হিল্লা বিয়ে

তালাকের পর একই স্ত্রীকে পুনরায় বিয়ে

পারিবারিক আইন

পৃথিবীতে মানব সভ্যতা আসার আগেই মানব সভ্যতার মধ্যে যে সম্পর্কটি বিদ্যমান ছিল সেটি হচ্ছে বিবাহ। আমরা জানি যে, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এবং আমাদের আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ) দুইজনে পৃথিবীতে আসার আগেই আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় জান্নাতে বিবাহ সম্পন্ন করেন। তারপর ঘটনার পরিক্রমায়, উনারা দুইজন পৃথিবীতে আসেন এবং তারপর থেকেই মানব সভ্যতার শুরু। এখনো মানুষ প্রতিনিয়ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি যখন এই আর্টিকেলটি লিখছি তখনো কোথাও না কোথাও একজন নারী এবং একজন পুরুষ দুইজন পরস্পর পরস্পরকে ভালোবেসে আজীবন একসাথে থাকার প্রত্যাশায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। ঠিক তেমনি যখন আপনি এই অণুচ্ছেদটি পড়ছেন, তখনো হয়তো পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে একজন নর এবং একজন নারী পরস্পরকে ভালোবেসে একে অন্যকে বিবাহ করছে। বিবাহের পর সন্তান জন্ম দানের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানব সভ্যতা টিকে আছে যুগ যুগ ধরে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে; এই আশা আমরা স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্ত করতে পারি। কারণ এই বিবাহের মাধ্যমে পরিবার সংঘটিত হয় এবং বলা হয়ে থাকে যে পরিবার হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। একসময় যৌথ পরিবার ছিল, এখন একক পরিবার আছে, ভবিষ্যতে হয়তো পরিবারের প্যাটার্ন চেঞ্জ হবে কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি ঠিকই থেকে যাবে। কারন মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না। বিয়ের হয়তো ধরন পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে প্রেম-ভালোবাসা, একসাথে থাকা এবং তার ফলশ্রুতিতে সন্তান জন্ম দেওয়া; এই প্রাচীন প্রথাটি কখনোই পরিবর্তন হবে না। গ্রামে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, দুটো পাতিলকে যদি একসাথে রাখা হয় তাহলে ওই দুই পাতিল নিজেদের মধ্যে ঠুকঠুক করবে, সেখানে দু’জন মানুষ একজন আরেকজনকে যতই ভালোবাসুক, একজন আরেকজনের জন্য জীবন উৎসর্গ করুক, অনেক স্যাকরিফাইস করুক, তারপরও যেহেতু দুটো মানুষ দুটি ভিন্ন সত্ত্বা, অনেক কিছু ব্যাতিক্রম, সেহেতু দুজনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মান-অভিমান, পরস্পরের ভিন্ন অভিমত থেকে শুরু করে অনেক ধরনের বিপরীতমুখী বক্তব্য বা কার্যকলাপ থাকতে পারে, যার ফলশ্রুতিতে একসময় দুইজন নর-নারী একসাথে নাও থাকতে পারে বা দু’জন নরনারী একসাথে থাকার ইচ্ছা পোষণ না করে বরং পৃথক থাকার ইচ্ছা পোষণ করতে পারে; যাকে আমরা আপাতদৃষ্টিতে সেপারেশন বলে থাকি বা ধর্মীয়ভাবে তালাক নামে অভিহিত করে থাকি। 

 

