একটা প্রশ্ন শুনতে খুবই হাস্যকর মনে হলেও প্রায় এই প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় যে, আমি বা আমরা অমুক সালে অমুক জায়গায় বিবাহ করেছিলাম কিন্তু তখন কাবিননামা তুলতে মনে নাই বা তুললেও হারিয়ে ফেলেছি। এমতাবস্থায় আমরা আমাদের বিবাহের প্রমাণ স্বরূপ কাবিননামা কোথা থেকে উত্তোলন করতে পারি?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে মজা করে বলতে ইচ্ছে করে, ভাই ৯ টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে?
যদিও সব ট্রেন এখন সময় মত ছাড়ে না, তাই ৯ টার ট্রেন ঠিক ৯ টায় নাও ছাড়তে পারে। যদিও মেট্রোরেল ঠিক সময় মতোই ছাড়ে।
যাই হোক, ৯ টার ট্রেন যেমন ঠিক ৯ টাতেই ছাড়ার কথা, তেমনি বিয়ে যেহেতু কাজির মাধ্যমে পড়িয়েছেন, তাই বিয়ের কাবিননামাও কাজির কাছেই পাবেন। কাজি ব্যতীত অন্য কোথাও বিয়ে করে থাকলে সেটা ভিন্ন কথা, তবে সেক্ষেত্রেও কিভাবে কাবিননামা পেতে পারেন, সে প্রসঙ্গেও লেখার চেষ্টা করবো পরবর্তী আর্টিকেলে।
প্রথমত, সহজ ভাষায় বুঝার চেষ্টা করুন যে, বিয়ে পড়ানোর বা বিয়ে করানোর একমাত্র এখতিয়ার সম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছেন, কাজি বা কাজি সাহেব। কাজি সাহেবের কাছেই একমাত্র কাবিননামা করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই, বিয়ে করতে হলে অবশ্যই কাজির কাছে যেতে হবে। কাজি ব্যতীত আইনত বিয়ে পড়ানোর অধিকার আর কারো নেই। তাই, বিয়ে সংক্রান্ত সকল তথ্যও পাবেন আপনি কাজির কাছে। তাই, কাবিননামা কোথায় পাবেন, এই প্রশ্নের সহজ সরল উত্তর হচ্ছে, কাজি সাহেবের কাছে।
দ্বিতীয়ত, যেকোনো কাজি সাহেবের কাছেই কি আমার কাবিননামা পাওয়া যাবে?
উত্তর হচ্ছে, না। যেকোনো ট্রেনে উঠলেই যেমন আপনি আপনার গন্তব্য পৌছাতে পারবেন না, তেমনি যেকোনো কাজির কাছে গেলেই আপনি আপনার কাবিননামা পাবেন না। আপনাকে যেতে হবে, যে কাজির কাছে আপনি আপনার বিয়ে সম্পন্ন করিয়েছেন, সেই কাজির কাছে। আপনি যদি আপনার গ্রামে কোন কাজির কাছে বিয়ে পড়িয়ে থাকেন, তাহলে গ্রামের ঠিক সেই কাজির কাছেই আপনাকে যেতে হবে কাবিননামার কপির জন্য। আবার, আপনি যদি শহরে বা ভিন্ন কোন অঞ্চলে গিয়ে বিয়ে করে থাকেন, তাহলে কাবিননামার জন্য আপনি ঠিক সেই কাজির কাছেই যেতে হবে।
অনেকেই অনলাইনে কাবিননামা খোঁজার চেষ্টা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ তথা বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশে কাবিননামা অনলাইনে খুঁজে পাওয়ার ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরি। একটা লোক বর্তমানে একই সাথে একাধিক বিয়ে করলেও সেটি যাচাই করার সুযোগ নেই; কিন্তু যদি অনলাইনে কাবিননামা সংরক্ষণ করা হতো তাহলে সেটা মুহূর্তেই যেকোনো স্থানে বসে যাচাই করা যেতো। তাছাড়া, আপনি বর্তমানে আছেন শহরে, আর আপনার জরুরি প্রয়োজনে এখনি কাবিননামার কপি লাগবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি বিয়ে গ্রামে বা অন্য কোন অঞ্চলে করে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেখানে গিয়ে কাজির খোঁজ করে তারপর কাবিননামার কপি সংগ্রহ করতে হবে; বিরাট ঝামেলা। তাই, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন রইল, যথা শীঘ্রই কাবিননামাকে অনলাইনে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
