তামাদি আইন

তামাদি মেয়াদ গণনা পদ্ধতিঃ পর্ব ০২

তামাদি আইন বিবিধ আইন

গত পর্বে আমরা তামাদির মেয়াদ গণনার রীতিনীতি নিয়ে ৫ টি পয়েন্ট আলোচনা করেছিলাম। আমরা আজ বাকী পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো তামাদি আইনের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে। রীতিনীতি সমূহ:

৬। কোন ব্যক্তি যদি কোন সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করে, তবে ঐ নিলাম সম্পত্তির দখল পাওয়ার জন্য মামলা দায়ের করার তামাদি মেয়াদ থেকে উক্ত নিলাম রদ বা বাতিল করার জন্য যদি কোন আইনানুগ কার্যধারা পরিচালিত হয়, তবে কার্যধারায় যতটুকু সময় ব্যয় হয়েছে, তা ঐ নিলামের সম্পত্তিতে দখল পাওয়ার মামলার তামাদি মেয়াদ থেকে বাদ দেওয়া হবে। বিষয়টা কারো কারো কাছে এখনো জটিল মনে হতে পারে। আমার বুঝানোর দক্ষতাও হয়ত আরো ইম্প্রুভ করতে হবে। চলুন আরেকবার ট্রাই করি। পাঠক আপনিও একটু মনোযোগ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করুন বিষয়টা সহজেই বোধগম্য করার জন্য। ধরুন, আপনার একটি জায়গা আপনি ব্যাংক মর্গেজ রেখে ঋণ/লোন নিয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত আপনি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মন খারাপের কিছু নেই, এটা কেবলই কল্পনা। এখন, ব্যাংক যেহেতু তাদের ঋণের টাকা তুলতে হবে, তখন আপনার জমি দিয়ে তো ওরা আর ধান চাষ করবে না, তাদের দরকার নগদ অর্থ, তাই তারা আপনার জমিটি বিক্রি করবে। ব্যাংক এই ধরণের মর্গেজ সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি করে যাতে তাদের পাওনা অর্থ তুলতে সক্ষম হয়। এখন নিলামে আমি আপনার জমিটি ক্রয় করে নিলাম।

যেহেতু, আর্টিকেলটা লিখছি আমি আর পড়ছেন আপনি, তাই উদাহরণটা আমার আর আপনার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকুক, তাতে আমার যেমন বুঝাতে সহজ হবে, তেমনি আপনারও বুঝতে সহজলভ্য হবে। এবার আসুন, আমিতো নিলামের মাধ্যমে আপনার জমি ক্রয় করে নিলাম, এখন জমিতে আমাকে দখলে যেতে হবে না?- ধরুন আপনি একটু ভিলেন টাইপের লোক, থাকে না কিছু ঋণখেলাপী টাইপের লোক। যারা ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ তো করেই না, তার উপর মর্গেজ জমির দখলও ছাড়তে চায় না। এমতাবস্থায়, টাকা দিয়ে নিলামে জমি ক্রয় করে যদি আমি দখলে যেতে না পারি, তাহলে আমার কি অবস্থা হবে। তখন আমি বাধ্য হয়ে দখল পুনরুদ্ধারের মামলা দায়ের করতে হবে। এখন, আমি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করার আগে আপনি যদি নিলাম রদের মামলা করেন, অর্থাৎ নিলাম বাতিল চেয়ে মামলা করেন, সেই মামলায় আপনি যে পরিমাণ সময় নষ্ট করবেন (আপনার জন্য সঠিক হলেও আমার জন্য ঠিকই সময় নষ্ট) সেই সময়টা আমি দখল পুনরুদ্ধারের মামলা করার জন্য যে তামাদি মেয়াদ পাবো, সেখান থেকে বাদ দেওয়া হবে। যেহেতু, আমি নিলামে জমিটি ক্রয় করার পরপরেই জমির দখলের জন্য মামলা করার কথা; কিন্তু যেহেতু আপনি নিলাম রদের জন্য মামলা করে ঐ দিকে কিছু সময় আটকে দিয়েছেন সেহেতু ঐ সময়টুকু আমার দখল পুনরুদ্ধারের মামলার তামাদি থেকে বাদ দিতে হবে। নিলাম রদের জন্য দায়ের করা মামলার কার্যধারা যতদিন চলবে, ঠিক ততদিন উক্ত দখল পুনরুদ্ধারের মামলার তামাদি থেকে বাদ দিতে হবে।