ইসলাম ধর্ম অনুসারে যতগুলো হালাল কাজ রয়েছে ডিভোর্স বা তালাককেও সেই হালাল কাজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বলা হয়েছে, তালাক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল। হালাল কিন্তু নিকৃষ্ট বলে এটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, কেবলমাত্র দুইজন মানুষ পরস্পরের সাথে থাকা যদি খুবই অসম্ভব পর্যায়ে চলে যায় এবং যার ফলশ্রুতিতে আরো অনেকগুলো অসুবিধার সৃষ্টি হয়, শুধুমাত্র তখনই হয়তো তালাক সম্ভব; অন্যথায় পরস্পর পরস্পরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে, উভয় পক্ষ থেকে ছাড় দিয়ে পৃথিবীর প্রাচীন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ পরিবার প্রথা টিকিয়ে রাখা উচিত। কেননা, আমরা জানি তালাক দেওয়ার পরে পুরুষ ব্যক্তিটি চাইলে পুনরায় আরেকটি স্ত্রীলোককে বিবাহ করতে পারবেন, তেমনি স্ত্রীলোকটি চাইলে পুনরায় আরেকটি পুরুষকে বিবাহ করতে পারবেন। কিন্তু তারা দুইজন বিবাহবন্ধনে থাকা অবস্থায় অর্থাৎ তালাকের আগে তাদের উভয়ের যে সংসার ছিল, সেই সংসারে যেসব সন্তানাদি জন্মলাভ করেছে, তারা আর কখনই একসাথে তাদের বাবা-মা কে নিয়ে পরিবারে বসবাস করতে পারবে না। কেননা তাদের বাবারও আলাদা পরিবার হয়ে যাবে, তাদের মায়েরও আলাদা পরিবার হয়ে যাবে। এখানে আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে একটি বিবাহ কিন্তু শুধুমাত্র একটি কাপল তথা একজন নারী এবং একজন পুরুষকে এক সাথ করে না বরং ওই নারী এবং পুরুষের দু’টো পরিবারও মিলিত করে। আমার বাবার পরিবার এবং আমার মায়ের পরিবার, দুই পরিবারের মধ্যে একটি মিলবন্ধন তৈরি হয় যা একটি আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি করে। কিন্তু যেই মাত্র বাবা মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ বা তালাক সম্পন্ন হয়, তখন শুধুমাত্র তাদের দুই জনের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয় না, বিচ্ছেদ হয়ে যায় দুটি পরিবারের মধ্যেও; যেটি ভবিষ্যতের পথ চলায় দু’টি পরিবারকে অনেক ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয়ে থাকে তাদের সন্তানরা। কি কি কারনে তালাক বা বিচ্ছেদ হয়ে থাকে, সেটির অনেকগুলোই আপনারা জানেন; তারপরও আমরা ভবিষ্যতে একটি একটি পর্ব করে লেখার চেষ্টা করব। কিন্তু তালাকের ফলে সন্তানরা যে ব্রোকেন ফ্যামিলিতে বড় হতে থাকে তার প্রভাব নিয়ে লেখাটা বেশি জরুরি। কারণ আজ আমি একজন পুরুষ আমার স্ত্রীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করার সময় শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছি, অন্যদিকে আমার স্ত্রী একইভাবে শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা কে গুরুত্ব দিচ্ছে। যখন আমার পছন্দ অপছন্দ এবং আমার স্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা এডজাস্ট করছে না, তখনই আমরা তালাক নোটিশে ‘বনিবনা’ হচ্ছেনা নামক গতানুগতিক কারণটি দেখিয়ে তালাক দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের এই ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা পছন্দ-অপছন্দ এইসবের যে বলিরপাঠা হচ্ছে আমাদের সন্তান এবং এর জন্য তাকে তার বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মজীবন, প্রত্যেকটি জায়গায় বুলিং এর শিকার হতে হচ্ছে বা হবে এবং সে ভিতর থেকে ফাঁকা থাকবে। একসাথে তার বাবা মাকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না, তার সুখ গুলো তার বাবা-মায়ের সাথে ভাগাভাগি করতে পারবে না, কষ্টগুলো বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করতে পারবে না, এই বিষয় নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই। আমরা নিজেরা হয়তো একটু উষ্ণতার আশায়, একটু আরামে থাকার ইচ্ছায়, একটু ভালো সঙ্গ পাওয়ার লোভে আমাদের সন্তানদেরকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। একটি বার ভাবুন তো, ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত আপনার বেড়ে ওঠার পথে আপনার বাবা-মা উভয়ে কতটুকু ভূমিকা পালন করেছিলেন, বাবা-মা দুইজন দুই দিক থেকে আপনাকে সাপোর্ট না দিলে আজকে কি আপনি আপনার পজিশনে আসতে পারতেন?- পারতেন না। তাহলে ভবিষ্যতে আপনার ছেলেটি বা আপনার মেয়েটি কিভাবে একা একা বাকি পথটুকু পাড়ি দিবে? যেখানে আপনি আপনার স্ত্রীর দুইজন দুইজনের মুখ দেখাদেখি করেন না, ভাবুন তো আপনার পড়ন্ত বয়সে আপনি আপনার ছেলেটির যখন বিয়ে দিবেন কিংবা আপনি আপনার মেয়েটির বিয়ে দিবেন, তখন আপনার ছেলের শ্বশুরবাড়ি কিংবা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যখন দেখবেন আপনি এবং আপনার স্ত্রী কিংবা আপনি এবং আপনার স্বামী একসাথে হাসিমুখে ছেলের বিয়ে দিতে পারছেন না কিংবা মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। তখন আপনার ছেলে কিংবা মেয়ে মুখে কিছু না বললেও মন থেকে কি আপনাদের প্রতি কিছুটা হলেও ঘৃণা বা অবজ্ঞা নিক্ষেপ করবে না?- ভুল ত্রুটি নিয়েই মানুষের জীবন, কখনো আমাকে ছাড় দিতে হবে, কখনো আমাকে ছাড় দিতে হবে, জীবন কখনো স্মুথভাবে চলে না, পরস্পর সমঝোতার ভিত্তিতে জীবনকে চালিয়ে নিতে হয়।