কাবিননামা অনলাইন করার আবেদনের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, অনেক সময় কাবিননামার কপির প্রয়োজন যখন হয় তখন আপনি যে এলাকায় বিয়ে করেছেন, সেই এলাকার কাজির সন্ধান পাওয়া যায় না। হয় তিনি মারা গেছেন বা অবসর গ্রহণ করেছেন; এখন নতুন কাজির কাছে হয়ত আগের কাজির বালাম বইতে থাকা বিয়ের তথ্যগুলো নেই। এমতাবস্থায় প্রার্থী কাবিননামার কপি পেতে আরও বেশী বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। অথচ, অনলাইনে থাকলে যেকোনো জায়গায় বসে বা যেকোনো কাজির কাছ থেকেই বিয়ের তারিখ বা বর- কনের নাম দিয়েই কাবিননামার কপি সংগ্রহ করা যেতো।
যাই হোক, এখন আপনি যদি আপনার কাবিননামার কপি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেন যে, আপনার এলাকার কাজি সাহেব মারা গেছেন বা অন্য যেকোনো কারণে কাবিননামার সন্ধান পাচ্ছেন না, তখন কি করবেন?
তখন আপনাকে যেতে হবে জেলা রেজিস্টারের কার্যালয়ে। আপনি বর্তমানে যে জেলায় আছেন, সেই জেলার জেলা রেজিস্টারের কার্যালয়ে না, বরং আপনি যে জেলায় বিয়ে করেছেন বা কাজি যে এলাকায় আপনার বিয়ে পড়িয়েছিল, সেই জেলার জেলা রেজিস্টারের কার্যালয়ে। সেখানে গেলে আপনি বিয়ের তারিখ এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দিয়ে কাবিননামার কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
তাছাড়া, যারা কোন কাজির কাছে বিয়ে পড়িয়েছিলেন মনে করতে পারছেন না বা খুব গোপনে কাবিননামা সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন, তারা জেলা রেজিস্টারের কার্যালয় থেকে কাবিননামার কপি সংগ্রহ করাই উত্তম পন্থা হবে।
বর কনে ছাড়া কি তৃতীয় কোন ব্যক্তি কাবিননামার কপি তুলতে পারবে?
জি পারে। বর, কনে বা তাদের পক্ষে কেউ বা যেকেউই কাবিননামার কপির জন্য আবেদন করতে পারে; এতো কোন বাধাবিপত্তি নেই।
আচ্ছা এতটুকু তো বুঝলাম কিন্তু কাবিননামার কপি তুলতে খরচ কত লাগতে পারে?
কাজি সাহেব সাধারণত কাবিননামার নকলের জন্য ৫০ টাকা এবং প্রতি বছর তল্লাশির জন্য ১০ টাকা নিতে পারেন।
Prevention is better than cure, তাই সকলের উচিত হচ্ছে, বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই কাজি সাহেবের কাছ থেকে কাবিননামার কপি সংগ্রহ করে রাখা। বিয়ের সাথে সাথে বলতে ২/৩ দিন সময় লাগতে পারে। কিন্তু, তখনি আপনি যদি কাবিননামা সংগ্রহ করে রাখেন এবং সেটি স্ক্যান করে অনলাইনে সংগ্রহ করে রাখেন, তাহলে আর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সাধারণত, কাবিননামার কপি কেন লাগে?
বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক দেওয়ার সময়, বিবাহ সংক্রান্ত কোন মামলা মোকদ্দমার সময়, হজ বা বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বা ভিসা সংক্রান্ত নানাবিধ কাজে। প্রায় সব জায়গায় আপনি কাবিননামার ফটোকপি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। তাই, বিয়ের পরপরই যদি কাবিননামার কপি সংগ্রহ করে স্ক্যান করে অনলাইনে সংগ্রহ করে রাখেন, তাহলে যখন প্রয়োজন তখনি ব্যবহার করতে পারবেন।
চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেলটি নিয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে, যোগাযোগ করুনঃ 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )