What are serious injuries or fatal injuries?

কোনগুলোকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাত বলা হয়?

ফৌজদারি আইন

কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি, হাতাহাতি থেকে মারামারির ঘটনা আমাদের দেশে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে থাকে। বেশীর ভাগ মারামারি আবার স্থানীয় পর্যায়েই মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু, কখনো কখনো এই মারামারির ঘটনা থানা, পুলিশ এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এমতাবস্থায় মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় অতি উৎসাহী হয়ে সামান্য আঘাতকে গুরুতর আঘাত হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়ে থাকে। কার্যত গুরুতর আঘাত বলতে কি বুঝায় বা আইনে কখন কোন আঘাত, গুরুতর আঘাত হবে সেটি সম্বন্ধে আমরা ওয়াকিবহাল না। চলুন আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো, গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাত বলতে আসলে কি বুঝায়?
আমাদের দেশের সাধারণত ছোটখাটো কোন গণ্ডগোল বা মারামারি হলে অথবা পারিবারিক কলহের জেরে বা প্রতিবেশীর সাথে কোন সমস্যা হলে যদি ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায় তখন বেশিরভাগ সময় দেখা যায় যে ৩২৫ ধারায় মামলা দিয়ে দেওয়া হয়। ৩২৫ ধারা অর্থাৎ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩২৫ ধারা, যেখানে গুরুতর আঘাত সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

 

যেকোনো ধরনের ছোটখাটো মারামারি বা গণ্ডগোল হলে মামলা জোরদার করার জন্য ৩২৫ ধারার মামলা দিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু ৩২৫ ধারায় মামলা প্রমাণিত হয়ে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে ৩২০ ধারায় যে অপরাধের উল্লেখ রয়েছে সেই অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার জন্য আটটি গুরুতর বা মারাত্মক আঘাত হতে হবে। অর্থাৎ, ৩২০ ধারায় উল্লেখিত ৮ ধরনের আঘাত না থাকলে ৩২৫ ধারার অপরাধ সংগঠিত হবে না।
৩২০ ধারায় মোট আট ধরনের আঘাতকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই আঘাতগুলো ব্যতীত ৩২০ ধারার গুরুতর আঘাত সংগঠন সম্ভব নয়। ৩২০ ধারায় উল্লেখিত ৮ ধরনের গুরুতর আঘাতের কোন একটিও যদি কেউ কাউকে দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ৩২৫ ধারা অনুসারে উক্ত ব্যক্তিকে যে কোন বর্ণনার ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে সাথে অর্থদণ্ড দেওয়া হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, মামলা করার সময় সর্বদা যে ধারাতে অপরাধের শাস্তির বিধান উল্লেখ করা আছে সেই ধারাটি উল্লেখ করে মামলা করা হয়। যার ফলে এখানে ৩২৫ ধারায় মামলা দায়ের করা হবে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাতের জন্য। কিন্তু আইনে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাতকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ৩২০ ধারায়। চলুন জানি ৩২০ ধারায় যে ৮ ধরনের আঘাতকে মারাত্মক বা গুরুতর আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে সে আট ধরনের আঘাত কোনগুলো।

প্রকৃতপক্ষে ৩২০ ধারায় মূলত ৮ ধরনের যে আঘাত রয়েছে সেই আঘাতগুলোর ফলে তার ফলাফল কি হবে সেগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে।

  • প্রথমত, বলা হয়েছে পুরুষত্ব হানি ঘটানো। অর্থাৎ এমন কোন আঘাত যার ফলে ভিকটিমের পুরুষত্বহানী ঘটতে পারে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাত বলা হবে।
  • দ্বিতীয়ত, স্থায়ীভাবে যেকোনো চোখের দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করা হলে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাত বলা হবে।
  • তৃতীয়ৎ, স্থায়ীভাবে যেকোনো কানের শ্রুতি শক্তি নষ্ট করা হলে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্নক আঘাত বলা হবে।
  • চতুর্থত, যে কোন অঙ্গ বা গ্রন্থির অনিষ্ট সাধন করা হলে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্নক আঘাত বলা হবে।
  • পঞ্চমত, যে কোন অঙ্গ বা গ্রন্থির শক্তি ধ্বংস করা বা স্থায়ী ক্ষতিসাধন করা হলে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্নক আঘাত বলা হবে।
  • ষষ্ঠত, মাথা বা মুখমণ্ডলের স্থায়ীভাবে বিকৃতি করা হলে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্নক আঘাত বলা হবে।
  • সপ্তমত, কোন অস্থি বা হাড় বা দাঁতভাঙ্গা বা গ্রন্থি চ্যুত করা হলে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্নক আঘাত বলা হবে।
  • অষ্টমত, যে আঘাত জীবন বিপন্ন করে বা আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অর্থাৎ ভিকটিমকে ২০ দিন পর্যন্ত প্রচণ্ড দৈহিক যন্ত্রণা দেয় বা তাকে সাধারণ কাজ করতে অপারগ করে, তখন তাকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্নক আঘাত বলা হবে।


কোন আঘাতের ফলে উপরোক্ত এই আটটি ফলাফল যদি কারো হয়ে থাকে, তখন সেই আঘাতকে গুরুতর আঘাত বা মারাত্মক আঘাত বলে আখ্যায়িত করা হবে, যার শাস্তি ৩২৫ দ্বারা অনুসারে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

এখন কেউ যদি ৩২৫ ধারার অধীনে গুরুতর আঘাতের জন্য কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে বিবেচনা করতে হবে যে উপরে উল্লেখিত আটটি যে কন্ডিশন দেওয়া রয়েছে এই কন্ডিশনগুলোর অন্তত কোন একটি অনুসারে আঘাত করা হয়েছে কিনা। যদি উপরে আটটি কোন কন্ডিশনে আহত হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আসামীকে ৩২৫ ধারা অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে। কিন্তু, যদি উপরের ৮ টির কোন একটি অনুসারেও আহত না হয় সেক্ষেত্রে আপনার মামলা হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আসামি খালাস পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাই মামলা করার সময় যতটুকু সত্য এবং যতটুকু প্রমাণ করতে পারবেন ঠিক ততটুকু পরিমাণ চার্জ এনে মামলা দায়ের করা উচিত। কারো ভুল পরামর্শে বা প্রলোভনে পড়ে আসামিকে অনেক বেশী শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে সামান্য আঘাতের বিপরীতে গুরুতর আঘাতের চার্জ এনে মামলা দায়ের করলে শেষ পর্যন্ত আসামি খালাস পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অনেক সময় অনেকেই পরামর্শ দিয়ে থাকে এই ধারায় মামলা করো, তাহলে আসামী জামিন পাবে না। তখন আপনি যে ধারার অপরাধ হয়েছে সেই ধারায় মামলা দায়ের না করে অন্য ধারায় মামলা দায়ের করলেন, কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রমাণ করতে পারলেন না; তখন আসামী সাময়িক কিছুদিন জেল খাটলেও আপনার ভুল তথা মিথ্যা মামলা থেকে ঠিকই খালাস পেয়ে যাবে। তাই, মামলা করার সময় অবশ্যই সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক ধারায় মামলা করা উচিত। আর, কোন অপরাধের জন্য কোন ধারায় মামলা দায়ের করবেন, সেই সম্বন্ধে ধারনা রাখতে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের article.legalfist.com ওয়েবসাইটে।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.