Divorce While Pregnant

গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক এবং সমঝোতা

পারিবারিক আইন

গত পর্বে আমরা জেনেছিলাম যে, তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত একটি নোটিশ পাঠাতে হয় যাকে তালাক দেওয়া হচ্ছে তার ঠিকানা বরাবর এবং আরেকটি নোটিশ পাঠাতে হয় সালিশি পরিষদের ঠিকানায়।
অর্থাৎ, স্বামী যদি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়, সেক্ষেত্রে স্ত্রীর ঠিকানায় একটি তালাক নোটিশ পাঠাতে হবে এবং সালিশে পরিষদের ঠিকানায় আরেকটি তালাক নোটিশ পাঠাতে হবে।
একই ভাবে স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দিতে চায়, সেক্ষেত্রে স্বামীর ঠিকানায় একটি তালাক নোটিশ পাঠাতে হবে এবং আর একটি তালাক নোটিশ সালিশি পরিষদে পাঠাতে হবে।
তালাক নোটিশ পাঠানোর পর ৯০ দিনের মধ্যে যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা না হয় তখন তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। আইন অনুযায়ী সালিশি পরিষদ উক্ত ৯০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। যদি সমঝোতা করার ক্ষেত্রে সক্ষম বা কৃতকার্য হয়, সেক্ষেত্রে তালাক বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে সামান্য একটি ব্যতিক্রম রয়েছে; সেটি হচ্ছে গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে। আজকের এই পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করবো, গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে দিন গণনা কিভাবে করা হবে, সেই প্রসঙ্গে।

গর্ভবতী স্ত্রীর তালাকের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি রয়েছে সেটি হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের পরে যদি সন্তান জন্মগ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে সেই সন্তানের পিতার পরিচয় নিয়ে একটি দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আমাদের সমাজে এমনিতেও নারীর চরিত্র নিয়ে আমরা খুবই খুঁতখুঁতে স্বভাবের, তার মধ্যে কোন নারী যদি বিবাহ বিচ্ছেদের পরে সন্তান জন্মদান করে, সেক্ষেত্রে ওই সন্তানের বৈধতা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন উঠবে।

যদিও বর্তমানে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে সন্তানের পিতামাতার পরিচয় জানা যায় কিন্তু অতীতে সেটি সম্ভব ছিল না এবং ভবিষ্যতে কখনও যদি বিজ্ঞানের উদ্ভাবন বা প্রযুক্তির যে ব্যবহার সেটি যদি কোনও কারণে হারিয়ে যায়, যার ফলে সন্তানের পিতার পরিচয় জানার উপায় যদি বের করা না যায়, তখন বিবাহ বিচ্ছেদের পরে কোন নারী যদি সন্তান জন্ম দেয়, সেক্ষেত্রে তার পিতার পরিচয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে।
তবে আমাদের আইনে একটি সুন্দর সমাধান হয়েছে। দাম্পত্য কলহ বা অন্য যে কোনও কারণে যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আর সংসার করার কোনো ইচ্ছা না থাকে এবং তারা যে কোনো এক পক্ষ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়, তাহলে তালাক নোটিশ পাঠানোর পরে ৯০ দিন এবং সন্তান জন্মদান, এই দুটির মধ্যে যেটি পরে ঘটবে, তখন তালাক কার্যকর হবে।

