সুমিরা চার বোন, এক ভাই, ভাইয়ের নাম সুমন। বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক নয় বিধায় বাকি বোনদের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে না। আমরা আর্টিকেলের মূল বিষয়বস্তু বুঝার জন্য চার বোনের মধ্যে শুধুমাত্র একজন সুমি আর এক ভাই সুমনকে ধরে এগুলো চেষ্টা করবো। এখানে ৪ বোনের জায়গায় ১/২/৩/৫ ইত্যাদি যত বোনই হোক, নিম্নোক্ত আলোচনা আপনাদের জন্য প্রাসঙ্গিক হবে।
আমাদের এই কাল্পনিক গল্পে সুমন বড় ভাই হতে পারে আবার ছোট ভাইও হতে পারে, চার বোনের যেকোনো একজনের বড় বা ছোট হতে পারে বা সবার বড় বা সবার ছোট হতে পারে, এগুলো নিয়ে জটিলতা তৈরি করবেন না, কেননা সেগুলো প্রাসঙ্গিক নয়।
প্রাসঙ্গিক হচ্ছে, এই পাঁচ সন্তান এবং স্ত্রীকে রেখে সুমির বাবা আব্দুল মালেক সাহেব মৃত্যুবরণ করার পর ওনার সম্পত্তি বণ্টনের একটি জটিলতা নিয়ে। উল্লেখ্য, ৪ বোনের কয়েকজনের বিয়ে হয়েছে, কয়েকজনের হয়নি। ভাই সুমনের বিয়ে হয়েছে, স্ত্রী ফাতেমা এবং তাদের জোসনা নামে একটি মেয়ে রয়েছে।
কিছুদিন পূর্বে সুমন রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণ করে এবং তার কয়েক মাস পরে তার কন্যা সন্তানটিও মৃত্যুবরণ করে। এইদিকে আব্দুল মালেক সাহেবের সম্পত্তিগুলো তার মৃত্যুর পর বন্টন করা হয়নি। আবার, অল্প বয়সে বিধবা হয়ে ফাতেমা পড়েছে বিপদে। যদিও সুমনের বিধবা স্ত্রী ফাতেমা এখনো তার স্বামীর সংসারে রয়েছে কিন্তু স্বামী এবং কন্যাকে হারিয়ে এই সংসারে ফাতেমার আর বেশিদিন থাকার সম্ভাবনা নেই, সে নিজেই বুঝতে পারছে। তাছাড়া, ফাতেমার বাবার বাড়ি থেকে অন্যত্র বিবাহ দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
কিন্তু এদিকে যেহেতু আব্দুল মালেক সাহেবের সম্পত্তি বন্ধন হয়নি সেই ক্ষেত্রে ফাতেমা তার শ্বশুরের কাছ থেকে কতটুকু সম্পত্তি পাবে বা আব্দুল মালেকের সম্পত্তি এখন কিভাবে বন্টন হবে, এই প্রশ্নগুলোরই আমরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো আজকের এই আর্টিকেলে।
প্রথমেই, দু’টো কথা বলে রাখি যা আর্টিকেলটির পরবর্তী বিষয়বস্তু বুঝতে অনেক সহযোগিতা করবে। প্রথম বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে সম্পত্তি বন্টনের যে জটিলতা গুলো তৈরি হয় তার প্রধান কারণ হচ্ছে যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমাদের বন্টন করা উচিত। কিন্তু আমরা ওই সময় বন্টন না করে, বন্টন করি আমাদের সুবিধা মত সময়, যার ফলে মাঝখানে অনেকগুলো সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, অনেকেই হয়তো মৃত্যুবরণ করে যার ফলে সম্পত্তি বন্টনের যে গাণিতিক হিসেব-নিকেশ সেগুলো করতে গিয়ে গড়মিল দেখা দেয়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আমাদের সমাজে কোন নারী যদি তার মৃত স্বামীর কাছ থেকে সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারী হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে তাকে শুধুমাত্র অন্যত্র বিবাহ করে চলে চলে যাবে আর সম্পত্তি বাহিরে চলে যাবে, এই মানসিকতায় সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা ঠেকাতে অনেক কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয়। অথচ এই সম্পত্তিতে তার অধিকার তাকে মুসলিম আইন ‘হক’ হিসেবে দিয়েছে, তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা উচিত।