 

যারা ভবিষ্যতে বিয়ে করবেন বা যারা বর্তমানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ আছেন, তাদেরকে পুরনো একটি লাইনই বলব, ‘ভোগে নয় ত্যাগেই প্রকৃত সুখ’। সব সময় আপনাকে জিততে হবে বা আপনার জন্য সবাই সেক্রিফাইস করবে, আপনার জন্য সবাই ছাড় দিবে, এই মানসিকতা থেকে সরে এসে যদি আপনি কারও জন্য স্যাক্রিফাইস করেন, আপনি যদি কাউকে ছাড় দেন, আপনি যদি কাউকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে বিনিময়ে আপনি সুখটুকু পাবেন। যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন সমাজের কথা চিন্তা করে, ধর্মের কথা চিন্তা করে এবং আপনার বর্তমান সন্তান কিংবা ভবিষ্যতে অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে চেষ্টা করুন দাম্পত্য জীবন সুন্দর করে গড়ে তোলার। তবে যাদের মধ্যে ইতিমধ্যে ‘বনিবনা’ হচ্ছে না বলে তালাক নোটিশ পাঠিয়ে দিয়েছেন অথবা ইতিমধ্যে তালাক দিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অন্য কোথাও এখনো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি কিন্তু আপনার মন চাচ্ছে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর কাছে পুনরায় ফিরে যেতে, পুনরায় আপনাদের সুখের সংসারটিকে টিকিয়ে রাখতে, সেই ক্ষেত্রে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য।

 

রাগের মাথায় হোক কিংবা ঠান্ডা মাথায়, যদি আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন অথবা আপনার স্বামীকে আপনি তালাক দিয়ে দেন, যেভাবেই তালাক দিয়ে থাকুন, প্রথমেই মনে রাখতে হবে ৯০ দিনের একটি সুযোগ রয়েছে; আপনারা ওই তালাক নোটিশ অকার্যকর করার জন্য১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ ধারা অনুসারে, তালাক নোটিশ পাঠানোর নিয়ম হচ্ছে, স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করে সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে একটি কপি এবং আরেকটি কপি যাকে তালাক দেওয়া হচ্ছে তার কাছে পাঠাতে হবে। তালাক নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিন পরে উক্ত তালাক কার্যকর হবে। উল্লেখ্য, তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়া পর বা ৯০ দিন যেটি পরে শেষ হবে তারপর তালাক কার্যকর হবে। আরও উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধয়্যাদেশের ৭(২) ধারা অনুসারে, যদি স্বামী চেয়ারম্যান/মেয়র এবং স্ত্রীকে নোটিশ প্রদান না করে থাকে তাহলে স্বামী ১ বছরের কারাদণ্ড (বিনাশ্রম) অথবা ১০,০০০/-টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই ৯০ দিনের মধ্যে যদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কিংবা পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের মধ্যস্থতায় অথবা দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় অথবা অন্য যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যস্থতায় যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হয়ে যায়; অর্থাৎ আপোষ মীমাংসা হয়ে যায় সেক্ষেত্রে উক্ত তালাক নোটিশটি আর কার্যকর হবে না। তখন স্বামী-স্ত্রী চাইলে নির্দ্বিধায় পুনরায় সংসার করতে পারবে। এর কারণ হচ্ছে তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন পরে যেহেতু তালাক কার্যকর হয়, সেই ক্ষেত্রে আইনত ওই ৯০ দিন পর্যন্ত ওনাদের মাঝে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। যার প্রমাণ হচ্ছে, ওই ৯০ দিন স্বামীকে তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে হবে। যেহেতু উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান আর এর মাঝে আপস-মীমাংসা হওয়ার ফলে উনারা দুইজন পুনরায় সম্পর্ক শুরু করেছে, সেক্ষেত্রে তালাক অটোমেটিক্যালি অকার্যকর হয়ে যাবে। অর্থাৎ, আপনি যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে তালাক নোটিশ পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন এবং ৯০ দিন সময় এখন অতিবাহিত হয়নি, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন সমঝোতার চেষ্টা করার। সেক্ষেত্রে আপনারা সালিশি পরিষদের সহযোগিতা নিতে পারেন বা দুই পরিবারের মুরুব্বী কিংবা যে কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা নিতে পারেন কিংবা দুই পরিবারের সাথে মিউচুয়াল রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে আপনারা দাম্পত্য সম্পর্ক পুনরায় শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে কখনো নিজের ছোট হয়ে যাবেন, মানুষ আপনাকে খাটো করে কিছু বলবে, আপনার দাম কম, এই ধরনের অনেক কথা শোনাবে। তবে, এই ভয়ে কখনোই দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য লজ্জিত হবেন না বা পিছিয়ে পড়বেন না। মানুষের কাজই হচ্ছে পিছনে কথা বলা। কিন্তু, আপনার যখন ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে, তখন মাঝরাতে যখন আপনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদবেন, তখন লোকজন এসে আপনাকে সান্তনা দিবে না, বরং পিছনে আপনাকে আপনার চরিত্র নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু সম্পর্কটা টিকে রাখতে পারলে একটা সময় ঐ মানুষ গুলোই আপনাকে বাহবা দিবে, অন্যের কাছে প্রশংসা করবে যে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের সংসারে ফিরে এসেছেন। এবার আসুন যারা ইতিমধ্যে ৯০ দিন সময় পার করে ফেলেছেন অর্থাৎ ডিভোর্স কার্যকর হয়ে গেছে, তারা কি করবেন?

