Warrant of Arrest

মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াও আপনি যখন গ্রেফতার হতে পারেন

ফৌজদারি আইন

সহজ সরল প্রশ্ন, পুলিশ কখন আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে?
যখন আপনার বিরুদ্ধে কোন মামলা থাকবে এবং সেই অনুযায়ী আদালত আপনাকে গ্রেফতার করার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট পাঠাবেন, তখন উক্ত গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট কার্যকর করার জন্য পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে আসবে। আপনার নামে যদি কোন মামলা না থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার বিরুদ্ধ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্টও থাকার কথা নয়। তাহলে, সহজ সরল উত্তর হচ্ছে, পুলিশ আপনাকে তখনি গ্রেফতার করতে পারে, যখন আপনার বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়।

এখন তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ কি আপনাকে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে না?
স্বাভাবিক উত্তর হচ্ছে, পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকেই গ্রেফতার করতে পারে না। কিন্তু, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুসারে, গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ ৯ শ্রেণীর ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে। অর্থাৎ, গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াও পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে যদি আপনি ঐ ৯ শ্রেণীর ব্যক্তির মধ্যে পড়েন। তাহলে অযথা বিলম্ব না করে আমাদের জানা উচিত, ওরা কারা; অর্থাৎ ঐ ৯ শ্রেণীর ব্যক্তিরা কারা যাদেরকে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াও গ্রেফতার করতে পারেন?

আপনি যে ৯ শ্রেণীর ব্যক্তির মধ্যে পড়লে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াও গ্রেফতার করতে পারেন, সেই শ্রেণী গুলো হলোঃ
প্রথমত, আপনি যদি কোন আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে থাকেন বা জড়িত রয়েছেন বলে আপনার বিরুদ্ধে যুক্তিযুক্ত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বা বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পাওয়া গিয়েছে বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, আপনার কাছে যদি আইন সংগত কারণ ছাড়া ঘর ভাঙ্গার কোন সরঞ্জাম থাকে।
তৃতীয়ত, ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় বা সরকারের আদেশে আপনাকে একজন অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
চতুর্থত, আপনার দখলে বা আপনার অধিকারে এমন কোন জিনিস পাওয়া যায় যা চোরাই মাল বলে যুক্তিসঙ্গত ভাবে সন্দেহ করা হলে এবং উক্ত চোরাই মাল সম্পর্কে কোন একটি অপরাধ আপনি করেছেন বলে যুক্তিসঙ্গত ভাবে সন্দেহ করা হলে।
পঞ্চমত, আপনি যদি কোন পুলিশ অফিসারকে তার কার্যসম্পাদনে বাঁধা প্রদান করেন অথবা আপনি যদি আইনানুগ হেফাজত থেকে পলায়ন করেন অথবা পলায়নের চেষ্টা করেন।
ষষ্ঠত, আপনাকে যদি বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে পলায়নকারী মর্মে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ করা হয়ে থাকে।
সপ্তমত, বাংলাদেশে করা হলে অপরাধ হিসেবে শাস্তিযোগ্য হতো এমন কোন কাজ যদি আপনি বাংলাদেশের বাহিরে করে থাকেন।
অষ্টমত, আপনি যদি একজন মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির দ্বারা ৫৬৫ (৩) ধারার আওতায় প্রস্তুতকৃত কোন নিয়ম লঙ্ঘন করেন।
নবমত, যদি আপনাকে গ্রেফতারের জন্য কোনো পুলিশ অফিসারের নিকট অনুরোধ করা হয়ে থাকে।
আপনি যদি উপরিউক্ত ৯ শ্রেণীর কোন একটি শ্রেণীতে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়াও গ্রেফতার করতে পারবে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, উক্ত ৯ শ্রেণীর মধ্যে না পড়লে কি পুলিশ কাউকে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারবে?
উত্তর হচ্ছে, আইনত পারবে না। পুলিশ যদি অন্যায় ভাবে কাউকে গ্রেফতার করে, সেটা ভিন্ন কথা; কিন্তু আইনত পারবেন না। 11 DLR 131 (WP) এবং PLD 1961 Lah 900 মামলায় বলা হয়েছে যে, যৌক্তিক সন্দেহের ভিত্তিতে কোন ব্যক্তিকে কোন পুলিশ অফিসার গ্রেফতার করতে পারেন কিন্তু যৌক্তিক সন্দেহ হোক বা না হোক এরূপ ভাবে কোন সাধারণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন না। তাই, ভয়ের কিছু নেই।
তবে, আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এবং অনেক আইন বিশারদের মতে, ফৌজদারি আইন সবসময় স্পষ্ট থাকা উচিত, যাতে আইনের ভাষা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয়। আইনের প্রত্যেকটি ধারা এবং ধারার মধ্যে ব্যবহৃত শব্দগুলো খুবই স্পষ্ট হওয়া উচিত, যাতে নাগরিকরা কোনটা অপরাধ আর কোন অপরাধ নয়, সেটা সহজেই বুঝতে পারেন এবং আইন প্রয়োগকারী গোষ্ঠী যত্রতত্র আইনের অপব্যবহার করতে না পারে। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার ভাষা নিয়েও বেশ সমালোচনা রয়েছে, বিশেষ করে এর শব্দের ব্যবহারের অস্পষ্টতার কারণে।
Bangladesh Legal Aid & Services Trust & Others vs Bangladesh, 55 DLR (HCD) 363 মামলায় বলা হয়েছে যে, ধারা ৫৪ এ জড়িত শব্দের ব্যবহার একটি অস্পষ্ট শব্দ যা কোন আমলে নেওয়ার অপরাধের ক্ষেত্রে জড়িত মর্মে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার অবাধ ক্ষমতা পুলিশ কর্মকর্তাকে দান করা হয়েছে।
তাই, নাগরিকদেরকে আইন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে হলে শুরুতেই আইনকে স্পষ্ট করতে হবে, যাতে এর অপব্যবহার কেউই করতে না পারে। আর একজন সচেতন এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে, আইন জানা এবং সেই অনুযায়ী আইন মান্য করা। পুলিশ কর্তৃক বিনা গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত ৯ শ্রেণীর কার্য থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা।
গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্টে গ্রেফতার হওয়ার ব্যক্তির কি কোন আইনগত অধিকার নেই?
অবশ্যই অধিকার রয়েছে। পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা বা এরেস্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারে, কিন্তু এর মানে তো এটা হয় যে, উক্ত ব্যক্তির কোন আইনগত অধিকার নেই। উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করতে হবে। তারপর তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। Mehnaz Sakib vs Bangladesh, 52 DLR (2000) (HCD) 526 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে যদি ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুসারে গ্রেফতার করা হয়, সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করতে হবে, এই দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ সেটি না করার অর্থ হচ্ছে, আটককারী ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন। সুতরাং, সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে আপনাকে আদালতে নেওয়া হবে এবং আপনি জামিনসহ আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি আপনার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
একটা মজার কেস স্টাডি দিয়ে শেষ করি, 50 Cr LJ 578 মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে, কোন পুলিশ অফিসারের সাথে কোন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে, যার ফলে পুলিশ অফিসার বিনা ওয়ারেন্টে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল, সেক্ষেত্রে এটি প্রমাণ করার জন্য খুবই উচ্চমানের সাক্ষ্য প্রয়োজন হবে যে, পুলিশ অফিসার সৎ বিশ্বাসে কাজটি সংঘটিত করিয়াছেন।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.