উকিল নোটিশ

উকিল নোটিশঃ কি,কেন,কিভাবে?

বিবিধ আইন

কি?
একজন পাওনাদার ব্যক্তি বা বিশেষ কোন বিষয়ে দাবিদার ব্যক্তি আরেকজন দেনাদার ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি আদালতে মামলা না করে পারস্পরিক সমঝোতা’র ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় চিঠির মাধ্যমে যে প্রস্তাব পাঠিয়ে থাকেন তাকেই আমরা সাধারণত উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ হিসেবে জানি৷ উক্ত উকিল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশের মধ্যে শুধুমাত্র পারস্পরিক সমঝোতার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয় তা কিন্তু নয়; উক্ত সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলে বা শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হলে সে ক্ষেত্রে কতদিনের মধ্যে আদালতে মামলা করা হবে সেই বিষয়েও হুঁশিয়ারি স্বরূপ জানিয়ে দেয়া হয়। আর্থিক দেনা-পাওনা, পারিবারিক সমস্যা, জমিজমা নিয়ে বিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে লিগ্যাল নোটিশ বা উকিল নোটিশ পাঠানো হয়ে থাকে।

 

কেন?

সরাসরি আদালতে মামলা না করে নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক ভাবে সমঝোতা করার লক্ষ্যেই সাধারণত উকিল নোটিস পাঠানো হয়ে থাকে; যাতে পরবর্তীতে বিবাদীপক্ষ এই বলতে না পারে যে তুমি এই বিষয়ে সরাসরি আদালতে মামলা না করে আমাকে ইনফর্ম করলে আমি হয়তো এটাকে আদালত পর্যন্ত গড়াতে দিতাম না, নিজেরা বসেই সমঝোতা করে ফেলতাম। এতে যেমন আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করা হয় না তেমনি উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গুলোও বিনষ্ট হয় না।

তবে, লিগ্যাল নোটিশ গ্রহণ না করার মত মহা বুদ্ধিমানের(প্রকৃতঅর্থে বোকামি) মত কাজ অনেকেই করে থাকে৷ এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ মনে পড়ে গেল, আপনি যদি উট পাখিকে তাড়া করেন, তাহলে উট পাখি যদি সামনে কোন বালির স্তূপ পায়, তাহলে সোজা গিয়ে বালির স্তূপে মাথা ঢুকিয়ে দিবে৷ উট পাখির বিশ্বাস হচ্ছে, আমি যেহেতু বালির ভিতর মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না, সেহেতু আমাকেও কেউ দেখতে পাচ্ছে না৷ আমাদের যেসব ভাই বোনেরা লিগ্যাল নোটিশ বা উকিল নোটিশ আসলে ঘাবড়ে গিয়ে নোটিশ গ্রহণ না করে ডাকপিয়নকে বলে বসেন যে, নোটিশ গ্রহীতা বাসায় নেই, তাদের বিশ্বাস হচ্ছে সেই উট পাখির বিশ্বাসের মত৷ নোটিশ গ্রহণ না করলেই যেন তিনি বেঁচে গেলেন, আসলে একটি সমঝোতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন৷ নিজেকে আদালতের কাঠগড়া পর্যন্ত নিয়ে গেলেন; যদিও সুযোগ ছিল মামলা মোকদ্দমা ছাড়াই বিরোধটি নিষ্পত্তি করার। নোটিশ গ্রহণ না করার আরেকটি নেতিবাচক কিন্তু অহরহ উদাহরণ হল, ডিভোর্স নোটিশ। সাধারণত মানুষ মনে করে যে, ডিভোর্স নোটিশ গ্রহণ না করলে ডিভোর্স হবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ডিভোর্স দাতা ডিভোর্সের একটি কপি যাকে ডিভোর্স দিচ্ছে তার ঠিকানায় এবং আরেকটি কপি সালিশি পরিষদের ঠিকানায় রেজিস্ট্রি করে পাঠিয়ে যদি ওই পোষ্ট অফিসের রশিদটি উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে সে যে নোটিশ পাঠিয়েছে তা তার জন্য প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট হবে। কেননা আপনি হয়তো ডিভোর্স নোটিশটি গ্রহণ করছেন না কিন্তু সালিশি পরিষদের তো কোনো কারণ নেই উক্ত ডিভোর্স নোটিশ প্রত্যাহার করা। তাছাড়া, সালিশি পরিষদ ডিভোর্স নোটিশটি গ্রহণ করার ৯০ দিনের মধ্যে যদি আপনাদের মধ্যে কোন প্রকার সমঝোতা না হয় তাহলে ডিভোর্স বা তালাক কার্যকর হয়েছে এই হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু মাঝখানে আপনি ডিভোর্স ঠেকানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগই পেলেন না শুধুমাত্র ডিভোর্স লেটার বা তালাক নোটিশ গ্রহণ না করার কারণে। মাথায় রাখতে হবে উকিল নোটিশ বা এই ধরনের যেকোনো নোটিশ গ্রহণ না করলে আপনি যে এর থেকে অব্যাহতি পাবেন তা কিন্তু নয়। কারণ নোটিশ দাতার দায়িত্ব হচ্ছে নোটিশ পাঠিয়েছে এটার প্রমাণ স্বরূপ একটি কপি এবং যদি সে ডাক বা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে থাকে ওখানকার একটা রসিদ সংগ্রহে রাখা; এতোটুকুই তার দায়িত্ব। আপনি সেটা গ্রহণ করলেন কি করলেন না, পড়লেন কি পড়লেন না, সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব তা নয়। তাই অযথা মানুষের কথায় নোটিশ গ্রহণ না করে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবেন না।



চেক ডিসঅনারের মত গুটিকয়েক মামলা ব্যতীত বাকী সকল মামলায় কিন্তু লিগ্যাল বা উকিল নোটিশ বাধ্যতামূলক নয়৷ তবে, উকিল নোটিশ বাদী বিবাদী উভয় পক্ষের জন্য সময়, অর্থ, শ্রম বাঁচানোর পাশাপাশি একটা দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ থেকে রক্ষা করে। এটির গুরুত্ব, প্রসার, প্রচার করা হলে দেশে মামলার সংখ্যা যেমন কমবে, কমবে পারস্পরিক বিরোধ। আইন করাই হয়েছে সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য, কিন্তু আইনের প্রয়োগ যদি যথাযথ হতো তাহলে সমাজ ঠিকই শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে বাধ্য। প্রত্যেকটি মামলার আগে উকিল নোটিশ প্রদান করে এবং উভয় পক্ষের সমঝোতার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হলে কোন মামলাই আর বছরকে বছর ঝুলে থাকতো না, মানুষও আর আইন বা আইন পেশাকে নিয়ে গালাগাল দিতো না।

 

কিভাবে?

নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়াটা সাধারণত যে উকিলের মাধ্যমে পাঠাবেন তার দায়িত্ব। একজন ভুক্তভোগী বা দাবিদার তার দাবি জানিয়ে যার কাছে বা যাদের কাছে তিনি ওই দাবিটি করছেন তাদের বরাবরে উনার দাবিটি আইনি প্রক্রিয়ায় একজন উকিলের মাধ্যমে জানিয়ে থাকেন। তাই আপনি যদি কারো কাছে কোন টাকা পেয়ে থাকেন বা কোনো সম্পত্তি বা যে কোন ধরনের বিরোধ নিয়ে কোনো একজন বা একাধিক ব্যক্তির সাথে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যাওয়ার পূর্বে সমঝোতার ভিত্তিতে মীমাংসা করতে চান বা আপনি যে তার কাছে কিছু পাওনা রয়েছে সেটি জানাতে চান সেক্ষেত্রে সেটা একজন আইনজীবী কে খুলে বলবেন, তখন আইনজীবী আইনি ভাষা ব্যবহার করে যথাসম্ভব সমঝোতা করার প্রস্তাব দিবে এবং আপনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে কত দিনের মধ্যে কোর্টে মামলা করবে সেটি ও জানিয়ে দেওয়া হবে। এই পুরো বিষয়টি একজন আইনজীবী তার সুদক্ষ কৌশল অবলম্বন করে তৈরি করে থাকেন, আপনাকে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। আপনাকে শুধু আপনার যত অভিযোগ বা দাবি রয়েছে, যেগুলো প্রমাণ করার মত আপনার কাছে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে এবং সত্য, সেগুলো আপনি স্পষ্ট বুঝিয়ে আইনজীবী কাছে উপস্থাপন করবেন; বাকিটা আইনজীবী আইনজীবীর মত করে তৈরি করবেন। সাধারণত আইনজীবীরা নিজস্ব প্যাডে নোটিশ তৈরি করে থাকেন; তারপর কুরিয়ারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে পাঠানো হয়। সম্ভাব্য বিবাদীর নিকট এক কপি পাঠানোর পর আরো একটি কপি অবশ্যই আইনজীবী নিজের কাছে অফিস কপি হিসেবে রেখে থাকেন এবং একটি কপি সম্ভাব্য বাদী পক্ষকেও দেওয়া হয়ে থাকে।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.