ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনঃ পর্ব ১

ফৌজদারি আইন

এই আর্টিকেলটি আপনি নিশ্চয়ই মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে পড়ছেন। মোবাইল বা কম্পিউটারের বদলতে আপনি অনেক জ্ঞানগত বিষয় যেমন খুব সহজেই পড়তে বা জানতে পারছেন, তেমনি এই মোবাইল বা কম্পিউটারই পারে আপনাকে অনায়াসে জেলে নিয়ে যেতে। জেলে আপনার রহস্যজনক মৃত্যু হবে কিনা সেই বিষয়ে আমরা নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও এই আর্টিকেলে আপনাকে ডিজিটাল মাধ্যমে কি করলে অপরাধ হবে আর কি করলে আপনার জেল জরিমানা হবে তা সহজ ভাষায় বুঝানোর নিশ্চয়তা দিতে পারি। ইউটিউবে যেভাবে বলে যে, না টেনে পুরোটা দেখুন, তেমনি আমিও বলবো, কয়েক লাইন গ্যাপ দিয়ে দিয়ে না পড়ে মনোযোগ দিয়ে পুরো অনুচ্ছেদটাই পড়ুন। কে জানে যে পয়েন্টটাই বাদ দিলেন, সেই পয়েন্টেই অপরাধ করে বসলেন, আর চলে গেলেন জেলে। আসুন দেখি কি আছে আইনে-
*ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৭ এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে ১৭ ধারাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ সম্বন্ধে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে অর্থাৎ এটাকে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

উপধারাগুলোতে বলা হয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে বা জ্ঞাতসারে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে-
→ বেআইনি প্রবেশ করে বা
→ বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন বা করার চেষ্টা করেন, তাহলে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এবার আসুন, শাস্তির বিষয়ে,
≈ কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ করেন, তবে তিনি অনধিক ৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা ২৫ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। উল্লেখ্য, ৭ বছরের অধিক নয় বা সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড।
≈ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে বে-আইনি প্রবেশের শাস্তি সম্বন্ধে তো জানলেন, এবার জানাবো যদি কেউ শুধু বে-আইনি প্রবেশ করেই সন্তুষ্ট না হয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে ক্ষতিসাধন করে বা করার চেষ্টা করে, তাহলে তখন শাস্তি হবে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
কিন্তু যদি সহৃদয়বান ব্যক্তি উপরোক্ত অর্থাৎ ১৭ ধারার কোন অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃ পুন কয়েকবার সংগঠন করে তবে উক্ত সহৃদয়বান ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারেন।



শাস্তি সম্বন্ধে আগেই আলোচনা করে বিষয়টির গুরুত্ব নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। শাস্তির ভয়াবহতা শুনে নিশ্চয় এখন জানতে ইচ্ছে করছে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ বিষয়টা আসলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২ ধারার ‘ছ’ উপধারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, “সরকার কর্তৃক ঘোষিত এরূপ কোন বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল তথ্য পরিকাঠামো যা কোন তথ্য-উপাত্ত বা কোন ইলেকট্রিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চারণ বা সংরক্ষণ এবং যা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংকটাপন্ন হলে-
জননিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্য, জাতীয় নিরাপত্তা বা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বা সার্বভৌমত্বের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
ধরুন সরকার ঘোষণা দিলো যে কোন একটি ওয়েবসাইটের তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কথার কথায় ধরুন, আমাদের এই ওয়েবসাইটটি সরকার কর্তৃক ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর লিস্টে আওতাভুক্ত। এখন আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে বে-আইনি ভাবে প্রবেশ করেন বা প্রবেশ করে এর যেকোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করেন বা করার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনাকে আপনার কৃত অপরাধের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭ বছর বা ১৪ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ২৫ লক্ষ বা ১ কোটি বা ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে, যা কিছু পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, বুঝতে পেরেছেন।

তারপরও আরো সহজ ভাষায় যদি বলতে হয়, তাহলে আমাকে দণ্ডবিধির সহায়তা নিতে হবে। অফলাইনের অপরাধ দিয়ে অনলাইনের অপরাধকে সম্পৃক্ত করে বুঝালে আশা করি বুঝতে অসুবিধা হবে না। দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৪৪১ থেকে ৪৬২ পর্যন্ত অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। ৪৪১ এ বলা হয়েছে, ” কোন ব্যক্তি যদি অপর কোন ব্যক্তির দখলভুক্ত সম্পত্তির মধ্যে বা উপরে প্রবেশ করে এবং কোন অপরাধ অনুষ্ঠানের বা অনুরূপ সম্পত্তি দখলকারী ব্যক্তিকে ভীতি প্রদর্শনের বা অপমান করার বা বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে অনুরূপ প্রবেশ করে অথবা অবস্থান করে। তবে ঐ ব্যক্তি অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ করেছে বলে বিবেচিত হবে।

প্রায় ২০০ বছর আগের আইনটিতে যদিও শাস্তির বিধান খুবই সামান্য তবুও অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশের জন্য অনধিক ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে বা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে । তবে অনধিকার প্রবেশ যদি ঘর বা গৃহ হয় তবে ১ বছর বা ১০০০ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
এখন অনলাইনে কারো কোন ওয়েবসাইটে বে-আইনি ভাবে প্রবেশ করা বা কোন অনিষ্ট সাধন করা বা করানোর চেষ্টা চালানোর শাস্তির পরিমাণটা অনেক বেশি হলেও তা যে জঘন্য অপরাধ তাতে কোন সন্দেহ নাই। কেননা, এই যে কারো ওয়েবসাইট বা ইমেইল বা হালের ফেসবুক হ্যাক করে কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে বে-আইনি ভাবে প্রবেশ করে, তবে সেটা কেউই পছন্দ করবে না। কোন ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করে এর তথ্যে কোন ক্ষতিসাধন করলে সেটাও ঐ প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটা ক্ষতির তা আপনি আমি হিসেব করেও বের করতে পারবো না। থাকতো ব্যাংকের টাকা সরানোর মতো ঘটনা।

তাই, বিজ্ঞানকে আশীর্বাদ হিসেবেই ব্যবহার করা উচিত। অন্যের জন্য অভিশাপ ডেকে আনতে গেলে নিজেই সেই অভিশাপে ধরা পড়বেন। তাই, নিজের স্বাধীনতা চর্চা করতে গিয়ে অন্যের স্বাধীনতাকে যেন আঘাত না করে।

[ বাকি পর্বগুলোঃ  পর্ব ২পর্ব ৩  ]

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.