এক স্ত্রীর সম্পত্তির মালিক যেভাবে আরেক স্ত্রী হচ্ছে

উত্তরাধিকার আইন

বিয়ের ১০ বছরের মাথায় হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় লাবিব সাহেবের স্ত্রী সুমি বেগম মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু কালে লাবিব সাহেবের স্ত্রীর বয়স ছিল ২৮ আর লাবিব সাহেবের ৩০। স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রীর মৃত্যু শোক কাটিয়ে ওঠার কিছুদিনের মধ্যেই লাবিব সাহেবকে পুনরায় বিয়ে দেওয়ার জন্য তার পরিবার উঠে পড়ে লেগেছে।

বিশেষ করে লাবিব সাহেবের ছোট ছোট দুটো বাচ্চা রয়েছে, তাদেরকে দেখাশোনা করার পাশাপাশি লাবিব সাহেবের নিজেরও শারীরিক মানসিক চাহিদা পূরণের জন্য পুনরায় বিবাহ দেওয়ার জন্য পরিবার থেকে কয়েকজন উদ্যোগ গ্রহণ করলো।

প্রাসঙ্গিক ভাবে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো, ৩০ বছর বয়সে কোনো পুরুষ যদি বিপত্নীক হয় সেক্ষেত্রে তার পুনরায় বিয়ে করাটা আমাদের সমাজে দৃষ্টিকটু না হলেও একই বিষয়টি যদি নারীদের ক্ষেত্রে ঘটে তখন সেটিকে খুবই ন্যাকারজনক কাজ হিসেবে দেখা হয়। এটিও তো লিঙ্গ বৈষম্য; নারীবাদীরা এটিকে নিয়ে কেন কথা বলে না; বোধগম্য নয়।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, যেকোনো বয়সেই যখন কারো স্বামী বা স্ত্রী মারা যায় অথচ তখনও তার শারীরিক মানসিক চাহিদা থেকে যায় এবং ওই চাহিদার কারণে সে পাপ বা অন্যায় পথে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেই, তখন যে বয়সেরই হোক, যে পরিস্থিতিতেই হোক, তাকে বিয়ে দেওয়া উত্তম। এতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন পাপ কমে যাবে, একইভাবে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অপরাধ করার প্রবণতা কমে যাবে।

যাইহোক এসব বিষয় বিবেচনা করে, লাবিব সাহেবকে তার পরিবার পুনরায় বিবাহ দেওয়া হয়। মূল প্লট শুরু এখান থেকেই।

লাবিব সাহেবের প্রথম যে স্ত্রী, সুমি বেগম মারা গিয়েছিলেন, তিনি তার বাবার বাড়ি থেকে যে সম্পত্তি পেয়েছিলেন সেই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে লাবিব সাহেব পেয়েছিলেন চারভাগের একভাগ(১/৪)।

আমরা জানি যে, স্বামীর জীবদ্দশায় যদি স্ত্রী মৃত্যু বরণ করে, সেক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তিতে অধিকার হচ্ছে, যদি ঐ স্ত্রীলোকের সন্তান থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে স্বামী পাবে চার ভাগের এক ভাগ (১/৪); কিন্তু যদি ঐ স্ত্রীলোকের কোন সন্তান না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে তিনি পাবেন অর্ধেক(১/২)।

সেই হিসেবে, লাবিব সাহেবের স্ত্রীর যেহেতু মৃত্যুকালে দুটো সন্তান ছিল, সেহেতু লাবিব সাহেব উনার স্ত্রীর কাছ থেকে চার ভাগের একভাগ সম্পত্তি পাবেন। এই পর্যন্ত আশা করি কারো বুঝতে কোন সমস্যা নেই।

সমস্যা যেখান থেকে হয়, সেটা হচ্ছে লাবিব সাহেব যখন পুনরায় বিবাহ করলেন এবং স্বাভাবিকভাবেই পরবর্তী সংসারে যখন সন্তানরা জন্মগ্রহণ করবে, সেক্ষেত্রে লাবিব সাহেবের প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত যে সম্পত্তি লাবিব সাহেব অর্জন করেছেন বা মালিকানা পেয়েছেন, সেই সম্পত্তিতে কি লাবিব সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী কিংবা দ্বিতীয় সংসারের সন্তানরা কি মালিকানা অর্জন করবে কিনা?

