Mediation – কি, কেন, কিভাবে?

কি
Mediation, যার বাংলা হচ্ছে মধ্যস্থতা। কোন একটি দেওয়ানী মামলার বিচারকার্য আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত উভয় পক্ষের প্লিডিংস দেখার পর শুনানিতে যাওয়ার আগেই উভয় পক্ষকে উক্ত মামলাটি আদালত ব্যতীত বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করতে বলবেন। এটা ২০১২ সালে দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ সংশোধনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কেন
Mediation বা মধ্যস্থতা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মামলা করার মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ রাগ, ক্ষোভ থাকে একে অন্যের প্রতি সেটিরই বহিঃপ্রকাশ মামলার আরজি আর লিখিত জবাবের মধ্যে প্রকাশ পায়। একটি মামলা করার অর্থ হচ্ছে, বিবাদীর কাছে আমার উক্ত দাবী রয়েছে বা প্রতিকার রয়েছে। উক্ত দাবী বা প্রতিকার পেলে বাদীর মামলার আর প্রয়োজন হচ্ছে না। কিন্তু, আদালতে মামলার জট এতো বেশী যে, নতুন করে কোন মামলা গ্রহণ না করলেও কয়েক দশক লেগে যাবে চলমান মামলা গুলো নিষ্পত্তি করার জন্য। তাছাড়া চলমান জটের কারণে নতুন কোন মামলা নেওয়া বন্ধ করা না গেলেও নতুন মামলা নিষ্পত্তি করতে কয়েক বছর লেগে যাচ্ছে। যার ফলে কোন মামলা যদি আদালতের পুরো প্রসিডিং বা প্রক্রিয়া না ঘুরে সরাসরি উভয় পক্ষ বসে নিজেদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় সমাধান করে পেলে তাহলে কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে অল্প টাকা খরচে উভয় পক্ষের বিরোধটি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি Mediation বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায় তা হচ্ছে, পরস্পরের সম্পর্ক। দেওয়ানী আদালতের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে যখন কোন পক্ষ জয় লাভ করে তখন অপর পক্ষ আবার চলে যায় আপীল আদালতে। আপীল শেষ হলে আবার রিভিউ বা রিভিশন। এক কথায় চলতেই থাকে তাদের মামলার যুদ্ধ। দীর্ঘ সময় মামলা শেষ হলেও কোন না কোন পক্ষ তো জয় লাভ করে, যার ফলে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কোন মতেই ঠিক হয় না। পরস্পর পরস্পরের প্রতি শত্রুতা বাঁচিয়ে রাখে আর তা চলতে থাকে জেনারেশনের পর জেনারেশন; বংশীয় পরম্পরায় চলতে থাকে তাদের এই শত্রুতা। কেননা, তাদের মধ্যে এক দল জয় লাভ করেছে, অন্য দল হেরে গেছে। যার ফলে এই এক ইস্যু নিয়ে তাদের মধ্যে আরও অনেক বিষয় নিয়েই বিরোধ তৈরি হয়। কিন্তু, Mediation বা মধ্যস্থতার কারণে কোন পক্ষই একচেটিয়া ভাবে জয় লাভ করে না, বরং উভয় পক্ষই জয় লাভ করে যাকে আমরা বলে থাকি Win-Win Game, উভয় পক্ষই পরস্পর পরস্পরকে ছাড় দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করে এবং সবশেষে উভয় পক্ষকে মিলিয়ে দেওয়া হয় যাতে আর এই বিষয়ে কোন সমস্যা সৃষ্টি না করে। এই জন্যই Mediation বা মধ্যস্থতাকে আদালত বাধ্যতামূলক করেছে, যা সত্যিকার অর্থেই সকলের জন্যই উপকারী।