 

৭। এবার আসুন মৃত ব্যক্তির তামাদি মেয়াদ সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে। একজন ব্যক্তি কোন মামলা বা দরখাস্ত দাখিল করার জন্য অধিকারী হওয়ার পূর্বেই যদি মৃত্যুবরণ করে, তবে মৃত ব্যক্তির আইনানুগ প্রতিনিধি ঐ মামলা দায়ের বা দরখাস্ত দাখিল করার জন্য যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত তামাদি গণনা বন্ধ থাকবে। আইনানুগ প্রতিনিধি যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়ার সময় থেকে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে। একইভাবে কারো বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অধিকার অর্জনের পূর্বেই যদি ঐ ব্যক্তি মারা যায়, তবে ঐ মুহূর্ত থেকেই তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে।
অর্থাৎ, আপনি কারো বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অধিকার অর্জনের পূর্বেই যদি মৃত্যুবরণ করেন, তবে আপনার বৈধ প্রতিনিধি মামলা বা দরখাস্ত দাখিলের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়ার পর তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হবে। আবার, আপনি যার বিরুদ্ধে মামলা বা দরখাস্ত দায়ের করার জন্য অধিকারী হওয়ার আগেই যদি উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার আইনানুগ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে যদি মামলা বা দরখাস্ত করা যায়, তবে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে। অন্যথায়, তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে না।

তবে, এই পয়েন্টে মৃত ব্যক্তির আইনানুগ প্রতিনিধি দ্বারা মামলা দায়ের বা মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের তামাদির সুযোগ সুবিধা সম্পত্তি প্রয়োগের অগ্রাধিকার প্রয়োগের মামলা অথবা স্থাবর সম্পর্কিত দখল বা বংশগত কোন পদলাভ সম্পর্কিত মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ, অগ্রক্রয়ের যে সুবিধা রয়েছে, তখন মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধি যেমন সুযোগ পাবে না, তেমনি মৃত ব্যক্তির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে ও তামাদি মেয়াদের সুবিধা পাবে না। স্থাবর সম্পত্তির দখল এবং কোন বংশগত পদলাভ করার ব্যাপারেও এইভাবে আইনানুগ প্রতিনিধির মাধ্যমে কোন তামাদি মেয়াদের সুযোগ পাবে না আবার আইনানুগ প্রতিনিধির বিরুদ্ধেও সুযোগ পাবে না। অর্থাৎ, তামাদি মেয়াদ গণনা বন্ধ থাকবে না। আইনানুগ প্রতিনিধি যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া মাত্রই তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে।

উল্লেখ্য, তামাদি আইনের ৯ ধারার কথা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। একবার যদি তামাদির মেয়াদ গণনা শুরু হয়, তবে তা আর কোন অক্ষমতা বা অপারগতার জন্য তামাদির মেয়াদ চালু হওয়ার সাথে সাথেই মামলা দায়ের বা দরখাস্ত দাখিল করতেই হবে। কখন বাদী মারা যায় বা বিবাদী মারা যায়, তার কোন নিশ্চয়তা নেই, তাই মামলা করার জন্য অধিকার সম্পন্ন হওয়া মাত্রই মামলা দায়ের করতে হবে। অলসকে আইন সহয়তা করে না; এটা মাথায় রাখলে আর কোন সমস্যা বা জটিলতার জন্ম নিবে না।
আজকের পর্ব এখানেই সমাপ্ত। আগামী পর্বে বাকী পয়েন্ট গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

 

[ বাকি পর্বগুলোঃ পর্ব ১ ।  পর্ব ৩পর্ব ৪  ]

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.