মৃত চাচার সম্পত্তিতে কে হকদার – ভাতিজা নাকি সৎ ভাই-বোন?

উত্তরাধিকার আইন

প্রশ্নকারী: আমার বাবা মারা গেছে। আমরা ১ ভাই এবং ৩ বোন । আমার চাচা বিয়ে করেনি , তিনি মারা গেছে । এখন আমার চাচা সম্পদ কিভাবে বণ্টন হবে । উপরন্তু আমার চাচার ২ জন সৎ ভাই এবং ৩ জন সৎ বোন আছে।
লিগ্যাল ফিস্ট: আপনার চাচা আগে মারা গেছে নাকি আপনার বাবা?

প্রশ্নকারী: আমার বাবা আগে মারা গেছে ।
লিগ্যাল ফিস্ট: আপনার বাবা চাচারা আপন ভাই বোন কত জন?
আপনার চাচা মারা যাওয়ার সময় ওনার আপন ভাই বোন কত জন জীবিত ছিল?

প্রশ্নকারী: আপন ভাই ১ জন এবং বোন ১ জন । উনারা কেউ জীবিত নাই । আমার চাচা মারা যাবার আগে উনারা ২ জনই মারা গেছে। আমার চাচার সৎ ভাই ২ জন এবং সৎ বোন ২ জন সবাই জীবিত আছে।
লিগ্যাল ফিস্ট: সৎ বলতে এখানে আপনি মা ভিন্ন, বাবা এক বুঝিয়েছেন, নাকি মা এক, বাবা ভিন্ন বুঝিয়েছেন?

প্রশ্নকারী: মা ভিন্ন।
লিগ্যাল ফিস্ট: আপনার চাচার সৎ ভাই বোন সমস্ত সম্পত্তি পাবে। সৎ ভাইয়েরা ৩৩.৩৩% করে মোট ৬৬.৬৬%, আর দুই বোন মিলে পাবে বাকি ৩৩.৩৪%। আপনি ভাইয়ের ছেলে হিসেবে কিছু পাবেন না; মৃত ব্যক্তির আপন ভাই বোন উনার আগে মারা গেছে আর বৈমাত্রেয় ভাই বোন রয়েছে বলে।

প্রশ্নকারী: আপন ভাই বোনের সন্তানেরা কিছুই পাবে না?
লিগ্যাল ফিস্ট: না।

প্রশ্নকারী: এটা কি ইসলামিক আইন নাকি বাংলাদেশের আইন?
লিগ্যাল ফিস্ট: দুটোই। কেননা, বাংলাদেশের বিবাহ এবং সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথা ব্যক্তির ধর্মীয় আইন অনুসরণ করা হয়। তাই, মুসলমানদের জন্য মুসলিম বা ইসলামিক আইনই রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।

প্রশ্নকারী: ধন্যবাদ।
লিগ্যাল ফিস্ট: আপনাকে অভিনন্দন।

 

এবার আসুন ব্যাখ্যায়, ভাতিজার তুলনায় সৎ ভাই বোনদের অধিকার বেশী, এটা শুনে অনেকেই রেগে আগুন হয়ে যেতে পারেন। এমনিতে সৎ ভাই বোন না থাকলে ভাতিজা-ভাতিজিকে দেখার টাইম থাকুক আর না থাকুক, সৎ ভাই বোন থাকলে তাদের কাছে সম্পত্তি যাওয়ার চেয়ে ঐ ভাতিজা ভাতিজির কাছে সম্পত্তি যাওয়া বেশ ভালো।
আমরা সাধারণত জানি যে, কোন অবিবাহিত পুরুষ অথবা নারী অবিবাহিত অবস্থায় যদি মৃত্যুবরণ করে সেই ক্ষেত্রে তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি যদি তার বাবা-মা না থেকে থাকে (বিশেষ করে বাবা), তাহলে তার সম্পত্তি ভাই-বোনদের কাছে আসাবা হিসেবে চলে যায়। যখন ভাই বোন না থাকে, ভাইয়ের ছেলে থাকে সে ক্ষেত্রে সেই ভাতিজাদের কাছে চলে যায়। কিন্তু যখন একই সময় আপন ভাই বোনের পরিবর্তে সৎ ভাই বোন থাকে আবার আপন ভাতিজা থাকে, সে ক্ষেত্রে কিছু বিতর্ক বা কনফিউশন তৈরি হয়।



এই কনফিউশনের মূল কারণ হচ্ছে, আমরা ফারায়েজ না বুঝে শুধু যুক্তি আর ইমোশন দিয়ে বিচার করতে চাই। আমরা চিন্তা করি, আমাদের ভাই-বোন বেঁচে থাকলে তারা ওই সম্পত্তি উত্তরাধিকার হিসেবে পেতো। কেননা, মৃত ভাই বোনের সম্পত্তিতে জীবিত ভাই বোনের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে, আমাদের বেশ ভালো ধারণা রয়েছে। সেখানে ভাই-বোন জীবিত না থাকলে ভাইয়ের ছেলেরা উত্তরাধিকার হিসেবে মৃত চাচার কাছ থেকে সম্পত্তি পেতে পারতো। অথচ এখানে কিনা আপন চাচার সম্পত্তিতে ভাতিজা সম্পত্তি না পেয়ে সৎ চাচা ফুফু সম্পত্তি পাচ্ছে, এটা অনেক ভাতিজারা মেনে নিতে পারে না। এমনিতেই আমাদের সমাজে সৎ মা, সৎ ভাই বোনের সম্পর্ক গুলো চিরশত্রুদের চাইতে কোন অংশে কম নয় (এটা গল্প, নাটক, সিনেমা এবং কিছু বাস্তব ঘটনা থেকে সৃষ্ট)। আমরা দুনিয়ার সবকিছু সহ্য করতে পারলেও সৎ ভাই-বোনদেরকে সহ্য করতে পারি না। সেখানে আমাদের মৃত্যুর পরে যদি আমাদের সম্পদ আমাদের ওয়ারিশদের কাছে না গিয়েও সৎ ভাই-বোনদের কাছে চলে যায় সেটা আমাদের কোনমতেই সহ্য হবে না।

আমরা জানি যে আপন ভাই বোন থাকলে বৈমাত্রেয় ভাই বোন বঞ্চিত হয়ে থাকে প্রথম ১২ জনের শেয়ার যে তালিকা রয়েছে সেখানে বৈমাত্রেয় ভাই সম্পত্তি না পেলেও যদি বৈমাত্রেয় ভাই বোন উভয় থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে 2 অনুপাত এক অনুসারে বৈমাত্রেয় ভাই বোন সম্পত্তি পেয়ে থাকে এর জন্য শর্ত হচ্ছে আপন ভাই বোন থাকতে পারবে না উপরে বাবা-মা নিচে ছেলে মেয়ে।

কিন্তু যদি এখানে চাচার মৃত্যুর আগে উক্ত ভাতিজার বাবা বা আপন ফুফু জীবিত থাকতো, তাহলে চিত্রটা একটু ভিন্ন হতো। যদি আপন ফুফু একজন হতো, সেই ক্ষেত্রে বৈমাত্রেয় বোন অর্থাৎ ভাতিজার বৈমাত্রেয় ফুফু ১/৬ অংশ পেতো। কিন্তু এখানে যেহেতু মৃত ব্যক্তির আপন ভাই, বোন, বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে কেউই জীবিত নেই, শেয়ারার লিস্টের ১২ জনের মধ্যে শুধুমাত্র বৈমাত্রেয় ভাই, বোন জীবিত রয়েছে, সেক্ষেত্রে পুরো সম্পত্তি শেয়ারারদের কাছে চলে যাবে; তবে তারা আসাবা হিসেবে পাচ্ছে।

 

এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে যে, আসাবা লিস্টে তো ভাইয়ের ছেলের নাম রয়েছে, তাহলে ভাইয়ের ছেলে কেন পাচ্ছে না? উত্তর, আসাবা তালিকার মধ্যে একটা নিয়ম হচ্ছে যে, প্রথম শ্রেণিতে যারা রয়েছে তারা যদি জীবিত থেকে থাকে, তাহলে পুরো অবশিষ্ট সম্পত্তি তাদের কাছে চলে যাবে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে কেউ জীবিত আছে কিনা সেটা আর খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। সেই অনুসারে আসাবা লিস্টে ভাইয়ের ছেলের আগে বৈমাত্রেয় ভাই বোনদের অবস্থান রয়েছে; যার ফলে ভাইয়ের ছেলে আসাবা হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র অবস্থান পরে হওয়ার ধরুন বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা ক্রিকেট খেলায় যেমন দেখে থাকি যে, পরবর্তী রাউন্ড বা সেমিফাইনালে উঠতে হলে পয়েন্টে যেমন এগিয়ে থাকতে হবে, ঠিক তেমনি একই পয়েন্টের দুই দলের মধ্যে কে সেমিফাইনালে যাবে, সেটা যাচাই করার জন্য রান রেট হিসাব করা হয়। ঠিক তেমনি আসাবাতে সম্পত্তি পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র আসাবা লিস্টে থাকলেই হবে না আপনাকে বাকি যারা আসাবা লিস্টে রয়েছেন, তাদের থেকেও অবস্থানের দিক থেকে এগিয়ে থাকতে হবে।

আসাবা লিস্টে কার অবস্থান কোথায়, তা জানতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। আপনার ফারায়েজ সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে আমাদের ইমেইল করে জানাতে পারেন। আশা করি, উপরের ফারায়েজটা বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.