Inheritance of Daughters in Hindu Inheritance Law

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে কন্যাদের উত্তরাধিকার

উত্তরাধিকার আইন

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন নিয়ে যখনই কোন কিছু পড়তে যাই বা কখনো কোন কিছু লিখতে যাই, তখনই আমার ভিতরে একটা নারীবাদী চেতনা জেগে উঠে। ব্যক্তি জীবনে আমি নারীবাদী কিংবা পুরুষ বাদী কোনোটিই নয়। আমি মনে করি যেটি ন্যায়, যেটি সঠিক, যেটি সত্য, সেই পথেই থাকা উচিত; যার ফলে সেটিকে আমরা যত্ন করে নাম দিয়েছি সত্যবাদী।

কিন্তু হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীদের নিয়ে কোন কিছু লিখতে গেলে সেটি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সত্যবাদী হলেও অনেকের কাছেই হয়তো সেটি নারীবাদী মনে হতে পারে, তাই আমাকে নারীবাদী বলে গালি দিলেও আমি সেটি হজম করবো, কেননা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সত্যিই নারীদের উপর বেশ জুলুম করা হয়েছে।

যারা সরাসরি নিজেদেরকে নারীবাদী ঘোষণা দিয়ে নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, তাদের এখনো কেন বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে আসেনি, সেই বিষয়ে আমার বেশ কৌতূহল। যদি কোন নারীবাদীর চোখে আমার এই লেখাটি পড়ে কিংবা কোন হিন্দু নারীর চোখে যদি পড়ে কিংবা আপনার পরিচিত কেউ যদি নারীবাদী হয়ে থাকে প্লিজ দয়া করে এই লেখাটি ওনাদের দৃষ্টিগোচরে আনতে সহযোগিতা করুন।

প্রথমত হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে নারীদেরকে কখনোই সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয় না। নারীদেরকে দেওয়া হয় জীবনস্বত্ব অধিকার; অর্থাৎ যতদিন জীবিত আছে ততদিন পর্যন্ত ওই সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে, কিন্তু কখনোই ওই সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না। যার ফলে দেখা যায় যে, একজন পুরুষ উত্তরাধিকার যেখানে সম্পত্তির পূর্ণ মালিকানা পাচ্ছে, চাইলেই সে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে বা অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করতে পারছে, সেখানে একজন নারী উত্তরাধিকার শুধুমাত্র তার জীবদ্দশায় ভোগ দখল করতে পারছে।

অনেক সময় অনেক সম্পত্তি এমনও আছে যেগুলো ভোগ দখল করে কোন লাভ হয় না, সেক্ষেত্রে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে অন্য কোন উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু, আদালতের কাছে যথাযথ কারণ দর্শানো ব্যতীত আদালত অনুমতি দিচ্ছে না আর আদালতের অনুমতি ব্যতীত বিক্রি করাও সম্ভব হচ্ছে না। হিন্দু কন্যাদের ক্ষেত্রে সম্পত্তি বিক্রি করার অধিকার দেওয়াটা একবিংশ শতাব্দীতে এসে খুবই সামান্য চাওয়া।

এবার আসুন দ্বিতীয় যে সমস্যাটি রয়েছে সেটি হচ্ছে, একই পিতামাতার কন্যাদের মধ্যে আবার ভেদাভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে যে ৫৩ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কন্যাদের অবস্থান হচ্ছে পঞ্চম। প্রথম তিনটি হচ্ছে, ছেলে, ছেলের ছেলে এবং ছেলের ছেলের ছেলে। চতুর্থ হচ্ছে বিধবা স্ত্রী এবং পঞ্চমে অবস্থান হচ্ছে কন্যা। অর্থাৎ প্রথম যে চারটি ক্যাটাগরি আছে তাদের মধ্যে কেউ যদি জীবিত না থাকে সেক্ষেত্রে হচ্ছে কন্যারা সম্পত্তি পাবে; অন্যথায় তারা কোন সম্পত্তি পাবে না।

ব্যতিক্রম হচ্ছে যদি উপরে চার জনের মধ্যে শুধুমাত্র তাদের মা জীবিত থাকে, সেক্ষেত্রে মা জীবনস্বত্ব উপভোগ করার পরে অর্থাৎ মায়ের মৃত্যুর পর কন্যার সম্পত্তি পাবে। কিন্তু যদি প্রথম তিনটিতে কোন পুরুষ উত্তরাধিকার থেকে থাকে, সেই ক্ষেত্রে কন্যারা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হিন্দু উত্তরাধিকার আইনে কন্যাদেরকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রথমেই রাখা হয়েছে, অবিবাহিত কন্যা। দ্বিতীয়, বিবাহিত কন্যা। তৃতীয়ত পুত্রবতী বিধবা কন্যা এবং চতুর্থ পুত্রহীন বিধবা কন্যা।

অবিবাহিত কন্যা থাকলে সে তার পিতা কিংবা মাতার সমস্ত সম্পত্তি পাবে, অপর কন্যারা পাবে না। যদি অবিবাহিত কন্যা একজন থাকে, সে পুরো সম্পত্তি ভোগ করবে আর যদি একাধিক থাকে তাহলে তারা সবাই যৌথভাবে এজমালি সম্পত্তির ন্যায় ভোগ করতে পারবে। একাধিক কন্যা সন্তানের মধ্যে যদি একজনের মৃত্যু হয় সেক্ষেত্রে বাকি যারা থাকবে বা যে জীবিত থাকবে সে ভোগ করবে।

যদি অবিবাহিত কন্যা সন্তান না থাকে কিংবা মারা যায়, সেক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যা এবং পুত্রবতী বিধবা কন্যা এই দুই শ্রেণীর কন্যারা একসাথে সম্পত্তি ভোগ করবে। এই দুই শ্রেণীকে একসাথে সম্পত্তি ভোগ করার অধিকার দেওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, যেহেতু বিধবা পুত্র সন্তান পুত্রবতী কন্যার ইতিমধ্যে ছেলে আছে এবং অন্যদিকে বিবাহিত কন্যার যেহেতু বিয়ে হয়েছে সেক্ষেত্রে তার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেক্ষেত্রে এই দুই শ্রেণীকে একসাথে রাখা হয়েছে।

কিন্তু কোন কারণে বিবাহিত কন্যার যদি সন্তান না হওয়া অবস্থায় তার স্বামী মারা যায় অর্থাৎ বিধবা হয়ে যায় এবং যেহেতু স্বামী বিধবা অবস্থায় তার কোন সন্তান নেই তাহলে ভবিষ্যতে তার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই সে চতুর্থ ক্যাটাগরিতে চলে যাবে এবং সেক্ষেত্রে তার সম্পত্তি পাবার কোন সম্ভাবনা নাই। যদি না সে তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে কোন দত্তক নিয়ে থাকে; যদি কাউকে দত্তক নেওয়া হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেই সম্পত্তি পেতে পারে।

কিন্তু কোন সধবা কন্যা যদি বিয়ে হয় এবং তার কোন পুত্র সন্তান না হয়, শুধু কন্যা সন্তান থেকে থাকে কিংবা কোন সন্তান না হয়ে থাকে এবং ভবিষ্যতে আর কোন সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেক্ষেত্রে সেও সম্পত্তি পাবে না

অনেক জটিল মনে হচ্ছে বিষয়টি কিন্তু সহজ করে বললে অবিবাহিত কন্যাদের অগ্রাধিকার সবচেয়ে বেশি, তারপরে হচ্ছে যে কন্যার পুত্র সন্তান আছে। যার পুত্র সন্তান নেই, শুধু কন্যা সন্তান আছে কিংবা যার কোন সন্তানই নেই তাদের অগ্রাধিকার নেই হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুসারে।

সবাই একই বাবা কিংবা একই মায়ের কন্যা, তাদের মধ্যে শুধু বিবাহিত হওয়ার কারণে পিছিয়ে থাকবে, অবিবাহিত হওয়ার কারণে এগিয়ে থাকবে, আবার কারো পুত্র সন্তান থাকার কারণে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, কারো পুত্র সন্তান না থাকার কারণে তাকে বঞ্চিত করা হবে, একবিংশ শতাব্দীতে এসে এ বিষয়গুলো খুবই দৃষ্টিকটু লাগে এবং মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.