শিশু এবং কিশোরের বয়স নিয়ে বিরোধ এবং কর্ম ঘণ্টা

শিশুশ্রম আইন

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর (২) ধারার ৮ অনুচ্ছেদে কিশোর অর্থ চৌদ্দ ১৪ বছর বয়স পূর্ণ করেছেন কিন্তু ১৮ (আঠারো) বছর বয়স পূর্ণ করেননি এমন কোন ব্যক্তি। কিন্তু ৪৪ ধারা অনুসারে, কতিপয় ক্ষেত্রে শিশু-কিশোর নিয়োগে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন ১২ (বার) বছর বয়স্ক বা বয়সপ্রাপ্ত কোন শিশুকে এমন কোন হালকা কাজে নিয়োগ করা যেতে পারে যাতে তার স্বাস্থ্য ও উন্নতির জন্য বিপদজ্জনক নয় বা শিক্ষা গ্রহণে বিঘ্ন ঘটবে না। শর্ত হচ্ছে যে, শিশু যদি স্কুলগামী হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে তার কর্ম সময়টাকে এমন ভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে বিদ্যালয় যাওয়া আসাতে তার কোনো বিঘ্ন না ঘটে। বার বছরের শিশু শ্রমিকরাও কিন্তু কিশোর শ্রমিকের মতো সকল সুযোগ পাবে৷

কিন্তু দেখতে প্রায় একই ধরনের মনে হওয়ার কারণে অনেক সময় শিশু আর কিশোরের বয়স নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া, আমাদের দেশে যেহেতু জন্ম নিবন্ধনেও বয়স চুরির মত জাতীয় রোগ রয়েছে, সেহেতু কোন প্রতিষ্ঠানে কিশোর বা শিশু শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার সময় বিভিন্ন বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধের আরেকটি কারণ হচ্ছে, বেতন। একজন পূর্ণ বয়স্ক শ্রমিক যে বেতন পেয়ে থাকেন, একজন কিশোর সেই হারে বেতন পেয়ে থাকেন না। আবার, একজন কিশোর যে হারে বেতন পেয়ে থাকেন, একজন শিশু শ্রমিক সেই হারে বেতন পেয়ে থাকেন না। কারণটাও স্পষ্ট, কাজের সময় এবং কাজের ধরন। কিন্তু, বাড়তি বেতনের লোভে অনেক সময় আমাদের দেশের হত-দরিদ্র পিতা মাতারা তাদের শিশুদেরকে কিশোর শ্রমিক বলে চালিয়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ করিয়ে দিয়ে থাকেন।এতে যেমন শিশুটির শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে মালিক পক্ষের আর্থিক এবং সম্মানের হুমকি। তবে, এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এ কতিপয় সমাধান।

শিশু শ্রম নিষিদ্ধ থাকার কারণে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কতিপয় বাধ্যবাধকতায় শিশু-কিশোর উভয়কেই কিশোর শ্রমিকের ন্যায় একই বিধানের কারণে শিশু-কিশোরের বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এ প্রশ্ন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি শিশু-কিশোরের সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তবে পরিদর্শক প্রশ্ন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র বর্তমানে কোন রেজিস্টার চিকিৎসকের নিকট সিদ্ধান্তের জন্য প্রেরণ করবেন। কোন ব্যক্তির বয়স সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র তার সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।

 

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩৭ ধারার বিধান অনুযায়ী,

  • কোন কিশোর কোন পেশা বা প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য উপযুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কিশোর বা তার পিতা মাতা বা অভিভাবক কেউ অনুরুদ্ধ হলে অথবা কোন মালিক কর্তৃক অনুরূপভাবে অনুরুদ্ধ হলে কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক চিকিৎসককে পরীক্ষা করবেন এবং তার সক্ষমতা সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেবেন কিন্তু শর্ত থাকে যে, কোন কিশোর বা পিতা-মাতা বা অভিভাবক আবেদন আবেদন যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রার্থী, সে প্রতিষ্ঠানের মালিক কর্তৃক প্রদত্ত এই মর্মে পত্র সংযোজন করতে হবে যে, কিশোরটি সক্ষম বলে প্রত্যায়িত হলে তাকে চাকরি প্রদান করা হবে।
  • এই ধারার অধীন প্রদত্ত কোন সক্ষমতা প্রত্যয়ন পত্র সেটি প্রদানের তারিখ থেকে ১২ (বারো) মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
  • উক্ত রূপ প্রত্যয়ন পত্রের জন্য মালিক ফিস প্রদান করবেন এবং তা সংশ্লিষ্ট কিশোর বা পিতা মাতা বা অভিভাবকের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না।

 

কিন্তু, পরিদর্শকের যদি কোন কিশোরের বয়স সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেয় বা কিশোরটিকে সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য উপযুক্ত মনে না হলে পরিদর্শক তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দিতে পারেন। এই সম্পর্কে বিধান রয়েছে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩৮ ধারা। উক্ত ধারায় বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে কোন পরিদর্শক এরূপ মত পোষণ করেন যে,

  • কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন ব্যক্তি কিংবা তার কোনো সক্ষমতা প্রত্যয়ন পত্র নেই, অথবা
  • প্রত্যয়ন পত্রসহ কর্মরত কিশোর প্রত্যয়ন পত্রে উল্লেখিত কাজের জন্য সক্ষম নন।

সে ক্ষেত্রে তিনি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক করতে পরীক্ষা করানোর অনুরোধ করতে পারেন এবং কিশোরটি উক্ত রূপ পরীক্ষাতে সক্ষম বলে প্রত্যায়িত না হওয়া পর্যন্ত অথবা কি সত্যি আর কিশোর নয় এই প্রত্যায়িত না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।

 

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৩১ ধারার বিধান অনুযায়ী কোন কিশোর

  • কারখানা বা খনিতে কাজ করতে পারবে সর্বোচ্চ দৈনিক ৫ (পাঁচ) ঘণ্টা, সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩০ (ত্রিশ) ঘন্টা,
  • অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ দৈনিক ৭ (সাত) ঘন্টা, সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪২ (বেয়াল্লিশ) ঘন্টা,
  • কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ দিতে হবে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে,
  • ওভারটাইম বা অধিকাল কাজ করালে তার অধিকারসহ তার কাজের মোট সময়- (১) কারখানা বা খনির ক্ষেত্রে সপ্তাহের সর্বোচ্চ ৩৬ ঘণ্টা; (২) অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা,
  • কোন প্রতিষ্ঠানে কোনো কিশোরের কাজের সময় দুইটি পালায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; কোন পালার সময়সীমা ৭.৩০ (সাড়ে সাত) ঘণ্টার বেশি হবে না,
  • কিশোরকে কেবলমাত্র একটি রিলেতে নিয়োগ করা যাবে। পরিদর্শক লিখিত পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে রিলে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না,
  • সাপ্তাহিক ছুটি কিশোরের ক্ষেত্রে স্থগিত করা যাবে না,
  • একই দিনে কোন শ্রমিক একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে না।

উল্লেখ্য শিশু শ্রমিকের ক্ষেত্রেও একই সময়সীমা প্রযোজ্য। এর অতিরিক্ত সময়সীমায় শিশু বা কিশোরকে দিয়ে শ্রম করানো বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর পরিপন্থী।

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

ডিভোর্স ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে: আইন কি বলছে?

ব্যাংকের নমিনি কাকে করবেন? 

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?