যাই হোক আমরা আমাদের উপরে উল্লেখিত আব্দুল মালেকের সম্পত্তি বন্টনের ফারায়েজটি নিয়ে আলোচনা করব। আমাদেরকে এই বিষয়ে সহজে সমাধান দিবে যদি আমাদের মাথায় সেট করে নেই যে, আব্দুল মালেক সাহেব যেই মুহূর্তে মারা গিয়েছেন সেই মুহূর্তে ওনার উত্তরাধিকার কে কে জীবিত ছিল? সেই হিসেবে আমরা ওনার সম্পত্তি বন্টন করবো।
আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি, আব্দুল মালেক সাহেব যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন উনার স্ত্রী চার কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান রেখে যান। তাহলে আমরা যেটা জানি সন্তান থাকলে, স্ত্রী পায় আট ভাগের একভাগ।
মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে স্ত্রীর অধিকার সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রী/স্ত্রীগণদের অধিকার – Article – Legal Fist
আর বাকি সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে বন্টন হবে।
বাকি সম্পত্তি ৬ ভাগে বিভক্ত হবে, দুই ভাগ পাবে সুমন আর চার ভাগ পাবে ৪ মেয়ে; প্রত্যেকটি মেয়ে এক ভাগ করে পাবে।
পুত্রবধূ কখনো শ্বশুর শাশুড়ি থেকে কোন সম্পত্তি পায় না। এখানে ফাতেমা সম্পত্তি পাবে তার মৃত স্বামী সুমনের কাছ থেকে। যেহেতু সুমনের একটি কন্যা সন্তান ছিল, সেই ক্ষেত্রে ফাতেমা পাবে আট ভাগের এক ভাগ আর তাদের কন্যা সন্তান যেহেতু একজন সেই ক্ষেত্রে সে পাবে বাকি সম্পত্তির অর্ধেক, অর্থাৎ ফাতেমাকে দেওয়ার পর যতটুকু বাকি থাকছে তার অর্ধেক পাবে। এরপর বাকি সম্পত্তি চলে যাবে সুমনের মা, বোনদের কাছে, তাছাড়া যদি কোন আসাবা তালিকাভুক্ত উত্তরাধিকার থাকে, তারাও সম্পত্তি পেতে পারে।
এখান যেহেতু, ফাতেমার কন্যা সন্তান সম্পত্তি পাওয়ার পর মারা গেছে সে ক্ষেত্রে ফাতেমা তার মেয়ের কাছ থেকেও সম্পত্তি পাবে সেটি মা হিসেবে মৃত সন্তানের সম্পত্তিতে তার অধিকার হিসেবে। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফাতেমা ২ দিক থেকে সম্পত্তি পাবে। প্রথমত, মৃত স্বামীর কাছ থেকে, দ্বিতীয়ত মৃত কন্যার কাছ থেকে।
অনেকেই এখানে এসে প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলবে। অনেকেরই হয়ত লেখকের কাছে প্রশ্ন যে, সম্পত্তি তো এখনো ভাগই হয়নি, তাহলে ফাতেমা আর সুমনের মেয়ে কিভাবে সম্পত্তি পেলো?
উত্তর হচ্ছে, সম্পত্তি আপনি আমি ভাগ করলেই ভাগ হয়, অন্যথায় সেটা স্থগিত থাকে এটা ঠিক। কিন্তু, সম্পত্তি ভাগ আপনি যখনি করেন আপনাকে উত্তরাধিকার হিসেবে কে সম্পত্তি পাবে, কে পাবে না এটা নির্ধারণ করতে হবে, যার সম্পত্তি বণ্টন করতে বসেছেন, তার ঠিক মৃত্যুকালে কারা জীবিত ছিল আর কারা মৃত ছিল সেই হিসেবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, না বুঝলে নিম্নের এই আর্টিকেলটা একবার পড়ুন, তাহলে অস্পষ্ট ধারণা সুস্পষ্টরূপ নিবেঃ সম্পত্তি বণ্টনের যে মৌলিক বিষয়টি না জানার কারণে আপনি হিসেবে ভুল করছেন – Article – Legal Fist

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )