How to become a Lawyer in BD

আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা

বিবিধ আইন

আইনজীবীরা আমাদের সমাজকে বিভিন্ন উপায়ে আরও উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইনকে মান্য করার জন্য এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আইনজীবীরা সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ। যে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর উপর অন্যায় করা হয়, তাদের রক্ষায় কাজ করা এবং তাদেরকে আইনী ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে পরামর্শ দেয়াই আইনজীবীদের দায়িত্ব।

Collins English Dictionary অনুযায়ী, Lawyer বা একজন আইনজীবী এমন একজন ব্যক্তি যিনি আইন সম্পর্কে লোকদের পরামর্শ দেওয়ার এবং আদালতে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য যোগ্য।

আইনজীবীরা একদম প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীদের অধিকারের পক্ষে এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে সমাজে সমতা বজায় রাখতে কাজ করে। প্রত্যেকেরই আইনী সুরক্ষা এবং ন্যায়বিচারের সমান অধিকার যে রয়েছে, তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

Oxford Learner’s Dictionary অনুযায়ী, Lawyer বা আইনজীবী এমন একজন ব্যক্তি যিনি আইন সম্পর্কে লোকদের পরামর্শ এবং আদালতে তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং আইনী দলিল লেখার জন্য প্রশিক্ষিত এবং যোগ্য।

আইনজীবীরা আইনের শাসনকে সমর্থন করে এবং আইনী ব্যবস্থাটিকে দুর্নীতি ও অপব্যবহার থেকে রক্ষা করে আইনের নিয়ম প্রচার ও বজায় রাখতে সহায়তা করে। আইনজীবীরা নিশ্চিত করে যে আইন সকলের জন্য সুষ্ঠু এবং সমতুল্যভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তারা আইনী ব্যবস্থার অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য কাজ করে থাকেন।

Cambridge Dictionary অনুযায়ী, Lawyer বা আইনজীবী এমন একজন যার কাজ হল, আইন সম্পর্কে লোকদের পরামর্শ দেওয়া এবং আদালতে তাদের পক্ষে কথা বলা।

আইনজীবীরা প্রায়শই নাগরিক ব্যস্ততা এবং অংশগ্রহণের প্রচারের জন্য সম্প্রদায় সংগঠন এবং ব্যক্তিদের সাথে কাজ করেন থাকেন। আইনজীবীরা তাদের আইনী অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে লোকদের শিক্ষিত করতে এবং আইনী ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে থাকেন। 

বাহ্যিক ভাবে যদিও মনে হয় যে, আইনজীবীরা শুধুমাত্র নিজের পকেট ভারী করার জন্য আইন পেশা পরিচালনা করে থাকেন, সেটি আদৌতে উপজাত (byproduct)। মূলত আইনজীবীদেরকে বলা হয়ে থাকে, সামাজিক ইঞ্জিনিয়ার যারা সমাজের সমস্যাগুলোকে প্রকৌশলীর মত মেরামত করে থাকেন।

এতদূর পড়ার পর যদি আপনার নিজের আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে হয় বা আপনার সন্তানকে বা পরিবারের কাউকে বা আত্মীয় স্বজন কাউকে আইনজীবী বানানোর ইচ্ছে জন্মে তাহলে চলুন আজকে জানি, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতাগুলো নিয়ে।

আইনজীবী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিয়ে The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Orders, 1972 এর ২৭ অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। ২৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে একজন ব্যক্তি অ্যাডভোকেট হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন, যদি তিনি নিম্নের শর্তগুলো পূরণ করেন। শর্তসমূহঃ

১। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে,

২। তিনি ২১ বছর বয়স পূরণ করেছেন,

৩। তিনি নিম্নের ৫ টি উপায়ের যেকোনো একটি উপায়ে আইনের ডিগ্রী অর্জন করেছেন,

  • বাংলাদেশের ভিতরের কোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে; বা
  • ১৯৭১ সালের ২৬ই মার্চের আগে পাকিস্তানের কোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে; বা
  • ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট-এর পূর্বে the Government of India Act, 1935-4 সংজ্ঞায়িত ভারতীয় সীমানার যেকোন এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে বা
  • বার কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত বাংলাদেশের বাইরের কোন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছে বা
  • তিনি ব্যারিষ্টার হলে

৪। তিনি নিবন্ধন ফি পরিশোধ করেছে এবং বার কাউন্সিল কর্তৃক বিধিতে উল্লেখিত অন্যকোন শর্ত প্ৰতিপালন করেছে এবং

৫। বার কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বা পাস করেছে।

 

উপরের ৫ টি শর্ত পূরণ করতে পারলে একজন ব্যক্তির আইনজীবী হওয়ার পথে আর কোন বাঁধা নেই। এরপর থেকে তিনি আইন পেশা চর্চা করতে পারবেন কোন প্রকার বাঁধা ব্যতীত।

তবে একটি ব্যতিক্রম রয়েছে, যদি কোন মোক্তার ৪ নাম্বার পয়েন্টে উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা আইনে ডিগ্রী অর্জন ছাড়াও আইনজীবী হতে পারবেন যদি বাকি ৪ টি পয়েন্টে উল্লেখিত শর্তগুলো পূরণ করতে পারেন। তবে এর জন্য মোক্তারকে সর্বনিম্ন ৭ বছর যাবত মোক্তার হিসাবে কাজ করতে হবে।

যাই হোক, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা যেমন আছে, তেমনি কিছু অযোগ্যতাও আছে। অ্যাডভোকেট হওয়ার অযোগ্যতাগুলো The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Orders, 1972 এর ২৭(৩) অনুচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি অ্যাভোকেট হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার অযোগ্য হবেন যদি

  • তিনি কোন সরকারী বা সরকারী বিধিবদ্ধ সংস্থার চাকুরী হতে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে অপসারিত বা বরখাস্ত হয় এবং অপসারণের তারিখ হতে ২ বছর অতিক্রম না করেন। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি যদি সরকারী কোন চাকরীতে ছিলেন এবং সেখানে নৈতিক স্খলনের অভিযোগে চাকরী থেকে অপসারিত বা বরখাস্ত করার পর ২ বছর এখনো হয়নি।
  • তিনি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দণ্ডিত হয় এবং দণ্ডিত হওয়ার তারিখ হতে ৫ বছর বা সরকার কর্তৃক অফিসিয়াল গেজেটে নোটিফিকেশন দ্বারা সরকার যেমন কম মেয়াদ উল্লেখ করে এমন সময় অতিবাহিত না হলে। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলনের অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন এবং সেই দণ্ডিত হওয়ার তারিখ থেকে এখনো ৫ বছর অতিবাহিত হয়নি।

 

উপরের ৫ টি যোগ্যতা যার আছে এবং এই ২ টি অযোগ্যতা যার নেই, তার আইনজীবী হওয়ার পথে কোন বাঁধা নেই। উপরে উল্লেখিত যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা প্রথমত নিম্ন আদালতের আইনজীবী হওয়ার জন্য হলেও এই যোগ্যতা ও অযোগ্যতাগুলো হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

 

সবশেষে, আইনজীবীরা সামাজিক ন্যায়বিচারে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন, তারা সমাজের কাঠামোগত সমস্যা গুলো যেমন দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং পরিবেশগত অবক্ষয়ের সমাধান করতে কাজ করে থাকেন। মাজিক পরিবর্তনের প্রচার এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির জীবন উন্নত করতে আইনজীবীরা অলাভজনক সংস্থা, অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বা সরকারী সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করতে থাকেন। তাই, যোগ্য লোকদেরকেই এই পেশায় আশা উচিত বা এই পেশায় আসলে সমাজের উন্নতির জন্য নিজের যোগ্যতা অর্জন করা উচিত।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.