সাধারণত তালাকের নিয়ম অনুযায়ী, তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকর হয়ে যায়, যদি সমঝোতা না হয়ে থাকে। কিন্তু যখন স্ত্রী গর্ভবতী তখন ২টি শর্ত মাথায় রাখতে হবে।
প্রথমত, ৯০ দিন।
দ্বিতীয়ত, সন্তান জন্ম দান বা সন্তান প্রসব করা।
এই দু’টি শর্তের মধ্যে যেটি পরবর্তীতে ঘটবে তখন তালাক কার্যকর হবে। অথবা, আরও সহজ করে বললে, ২ শর্তই যখন পূরণ হবে, তখন তালাক কার্যকর হবে।
আসুন উদাহরণ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করি। ধরুন আজকের তারিখ হচ্ছে, জানুয়ারি মাসের এক তারিখ। ২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি যদি কোনও দম্পতির মধ্যে বিরোধের ফলে যেকোনো একজন তালাক নোটিশ পাঠায় এবং পরবর্তীতে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা না হয়, তাহলে ৯০ দিন পর বা ধরে নিলাম মার্চ মাসের শেষে, তালাক কার্যকর হবে।
কিন্তু যখন স্ত্রী গর্ভবতী থাকবে এবং জানুয়ারি মাসের এক তারিখ তালাক নোটিশ পাঠানো হবে সেক্ষেত্রে যদি মার্চ মাসের ৩১ তারিখের মধ্যে সন্তান প্রসব করে অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যেই যদি সন্তান প্রসব করে, তাহলে ৯০ দিন পরে আপনাআপনি ডিভোর্স বা তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ৯০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর সন্তান প্রসব করে, অর্থাৎ আমরা যদি ধরে নেই যে, এপ্রিল বা মে মাসে সন্তান প্রসব করে সেক্ষেত্রে তালাক সন্তান প্রসবের পর তালাক কার্যকর হবে।

 

সাধারণ দম্পতি গুলো তালাক নোটিশ পাঠানোর পরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা বা আপোষ করার জন্য সময় পেয়ে থাকে ৯০ দিন। কেননা, ৯০ দিন পরে তালাক কার্যকর হয়ে যায়। কিন্তু, গর্ভবতী স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের আগেই বা ৯০ দিনের মধ্যে যদি সন্তান জন্ম নেয়, সেক্ষেত্রে আপোষ করার জন্য ৯০ দিনই সময় পাবে। কিন্তু যদি তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে সন্তান জন্ম না নেয়, অর্থাৎ আরও বেশি সময় লাগে তাহলে সমঝোতা বা আপোষ করার জন্য উক্ত দম্পতি আরও বেশি সময় পাবেন, একদম সন্তান জন্ম নেওয়া পর্যন্ত।

 

মানুষ মাত্রই আবেগী। কখনও কখনও আবেগ মানুষকে তার সিদ্ধান্ত, রাগ, জেদ থেকে সরিয়ে আনতে পারে। যদি এমন হয় যে, সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে সন্তানের চেহারা দেখে, সন্তানের কথা ভেবে, মাঝে মাঝে সন্তানকে দেখতে আসা যাওয়ার মাঝে, ভরণপোষণ দেওয়ার মাধ্যমে এক সময় সন্তানের পিতামাতা নিজেদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করতে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি সন্তান জন্ম দেওয়াটা যদি তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে পুনরায় বিবাহ করার দরকার নেই। কিন্তু যদি ৯০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাদের মাঝে আপোষ বা সমঝোতা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে উনাদেরকে পুনরায় বিবাহ করতে হবে।
অনেকের কাছে পেঁচানো মনে হতে পারে, তাই এই বিষয়টি একদমই মাথায় বসিয়ে নিতে হবে যে, গর্ভবতী স্ত্রীর ক্ষেত্রে তালাক কার্যকর হওয়া এবং আপোষ মীমাংসা করার সময় ২টি শর্ত অবশ্যই মাইলফলক হিসেবে থাকবে।
প্রথমত, ৯০ দিন।
দ্বিতীয়ত, সন্তান জন্ম দান বা সন্তান প্রসব করা।

উক্ত ২ শর্ত সম্পন্ন না হলে তালাক যেমন কার্যকর হবে না তেমনি শর্তদ্বয় কার্যকর হওয়ার আগে যে কোনও সময় আপোষ, মীমাংসা বা সমঝোতা করা যাবে।
পরবর্তী পর্বে আমরা তালাক নোটিশ পাঠানোর পর আপোষ, মীমাংসা বা সমঝোতা হলে তালাক নোটিশ প্রত্যাহারের নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ্‌।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.