বাবা/স্বামীর মৃত্যুর পর চাচা/দেবরদের দ্বারা বেদখল হলে করনীয় কি?

জমি-জমার আইন

হাবিবের দাদার জমি হাবিবের বাবা ক্রয় করে নেয়। উক্ত কবলা দলিল আছে, জমা খারিজও করা আছে। এস খতিয়ান হাবিবের দাদার বাবার নামে আছে। বি এস খতিয়ান হাবিবের বাবার নামে আছে। হাবিবের বাবা মারা যায় তখন হাবিবেরা নানার বাড়িতে চলে যায়। সে জমি কিছু বছর চাষাবাদ করে হাবিবের মা। এখন ওই জমি হাবিবের চাচারা দখল করে আছে। হাবিবেরা দখল ফিরিয়ে দিতে বললে তার চাচারা বলে তোর বাবা মারা গেছে, জমিও চলে গেছে। এখন হাবিবদের করনীয় কি?

এখানে হাবিব একটি ছদ্মনাম। কিন্তু, এমন ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটেছে, ঘটছে, না জানি ভবিষ্যতেও ঘটে কিনা। আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায় যে, অনেক পরিবারে বাবা হচ্ছে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যার ফলে বাবার মৃত্যুর পরে স্বাভাবিকভাবে পরিবারের মধ্যে কেউ উপার্জন করতে যদি না পারে তখন তাদেরকে দাদা বা চাচারা বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে বা ছেলে সন্তানদেরকে পড়াশোনা করাবে, ভরণপোষণ দিবে এমন মন মানসিকতা বা আর্থিক অবস্থা অনেকেরই থাকে না তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বাবা মারা যাওয়ার পর সন্তানরা তাদের মায়ের সাথে নানার বাড়িতে চলে যায় সেখানে নানা, নানি, মামা, খালাদের সাহায্য সহযোগিতায় বেড়ে ওঠে যদিও সেটিও সবার কপালে জোটে না কিন্তু যাদের কপালে জুটে তাদেরকে নিয়েই আমাদের আজকের এই আলোচনা যারা তাদের বাবার মৃত্যুর পর নানার বাড়ি বা মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুর পর বাবার বাড়িতে চলে যায় এবং সেখানে কিছু বছর বা কিছু সময় অতিবাহিত করে, তখন দেখা যায় যে ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের বাবার বাড়ির সম্পত্তি আর স্ত্রীর ক্ষেত্রে তার স্বামীর বাড়ির সম্পত্তি বেদখল হয়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশে কোন সম্পত্তিতে যদি উপযুক্ত মালিক পক্ষ না থাকে তখন তার আশেপাশের লোকজন উক্ত সম্পত্তি দখল করে নেয় সেক্ষেত্রে যদি এজমালি সম্পত্তি হয়ে থাকে তাহলে তো সেটি বলাই বাহুল্য লোক ঢাকায় আছে আর গ্রামে এজমালি সম্পত্তি, সেটিও বেদখল হয়ে যায়, আর এখানে তো ব্যক্তি মৃত 

আমাদের উক্ত গল্পে হাবিবের মা যখন হাবিবদেরকে নিয়ে নানা বাড়িতে চলে যায় তখন হাবিবের চাচারা তাদের সম্পত্তিগুলো দখল করে নেয়। যদিও কিছু সময় হাবিবের মা চাষাবাদ করেছিল পরবর্তীতে সে সম্পত্তিগুলো হাবিবের চাচাদের দ্বারা বেদখল হয়ে যায়। এখন ওই সম্পত্তিগুলো হাবিবের চাচারা হাবিবদেরকে ফেরত দিতে চাচ্ছে না। এমতাবস্থায় হাবিবরা কিভাবে তাদের বাবার সম্পত্তি ফেরত নিবে?