কিভাবে
দেওয়ানী এবং ফৌজদারি মামলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন। আজকে আমরা শুধু দেওয়ানী মামলার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা করবো যাকে বলা হয় Mediation বা মধ্যস্থতা।
Mediation বা মধ্যস্থতা করার জন্য আদালত বলে থাকেন যখন বিবাদী তার লিখিত জবাব দাখিল করেন। সাধারণত, লিখিত জবাব দাখিলের পর পূর্বে ইস্যু গঠন করা হতো, কিন্তু ২০১২ সালের সংশোধনের পর থেকে Mediation বা মধ্যস্থতাকে বাধ্যতামূলক করায় এখন লিখিত জবাবের পরই আদালত ১০ দিনের সময় দিবেন Mediator বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আদালতের দেওয়া ১০ দিনের মধ্যে পক্ষগণ Mediator বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দিতে না পারলে আদালত নিজে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে Mediator বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দিয়ে দিবেন। এখন কথা হচ্ছে, কে হবেন এই Mediator বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ?

  • অবসর প্রাপ্ত বিচারকদেরকে Mediator বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
  • দুই পক্ষের নিয়োগ কৃত আইনজীবী ব্যতীত তৃতীয় একজন আইনজীবীকে Mediator বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
  • আর এই দুই অপশনের চেয়েও কার্যকরী হচ্ছে প্রত্যেক জেলা জজ কর্তৃক প্রণয়নকৃত প্যানেল থেকে Mediator বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দেওয়া।
  • আমি চাইলে কি একাধিক Mediator বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ দিতে পারবো?- জি হ্যাঁ পারবেন। তবে যা পারবেন না তা হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে রয়েছেন এমন কাউকে Mediator বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন না।

Mediation বা মধ্যস্থতা করার জন্য আদালত প্রথমে ৬০ দিনের সময় দিয়ে থাকেন। কিন্তু ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে পরে আরও ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়। মোট ৯০ দিনের মধ্যে Mediation বা মধ্যস্থতা করতে হয় এবং এর প্রতিবেদন আদালতের কাছে জমা দিতে হয় যার ভিত্তিতে আদালত পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে আদেশ বা ডিক্রি প্রদান করবেন। এই ধরনের ডিক্রিকে আপোষ ডিক্রিও বলা হয়ে থাকে। Mediation বা মধ্যস্থতার ভিত্তিতে আদালত যে ডিক্রি দিবেন তার বিরুদ্ধে কোন আপীল চলবে না। আর যদি Mediation বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে কোন বিরোধ নিষ্পত্তি না হয় তাহলে ঐ মামলা যেখানে বন্ধ হয়েছিল সেখান থেকেই চালু হবে কিন্তু পূর্বের বিচারক আর ঐ মামলা শুনবেন না। একই এখতিয়ার সম্পন্ন অন্য আদালতে তখন ঐ মামলার বিচারকার্য পরিচালিত হবে। মজার বিষয়ে, Mediation বা মধ্যস্থতা করার মাধ্যমে যদি বিরোধের নিষ্পত্তি হয়ে যায় তবে প্রথমেই মামলার করার জন্য বাদী আদালতে যে কোর্ট ফী জমা দিয়েছিলেন, সেই কোর্ট ফী তিনি ফেরত পাবেন।

শুধু যে আদি আদালতে Mediation বা মধ্যস্থতা করা যায় তা কিন্তু নয়, কোন মামলা নিম্ন আদালতে রায় দেওয়ার পর আপীল আদালতে যখন মামলাটি আপীলের জন্য যাবে তখনও Mediation বা মধ্যস্থতা করার জন্য পাঠাতে পারেন।
অনেকেই অনেক সময় বলে থাকে যে মামলা তো এই স্টেজে চলে গেছে বা ঐ পর্যায়ে চলে গেছে এখন আর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি করা যাবে না। এটা ভুল ধারণা, মামলার যেকোনো পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য মামলাটি তুলে নেওয়া যায়।
যেতে যেতে বলতে চাই, আদালতের সময় নষ্ট না করে, নিজের অর্থের অপচয় না করে এবং সর্বোপরি নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট না করে Mediation বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করুন; দুইজনই Win-Win Game খেলুন।

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

ব্ল্যাংক চেক নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন না তো?

অনলাইনে কেউ ভয়, বিরক্ত বা আক্রমণ করলে করণীয়

হানি ট্র্যাপ-মানি ট্র্যাপ: ভিকটিমের করনীয় কি?