 

আইন অনুসারে, তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে তালাক কার্যকর হয়ে যায়, তখন স্থানীয় কাজীর মাধ্যমে তালাক রেজিস্ট্রি করে নিতে হয়। কিন্তু কোনো দম্পতি যদি ৯০ দিনের মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা না করে থাকে কিংবা চেষ্টা করার পরেও দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান রাখতে না পারে সেই ক্ষেত্রে তাদের তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। কিন্তু, তাদের দুইজনের মধ্যে কিংবা যেকোনো একজনের মধ্যে যদি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ইচ্ছা থাকে এবং এক পক্ষের চেষ্টায় অপরপক্ষ যদি সম্মতি দেয় অর্থাৎ দিন শেষে দুই পক্ষ যদি সম্মতি দিয়ে থাকে, সেটা হতে পারে দুই পরিবারের সমঝোতার মাধ্যমে কিংবা যে বিরোধ নিয়ে দুই পক্ষ তালাকের পথে হেঁটেছেন সে বিরোধ মীমাংসা হয়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে, সন্তানের দিকে তাকিয়ে বা আল্লাহ যদি হেদায়েত দান করে বা অন্য যেকোনো কারণে যখন দেখবেন যে, আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ইচ্ছা হচ্ছে, যে সম্পর্কটা ইতিমধ্যে তালাকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, সেই সম্পর্কটি আপনারা আর চাইলেই নিজেদের মতো করে শুরু করতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে আপনাদেরকে পুনরায় বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে। আপনারা প্রথমবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সময় যেভাবে কাজীর উপস্থিতিতে কাবিননামায় স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন, ঠিক একইভাবে আপনাদেরকে পুনরায় কাজীর মাধ্যমে কাবিননামা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে। জাস্ট একটা নতুন বিয়ে যেভাবে সম্পন্ন হয়, ঠিক সেইভাবেই বিয়ে করতে হবে। যদিও গ্রামগঞ্জে অনেকেই এখনও হিল্লা বিবাহের কথা বলে, কিন্তু হিল্লা বিবাহ নিষিদ্ধ। হিল্লা বিবাহ কি, কেন, কিভাবে সেসব নিয়ে ভবিষ্যতে একটি পর্বে আমরা লেখবো। শুধু এটুকু জেনে রাখেন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরে যদি তারা পুনরায় বিবাহ করতে চায়, সেক্ষেত্রে মাঝখানে হিল্লা বিয়ের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, হিল্লা বিবাহ নিষিদ্ধ; আপনাকে শুধু কাজীর উপস্থিতিতে কাবিননামা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করতে পারবেন। 

 

আজ এই পর্যন্তই। নিজের পরিবারকে সময় দিন, পরিবারের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন এবং শিষ্টাচার প্রতিষ্ঠা করুন, আপনার পরিবারের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি যাতে সমস্যা সৃষ্টি না করে সেদিকে যেমন খেয়াল রাখবেন, ঠিক তেমনি আপনি কিংবা আপনার পরিবারের কেউ অন্য কোন পরিবারের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে প্রবেশ করে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি যাতে না করে সেদিকে নজর রাখবেন, ধন্যবাদ। 

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.