সৎ ভাই-বোনের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার

সৎ ভাই-বোনের সম্পত্তিতে অধিকার

সৎ শব্দটা যতটা নিষ্পাপ, কলঙ্কমুক্ত এবং শুনতে শ্রুতি মধুর, ঠিক ততটাই ভয়ঙ্কর মনে হয় যখন আমরা শুনি সৎ মা, সৎ বাবা কিংবা সৎ ভাই বোন. ছোটবেলা থেকেই গল্প, উপন্যাস, সিনেমাতে আমরা সৎ মায়ের ক্যারেক্টারটাকে যেভাবে দেখে এসেছি, সেই হিসেবে সৎ মা বলতে আমাদের মনে সব সময় একটা ভীতি এবং অশ্রদ্ধা তৈরি হয়। সৎ ভাই, বোনকে আমরা গল্প সিনেমাতে যেমন শত্রু হিসেবে দেখতে পাই, বাস্তবতা ভিন্ন রূপও দেখতে পাওয়া যায়। সৎ মানেই সবসময় খারাপ হয় তা কিন্তু না; সৎ মা বা সৎ ভাই, বোন সবসময় খারাপ হতে হবে তা কিন্তু কোথাও বলা নেই। সৎ মা তার সংসারের সন্তানদেরকে যেভাবে লালন পালন করেন তা দেখে আপনি অনেক সময় বুঝতেও পারবেন না তিনি কি আপন মা নাকি সৎ মা; এমন উদাহরণও রয়েছে। আপনার যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন আমি দেখিয়ে দিব আপনাকে। কিন্তু ঠিক কি কারণে এই সম্পর্কগুলোকে ‘সৎ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে সেটা আমার জানা নেই, কারো জানা থাকলে অবশ্যই জানাবেন। যাই হোক আমরা আলোচনা করব, সৎ ভাই বোন উত্তরাধিকারসূত্রে কিভাবে সম্পত্তি পেতে পারেন।
আপনি আপনার সৎ ভাই বোন মারা যাওয়ার পরে তাদের সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেতে পারেন বিভিন্ন কন্ডিশনে। তবে তার আগে আপনাকে সৎ ভাই বোন সম্বন্ধে আরেকটা বিষয় জানতে হবে যে, সৎ ভাই বোন কিন্তু দুই ধরনের হয়ে থাকে, যদি মা একজন কিন্তু বাবা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে মায়ের সন্তান হবে আপনার বৈপিত্রেয় ভাই। অর্থাৎ, আপনার মা যদি পূর্বে বিয়ে করে থাকে এবং সেইখানে সন্তান থেকে থাকে অথবা পরবর্তীতে কোথাও বিয়ে করে থাকে সেখানে সন্তান থেকে থাকে, যাদের বাবা আপনার বাবার নয়, সেক্ষেত্রে ওই ভাইয়েরা হবে আপনার বৈপিত্রেয় ভাই।

 

অন্যদিকে আপনার বাবা যদি পুনরায় বিয়ে করে থাকেন এবং সেখানে সন্তান থাকে অথবা আপনার মাকে বিবাহ করার পূর্বে যদি ওনার কোন স্ত্রী থাকে এবং ওই সংসারে যদি সন্তান থেকে থাকে অর্থাৎ আপনাদের মা ভিন্ন কিন্তু বাবা এক, সেই ক্ষেত্রে ওই ভাই-বোনেরা আপনাদের বৈমাত্রেয় ভাই বোন।

এই বিষয়গুলো মনে রাখাটা একটু উলটপালট হয়ে যায় তাই সবসময় এই হিসেবে মনে রাখবেন যে সৎ মায়ের ছেলে মেয়ে মানে বৈমাত্রেয় ভাই বোন। সবার বাবার ছেলে মেয়ে মানে হচ্ছে বৈপিত্রেয় ভাই বোন।

 