চলুন জানি, হাবিব বা হাবিবের মত যারা চাচাদের দ্বারা বাবার সম্পত্তি থেকে বেদখল হয়, তারা কিভাবে সেই সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার করবে……

উপরের আলোচনা অনুযায়ী, জমি বর্তমানে হাবিবের বাবা বা ধরে নিন আপনার নামে আছে। দলিলও আপনার বাবার নামে, খতিয়ানও আপনার বাবার নামে। আপনার বাবা যেহেতু বর্তমানে মৃত, তাই আপনার বাবার ওয়ারিশ হিসেবে আপনার মা আর আপনারা ভাই বোন সকলে মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক। এখন দখল পাওয়ার জন্য আপনাদের যা যা করতে হবে তা নিম্নরূপঃ

১। আপনার বাবার মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করুন; আপনাদের আবাস্থল যেখানে সেই অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে বললেই তারিখ এবং আপনার বাবার বিস্তারিত উল্লেখ করে মৃত্যু সনদ প্রদান করবে। 

২। আপনারা যে আপনার বাবার ওয়ারিশ, সেটা প্রমাণের জন্য একই জায়গা অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে থেকে ওয়ারিশান সনদ নিবেন

৩। আপনার বাবা যে আপনার দাদার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছিল, সেই দলিলটি সংগ্রহ করুন। যদি জমির দলিল হারিয়ে যায়, তবে কিভাবে হারানো দলিল সংগ্রহ করবেন, সেটি জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ জমির দলিল হারিয়ে গেলে কি করবেন? – Article – Legal Fist   

৪। আপনার বাবার নামে যে বিএস খতিয়ান রয়েছে, সেটা সংগ্রহ করুন। কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন?- জমিটি যে এলাকায়, সেই এলাকার ভূমি অফিসে। তাছাড়া, অনলাইনেও খুঁজে পেতে পারেন। সম্ভব হলে সাবেক খতিয়ানও সংগ্রহে রাখুন। 

৫। আপনারা এখন আপনার বাবার সম্পত্তি আপোষ বণ্টন করতে পারেন, বণ্টন দলিল সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে সেই দলিল দিয়ে ভূমি অফিসে নিজ নিজ নামে নামজারি/খারিজ/মিউটেশন করাতে পারেন। বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি দেখতে পারেনঃ এজমালি সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়া – Article – Legal Fist 

৬। যদি আপনাদের মধ্যে আপোষ বণ্টন করা সম্ভব না হয়, অর্থাৎ নিজেরা নিজেরা আপোষে বণ্টন করতে না পারেন, তাহলে আপনাদেরকে বাটোয়ারা মামলা দায়ের করতে হবে। তখন সেই রায় অনুসারে আপনাদেরকে ভূমি অফিসে নিজ নিজ নামে নামজারি/খারিজ/মিউটেশন করাতে হবে।

৭। কাগজপত্র যখন আপনাদের নামে তখন আপনারা আপনার চাচাদেরকে আপনাদের জমি ছেড়ে দিতে বলবেন। আপোষে ছেড়ে না দিলে আপনার এলাকার চেয়ারম্যান/মেম্বার/স্থানীয় সালিশ/পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে ঘরোয়া পরিবেশেই দখল বুঝে পাওয়ার চেষ্টা করবেন। এটার চেষ্টাই সবচেয়ে বেশী করবেন। কেননা, এটা সময়, শ্রম, অর্থ কম খরচ হবে। কিন্তু, এরপরও ব্যর্থ হলে আদালতে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করতে হবে। কোন আইনের অধীন মোকদ্দমা করবেন?- এই বিষয়টি আপনি আপনার আইনজীবীর উপরই ছেড়ে দিন। তিনি সেই বিষয়ে আপনার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ। আর কোন আইনের ছাত্র যদি জানার জন্য জানতে চায়, তাহলে উত্তর হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮/৯/৪২ ধারার অধীন। যদি বেদখলের ৬ মাসের মধ্যে মোকদ্দমা করে তবে সেটা ৯ ধারার অধীন করতে হবে। আর যদি ৬ মাসের বেশী হয়ে যায় তখন ১২ বছরের মধ্যে ৮ এবং ৪২ ধারায় মোকদ্দমা করতে হবে। তবে, বুদ্ধিমানের কাজ হবে স্থানীয় পর্যায়ে চেয়ারম্যান/মেম্বার/সালিশ/পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে ঘরোয়া পরিবেশেই দখল বুঝে নেওয়া। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যর্থ হলেই কেবল আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। ধন্যবাদ। 

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.