উত্তর হচ্ছে, একজন ব্যক্তি যখন উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তি পেয়ে থাকে সেটি তার বাবার কাছ থেকে হোক, মায়ের কাছ থেকে হোক, ভাই বোন কিংবা স্বামী-স্ত্রী যার কাছ থেকেই, যেভাবেই হোক না কেন, সেই সম্পত্তিতে যখন তিনি নিজে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে সেই সম্পত্তির সাথে উনার নিজের যেসব সম্পত্তি রয়েছে সেগুলোকে একইভাবেই একই দৃষ্টিতে দেখা হবে।

যেমন, লাবিব সাহেবের স্ত্রী মৃত্যু কালে যে সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন, সেটি উনার বাবার কাছ থেকে বা মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্র পেলেও যেমন, ওনার নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই; অর্থাৎ ওনার স্বামী ওনার কাছ থেকে যে সম্পত্তি পাবে, সেই সম্পত্তি উনার বাবার কাছ থেকে পেলেন নাকি মায়ের কাছ থেকে পেলেন নাকি নিজে উপার্জন করলেন সেটা কোন ব্যাপার না।

শুধুমাত্র মৃত্যু কালে ওনার নামে যতটুকু সম্পত্তি ছিল বা যতটুকু সম্পত্তির তিনি অধিকারী ছিলেন ততটুকু সম্পত্তি ওনার নিজেরই সম্পত্তি ধরে নিয়ে বন্টন করা হবে। যার ফলে লাবিব সাহেব যদি ওনার প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে কোন সম্পত্তি পেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে লাবিব সাহেবের মৃত্যু কালে উনি ওনার স্ত্রীর কাছ থেকে যে সম্পত্তি পেয়েছিলেন সেই সম্পত্তি এবং উনার নিজের বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যে সম্পত্তি পেয়েছেন, সেগুলোর সাথে ওনার নিজের ক্রয়কৃত সম্পত্তি সবগুলোকে একই সম্পত্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে ওই সম্পত্তিতে উনার দ্বিতীয় স্ত্রীর, স্ত্রী হিসেবে যে অধিকার রয়েছে, সে অধিকার অনুযায়ী সম্পত্তি পাবেন।

এই বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে একজনের সাথে কথা হচ্ছিল, তিনি মজা করে বলছিলেন যে, তাহলে কি এক সতীনের সম্পত্তি আরেক সতীন পাবে? বিষয়টি টেকনিক্যালি সত্য। লাবিব সাহেবের প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে যে সম্পত্তি উনি পেয়েছেন সেই সম্পত্তিতেই লাবিব সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী অধিকারী হতে পারেন। এখানে আইনত কোন বাধা নেই।

পরিস্থিতির বিবেচনায় স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় স্ত্রী প্রথম স্ত্রীর সম্পত্তিতে অধিকারী হতে পারে। কারণ তখন সে সম্পত্তিতে প্রথম স্ত্রীর আর কোন অধিকার নেই। ওই সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে লাবিব সাহেব অধিকার অর্জন করেছেন।

এক্ষেত্রে শুধু লাবিব দ্বিতীয় স্ত্রী যে উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পাবে তা কিন্তু নয়, দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে লাবিব সাহেবের যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে ওই সন্তানরাও লাবিব সাহেবের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সূত্র সম্পত্তি পাবে। যার ফলে টেকনিক্যালি এখানেও দেখা যাচ্ছে সৎ মায়ের সম্পত্তিতে সৎ সন্তানরা উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পেতে পারে।

তবে যদি লাবিব সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী পূর্বের কোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ থাকা অবস্থায় সন্তান জন্মদান করেন তারা কিন্তু লাবিব সাহেবের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি পাবে না।

একই থিওরি প্রযোজ্য হবে যদি কোন নারী বিধবা হওয়ার পর অর্থাৎ তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি ওই স্বামীর কাছ থেকে যে সম্পত্তি পাবেন সেই সম্পত্তি নিজে নামে থাকা অবস্থায় যদি তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করে মারা যান সেক্ষেত্রে তার দ্বিতীয় স্বামী ওই সম্পত্তিতে অধিকারী হবেন। শুধু পার্থক্য এতটুকুই যে, মৃত স্ত্রী সম্পত্তিতে সন্তান থাকলে স্বামী পায় ছাড় ভাগের একভাগ আর সন্তান না থাকলে পায় অর্ধেক; কিন্তু মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রী সম্পত্তি পাবে সন্তান থাকলে আট ভাগের একভাগ(১/৮), সন্তান না থাকলে পাবে চারভাগের এক ভাগ(১/৪)। আশা করি, বুঝতে পেরেছেন।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.