ডিসঅনার হলেও তা ১৩৮ ধারার আওতায় পড়বে। এটি প্রমাণ করে যে আইনের চোখে, চেক প্রদানকারীর উদ্দেশ্য এবং দায়িত্বশীলতা গুরুত্বপূর্ণ, না কি তিনি মূল ঋণগ্রহীতা কিনা তা নয়।

সুতরাং, যে কেউ তৃতীয় পক্ষের হয়ে চেক ইস্যু করার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। তারা যেন নিশ্চিত করেন যে চেকের অর্থ প্রদান করার জন্য তাদের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে, অন্যথায় তারা আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই, যাই করবেন বুঝেশুনে করবেন, সাবধানে করবেন। ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.