সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ: বলপূর্বক আদায়; ৩৮৩

Property Crimes: Extortion; 383

চুরির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম যে, কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির দখল থেকে তার অস্থাবর সম্পত্তি তার সম্মতি ব্যতীত অসাধু উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করলে, সেটি চুরি বলে গণ্য হবে। চুরির ক্ষেত্রে আমরা কোনো প্রকার বল প্রয়োগ বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের উপাদান দেখি নাই। চুরি অনেকটা নীরবেই সম্পাদিত হয়ে থাকে। অস্থাবর সম্পত্তির মালিকের অগোচরেই সাধারণত চুরি সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু, স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তির মালিককে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভয় দেখিয়ে কোন সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত বা স্বাক্ষরিত বা সিলমোহরকৃত কোন কিছু যা মূল্যবান জামানতে রূপান্তরিত হতে পারে তা হস্তান্তর করতে প্রবৃত্ত করা হয়, সেক্ষেত্রে সেটিকে বলপূর্বক আদায় বা ইংরেজিতে Extortion (এক্সটরশন) বলা হবে। বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION এর সবচেয়ে প্রচলিত প্রতিশব্দ হচ্ছে ছিনতাই। আবার কেউ কেউ একে চাঁদাবাজি হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকে। 

দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৮৩ ধারায়, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কার প্রতি ক্ষতির ভয় দেখায় এবং তা দ্বারা উক্ত ভয় প্রদর্শিত ব্যক্তিকে কোন ব্যক্তির কাছে কোন সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত বা স্বাক্ষরিত বা সিলমোহরকৃত কোনো কিছু যা মূল্যবান জামানতে রূপান্তরিত হতে পারে তা হস্তান্তর করতে প্রবৃত্ত করে, সেই ব্যক্তি বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই করে বলে গণ্য হবে।

উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এমন সময় কোন ব্যক্তি আপনাকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। তার বিনিময়ে আপনার কাছে গচ্ছিত টাকা কিংবা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনও মূল্যবান সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে চায়। সেক্ষেত্রে সেটি বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই বলে গণ্য হবে। ধারালো অস্ত্র বা মৃত্যুর ভয়ই দেখাতে হবে তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো এমনও হতে পারে যে, আপনার কাছে এমন কোন মূল্যবান সম্পত্তি রয়েছে যেটি কোন ব্যক্তি দাবি করছে, কিন্তু আপনি সেটি দিতে না চাইলে সে আপনার বিরুদ্ধে কোনো কুৎসা রটাবে বা আপনার মানহানিকর কোনও কিছু করবে বলে ভয়ভীতি দেখায়; সেক্ষেত্রে আপনি তাকে সম্পত্তি দিয়ে দিলে সেটিকে বলপূর্বক আদায় হিসাবে গণ্য করা হবে। কারণ ওই ব্যাক্তিকে আপনি সেটি স্ব-ইচ্ছায় দেননি। সে আপনার কাছ থেকে বল পূর্বক আদায় করে নিয়েছে। 

আবার ধরুন, A হুমকি দেয় Z এর বিষয়ে একটি মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করবে যদি না Z তাকে টাকা দেয়। সে এভাবে Z কে তাকে টাকা দিতে প্ররোচিত করে। ক বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই করেছে।

আবার, A Z কে হুমকি দেয় যে সে Z এর সন্তানকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখবে; যতক্ষণ না Z স্বাক্ষর করবে এবং A কে একটি প্রমিসরি নোট ডেলিভার করবে যাতে Z থেকে A কে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করে এবং নোটটি বিতরণ করে। A বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই করেছে।

 

চুরির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম চুরির পাঁচটি উপাদান রয়েছে। ঠিক তেমনি বলপূর্বক গ্রহণের ক্ষেত্রেও দুটি উপাদান রয়েছে। 

প্রথম উপাদান হচ্ছে, কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি সাধনের ভয়ে আতঙ্কিত করতে হবে এবং 

দ্বিতীয়ত, ভয়ে আতঙ্কিত ব্যক্তিকে সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত হস্তান্তর করতে অসাধু ভাবে প্রবৃত্ত করতে হবে। 

দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৮৪ ধারা অনুসারে বলপূর্বক আদায়ের অপরাধে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অনধিক তিন বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে বা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। 

উক্ত অনুচ্ছেদে আমরা বারংবার চুরির অপরাধের উদাহরণ টানার চেষ্টা করেছি। এর কারণ হচ্ছে, চুরি এবং বলপূর্বক আদায় এই দুটি অপরাধ থেকেই উদ্ভব হয় দস্যুতার অপরাধটি। 

দস্যুতা স্বতন্ত্র কোনো অপরাধ নয়, সদস্যতা অপরাধটি হচ্ছে, চুরি এবং বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই  বা বলপূর্বক আদায় এই দুটি অপরাধের বর্ধিত ভার্সন। পরবর্তী অনুচ্ছেদে আমরা জানার চেষ্টা করব দস্যুতা কাকে বলে এবং চুরি কখন দস্যুতাতে রূপ নেয় এবং বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই  বা আদায় কীভাবে দস্যুতাতে রূপ নেয়। 

তাছাড়া চুরির সাথে বলপূর্বক গ্রহণের কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন চুরির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম চুরি, অস্থাবর সম্পত্তি ব্যতীত চুরি সম্ভব নয়৷ অস্থাবর সম্পত্তি, যেটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় বা ইংরেজিতে যাকে বলে  movable property. চুরির ক্ষেত্রে অবশ্যই চুরির উপাদানটি অস্থাবর সম্পত্তি হতে হবে। কিন্তু বলপূর্বক গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থাবর অস্থাবর উভয় ধরনের সম্পত্তি হতে পারে। অর্থাৎ, আপনার পকেটে থাকা মোবাইল টাকা, স্বর্ণলংকার মূল্যবান কোনো সামগ্রী যেমন বলপূর্বক আদায় হতে পারে একইভাবে  স্থাবর সম্পত্তি যেমন আপনার বাড়ি সেটিও চাইলে বলপূর্বক আদায় বা বলপূর্বক আদায় বা EXTORTION বা ছিনতাই  হতে পারে। 

তাছাড়া চুরির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম, যে ব্যক্তির কাছ থেকে চুরি করা হচ্ছে তার ওপর কোনো বল প্রয়োগ করা হচ্ছে না। অনেকটা তার অজান্তেই তার অস্থাবর সম্পত্তি চুরি করা হচ্ছে। কিন্তু, বলপূর্বক আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বলপ্রয়োগ করতে হবে যার কাছ থেকে স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি আদায় করা হচ্ছে। 

চুরির উপাদানের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম যে, যার কাছ থেকে চুরি করা হচ্ছে, তার সম্মতি থাকে না সম্পত্তি হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে। কিন্তু বলপূর্বক আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি এক্ষেত্রে, যার কাছ থেকে সম্পত্তি আদায় করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তির সম্মতি রয়েছে। যদিও সম্মতিটি তার কাছ থেকে বলপ্রয়োগ করে আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু, চুরির ক্ষেত্রে এই সম্মতিটুকুও থাকে না

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

ধারা ৪৯৬: জামিন – অধিকার না অনুগ্রহ? 

জামিন কি অপরাধীর আশ্রয় নাকি ন্যায়বিচারের হাতিয়ার?

কারাগারে নারীদের বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তির উপায়