বৈপিত্রেয় ভাই হিসেবে: আপনি আপনার বৈপিত্রীয় ভাই বোনের কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে সম্পত্তি পেতে হলে শর্ত হচ্ছে যে আপনার ওই বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন মারা যাওয়ার পর তার উপরের দিকে বাবা থেকে শুরু করে দাদা উপরের দিকে যতজন আছে কেউ জীবিত থাকতে পারবে না এবং নিচের দিকে সন্তান থেকে সন্তানের সন্তান নিচের দিকে কেউ জীবিত থাকতে পারবে না। তাহলেই কেবলমাত্র বৈপিত্রেয় ভাই বোনের কাছ থেকে আপনি বৈপিত্রেয় ভাই হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারেন। উপরের দিকে এবং নীচের দিকে অর্থাৎ পূর্বসূরি এবং উত্তরসূরি কেউ জীবিত না থাকলে আপনি আপনার বৈপিত্রেয় ভাই বোনের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ৬ (ছয়) ভাগের ১ (এক) ভাগের মালিক হতে পারবেন। আর আপনারা যদি একাধিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ৩ (তিন) ভাগের ১ (এক) ভাগের মালিকানা পাবেন।



 

বৈপিত্রেয় বোন হিসেবে: বৈপিত্রেয় বোন হিসেবে আপনি যদি আপনার বৈপিত্রেয় ভাই বোনদের কাছ থেকে সম্প্রতি পেতে চান সেক্ষেত্রে পেতে পারেন একমাত্র এই শর্তে যে আপনার উক্ত বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন মারা যাওয়ার সময় তার বাবা থেকে শুরু করে উপর দিকে কেউ জীবিত নেই আবার নিচের দিকে সন্তান থেকে শুরু করে নাতি-পুতি কেউ জীবিত নেই তাহলে আপনি আপনার মৃত বৈপিত্রেয় ভাই বা বোনের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ৬ (ছয়) ভাগের ১ (এক) ভাগের মালিক হতে পারবেন আর আপনারা যদি একাধিক হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ৩ (তিন) ভাগের ১ (এক) ভাগের মালিকানা পাবেন।

 বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে: বৈমাত্রেয় বোন অর্থাৎ আপনাদের একই বাবা কিন্তু মা ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার বৈমাত্রিয় ভাই কিংবা বোনের কাছ থেকে আপনি নিজে বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে সম্পত্তি পেতে হলে শর্ত হচ্ছে আপনার বৈমাত্রেয় ভাই কিংবা বোনের যখন মৃত্যু হবে, তখন তার পুত্র, কন্যা, পুত্রের পত্র, পুত্রের কন্যা, আপন ভাই, আপন বোন, বৈমাত্রেয় ভাই এবং পিতা কেউ জীবিত থাকবে না, তখন বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে আপনি একজন হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে আপনি অর্ধেক সম্পত্তি পাবে আর যদি আপনারা একাধিক হয়ে থাকেন বৈমাত্রেয় বোন তাহলে মোট সম্পত্তির তিনভাগের দুইভাগ পাবেন।
তবে, বৈমাত্রিয় ভাই কিংবা বোনের যদি একজন আপন বোন থেকে থাকে তাহলে সে যেহেতু নিজে ১/২ অংশ পাবে, তাই তখন বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে আপনি পাবেন ১/৬ অংশ। আবার, যদি বৈমাত্রিয় ভাই কিংবা বোনের যদি একাধিক আপন বোন থেকে থাকে তাহলে তারা যেহেতু নিজেরাই ২/৩ অংশ পাবে, তাই আপনি বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে কোন সম্পত্তি পাবেন না। 
এখানে বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় বোন বলতে যেটা বুঝানো হয়েছে সেটি কিন্তু আপনি। আপনি বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় বোন হিসেবে সম্পত্তি পাবেন। যে ব্যক্তি মারা গেছি তিনি আপনার বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় বোনও হতে পারে, ভাইও হতে পারে।
একই ভাবে বৈপিত্রেয় ভাই বলতে আপনি ছেলে অর্থাৎ ভাই হতে হবে। তবে মৃত ব্যক্তি আপনার বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন উভয় হতে পারেন।

বৈমাত্রেয় ভাই: বৈমাত্রেয় ভাই কিন্তু শেয়ারার হিসেবে সম্পত্তি পায় না। সে সম্পত্তি পায় আসাবা হিসেবে। যদি বৈমাত্রেয় বোনের সাথে বৈমাত্রেয় ভাই থেকে থাকে, তাহলে বৈমাত্রেয় বোন শেয়ারার হিসেবে সম্পত্তি না পেয়ে বরং বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে আসাবা হিসেবে সম্পত্তি পাবে সার্বজনীন ২:১ অনুপাতে।

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

ব্যাংকের নমিনি কাকে করবেন? 

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ভাই থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী: মুসলিম উত্তরাধিকারে স্ত্রী-কন্যা ও ভাইয়ের লড়াই