একটি জমি একজনের কাছ থেকে আরেকজন যখন ক্রয় বিক্রয় করে বা অন্য যে কোন উপায়ে বা মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর করে, সেক্ষেত্রে সেই হস্তান্তরের কাজটি আমরা করে থাকি একটি দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে ঐ সম্পাদিত দলিলটি নিকটস্থ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে।
সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সাব- রেজিস্টারের সামনে দলিল উপস্থাপন করে উক্ত দলিল রেজিস্ট্রেশন করবে। কিন্তু কখনো কখনো এমন হয় যে দলিলের কোন পক্ষ, বিশেষ করে দাতা পক্ষ যদি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থিত হতে না পারে, সেক্ষেত্রে কিভাবে উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করা যেতে পারে, সেটা নিয়েই আজকে আমরা আলোচনা করব।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোন সম্পত্তি একজনের কাছ থেকে অন্য জনের নামে হস্তান্তর করতে হলে অবশ্যই সাব রেজিস্ট্রি গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু, কোন সমস্যার কারণে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়া সম্ভব না হলে তখন কিভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারা যায়, সেটি নিয়েই আজকের আলোচনা।
এটা কিন্তু ঘরে বসে কিভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন বা অনলাইনে কিভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন, সেই ধরনের কিছু না। প্রেক্ষাপটটা বোঝার চেষ্টা করুন; ধরুন, একজন ব্যক্তি অসুস্থ কিন্তু তার একটি জমি বিক্রি করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি সাব রেজিস্ট্রি অফিসের না গিয়ে কিভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন, সেই বিষয়টি কল্পনা করার চেষ্টা করুন। আমাদের সমাজে আমাদের দাদা- দাদী, নানা- নানী বা যেকোনো মুরুব্বী শ্রেণীর অভিভাবক অসুস্থ অবস্থায় থাকলে এবং সম্পত্তি তাদের নামেই যদি থাকে, তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে তারা উক্ত সম্পত্তি কারো কাছে বিক্রি করতে চাইলে কিংবা নিজের সন্তানদের মাঝে বণ্টন করে দিতে চাইলে, তাকে স্ব শরীরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হয়। কিন্তু অসুস্থতা বা শারীরিক বার্ধক্যের কারণে তিনি যদি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থিত হতে না পারেন, তখন কিভাবে তিনি উক্ত দলিল রেজিস্ট্রেশন করে দিবেন?
আবার, এই প্রেক্ষাপটটাও একটু চিন্তা করুন যে, কোন ব্যক্তি বিদেশে অবস্থান করছে; এমতাবস্থায় তার একটি জমি বিক্রি করার প্রয়োজন। এখন সেই ব্যক্তি বিদেশে যে চাকরিরত অবস্থায় আছে ঐখান থেকে ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই কিংবা ছুটি পেলেও তার আসা যাওয়া সময় এবং অর্থ সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই তিনি দেশে না এসে যদি অন্য কোন উপায়ে উক্ত দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন, তাহলে সেটা উভয়ের জন্য ভালো হয়। এমতাবস্থায় দেশের বাহিরে থেকে কিভাবে দেশের মধ্যে কোন দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রেশন করা যায় তথা কোন জমি বিক্রি করা যেতে পারে? আরো একটি প্রেক্ষাপট এমন আছে যে, কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত এমতাবস্থায় তার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অথবা পারিবারিক প্রয়োজনে তার নামে থাকার কোন সম্পত্তি বিক্রি করা আবশ্যক। কিন্তু কারাগারে বন্দি থাকার কারণে তার পক্ষে স্ব শরীরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এসে দলিল রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সে কিভাবে তার নিজের বা পারিবারিক প্রয়োজন মিটাতে উক্ত জমি বিক্রি করতে পারে?
উপরের প্রেক্ষাপটগুলো আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে থাকে বলে উদাহরণ হিসেবে এই প্রেক্ষাপটগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের প্রেক্ষাপট রয়েছে যেমন, অনেক সময় সাব-রেজিস্ট্রি অফিস যে এলাকায় অবস্থিত সে এলাকায় যাওয়া কারো জন্য প্রাণ ন্যাসের হুমকি স্বরূপ হতে পারে অথবা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমি বিক্রি করতে গেলে সেক্ষেত্রে জমি বিক্রয়ের বিষয়টি জানাজানি হতে পারে, যেটা বিক্রেতা চাচ্ছেন না লোকজনকে জানাতে। আবার, অনেক সময় দেখা যায় যে, অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে একটি জমি ক্রয় করে এখন ঐ জমি বিক্রি করতে স্থানীয় লোকের রোষানলের মধ্যে পড়তে পারেন বলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশনে অসুবিধা হতে পারে। পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের সমস্যার কারণে অনেক সময় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হয় না।
ভয়ের কিছু নেই, এইসব পরিস্থিতিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে না গিয়েও দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব। রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩১, ৩৩ এবং ৩৮ উক্ত তিনটি ধারাতে ভিজিটে দলিল রেজিস্ট্রেশন, পাওয়ার অফ এটর্নির মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং কমিশন গঠনের মাধ্যমে দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব।
আপনাকে বিচার বিবেচনা করে দেখতে হবে যে, আপনার যে সমস্যার কারণে আপনি স্ব শরীরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না, সেই সমস্যাটি সমাধানের জন্য আপনার দিক থেকে কোনটা সবচেয়ে উত্তম। আপনি কি কমিশন গঠনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন করাতে পারলে আপনার সুবিধা হয় নাকি আপনি পাওয়ার অফ এটর্নির মাধ্যমে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে আপনার জমিটি বিক্রি করাতে পারলে সুবিধা হয় নাকি ভিজিটের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন করাতে পারলে উপকার হয়, সেটা বিবেচনায় নিয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে না গিয়েও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেন।
বলা বাহুল্য যে, উক্ত ৩ ক্ষেত্রেই আপনাকে বাড়তি ফি প্রদান করতে হবে এবং কিছুটা সময় সাপেক্ষ; তদুপরি আপনি যদি বিদেশে বা কারাগারে বা নিজ বাসস্থান বা নিজের সুবিধামত স্থানে বসে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে না গিয়ে নিজের কাঙ্ক্ষিত দলিলটি রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেন, তাহলে বাড়তি ফি প্রদান করতে আপত্তি থাকার কথা নয়। আজকের পর্বে আমরা খুবই বেসিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। ভবিষ্যতে আমরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে না গিয়ে কখন কিভাবে নিজের সুবিধামত স্থানে বসে দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন, সেই বিষয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্। আজ এতটুকুই ধন্যবাদ।

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )