তামাদি আইন

তামাদি মেয়াদ গণনা পদ্ধতিঃ পর্ব ০১

তামাদি আইন বিবিধ আইন

ছোটবেলায় বয়স গণনার অংক গুলোর কথা খেয়াল আছে, যেখানে বয়স গণনা করার সময় পুরো অংকটা কষার পর ১ বিয়োগ দেওয়া হতো। এই ১ হচ্ছে জন্মদিন তথা যেদিন জন্ম নিয়েছিল। এটা হচ্ছে বয়সের অংকের একটি বেসিক সূত্র। তেমনি তামাদি আইনে তামাদির মেয়াদ নির্ণয়ের জন্য, তামাদির মেয়াদ গণনার জন্য কিছু বেসিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে যা বিচ্ছিন্ন ভাবে তামাদি আইনের তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু আমরা পূর্বেই জেনেছি যে, তামাদির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর মামলা দায়ের খারিজ বলে বিবেচিত হবে, সেহেতু আমাদের তামাদি মেয়াদ গণনা সম্বন্ধে ভালো ধারনা থাকা বাঞ্ছনীয়। আসুন, আমরা পয়েন্ট আকারে দেখে নেই তামাদির মেয়াদ গণনার রীতিনীতি:-

১। কোন মামলা বা আপীল বা দরখাস্ত দায়েরের জন্য যে দিন থেকে এর কারণ উদ্ভব হয়েছে, সে দিন তামাদি গণনা থেকে বাদ যাবে; জন্মদিনের উদাহরণের মত।

২। কোন মামলার রায় বা ডিক্রী বা দরখাস্তের বিরুদ্ধে কোন আপীল বা পুনঃনিরক্ষণের জন্য আদিম রায়ের বা ডিক্রীর নকলের প্রয়োজন হয়। তাই, রায়ের ডিক্রী ঘোষণার দিন থেকে তামাদি গণনা শুরু হবে না। বরং, শুরু হবে যখন রায় বা ডিক্রীর নকল তোলা হবে। তেমনি কোন রোয়েদাদ নাকচ করার জন্য দরখাস্ত করতে হলে রোয়েদাদের নকল নিতে যে সময় লাগবে, তা তামাদি মেয়াদ থেকে বাদ দেওয়া হবে।

৩। তামাদি আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে যদি বিবাদী বাংলাদেশে না থাকে এবং বাংলাদেশের বাহিরে কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসিত এলাকারও বাহিরে থাকে, তবে ঐ অনুপস্থিত সময় তামাদির মেয়াদকাল থেকে বাদ দিতে হবে। বা বলা যায়, যতদিন অনুপস্থিত ততদিন পর্যন্ত গণনা স্থগিত। যেহেতু, আমরা পূর্বেই তামাদি আইনের ৯ ধারায় জেনেছি যে, তামাদি মেয়াদ গণনা একবার শুরু হলে তা কোন অপারগতা বা অক্ষমতার কারণে আর স্থগিত হবে না। অতএব, ১৩ ধারায় যে, তামাদি মেয়াদ থেকে অনুপস্থিত কাল বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা মেয়াদ শুরু হওয়ার আগেকার বিষয়বস্তু। এই ক্ষেত্রে পুরো সুবিধাটা পাচ্ছে কিন্তু বাদীপক্ষ। কেননা এখানে কেবল বিবাদীর অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে, বাদী কিন্তু এই সুযোগ পাবে না। বাদীর মামলা করার জন্য ‘কজ অফ একশন’ সৃষ্টি হওয়া মাত্রই তামাদির মেয়াদ শুরু, এবার বাদী দেশে থাকুক আর বিদেশে, তাকে যত দ্রুত সম্ভব তামাদি মেয়াদ থাকাকালীন সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের করতেই হবে। কিন্তু ‘কজ অফ একশন’ তথা মামলা দায়েরের কারণ উদ্ভব হওয়ার সাথে সাথে যদি মামলা দায়ের করা না হয়, তাহলে কিন্তু তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হয়ে যাবে যা কিনা ৯ ধারা অনুসারে চলতেই থাকবে। বাকীটা আদালতের মর্জি।



৪। আমরা জানি যে, আমাদের আদালত সমূহের এখতিয়ারের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। যেমন, ফৌজদারি অর্থাৎ ক্রিমিনাল আদালতগুলোকে অপরাধের শাস্তির মাত্রার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমে মামলা দায়ের হয়, কখনো সরাসরি, কখনো বা থানা থেকে। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যদি নিজে এই মামলা বিচার করার এখতিয়ারাধীন হয়ে থাকেন তবে নিজেই মামলার শুনানি করবেন আর যদি সেটি দায়রা আদালতের এখতিয়ারাধীন তাহলে সেটি দায়রা আদালতে ট্রান্সফার করবেন। দেওয়ানী আদালতে অবশ্য মাঝখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মতো কোন স্তর নেই, তবে আর্থিক এখতিয়ারের উপর ভিত্তি করে দেওয়ানী আদালতকে শ্রেণী বিন্যাস করা হয়েছে। এখন একটি জমির মালিকানা স্বত্ব নিয়ে মামলা হলে জমির মূল্যের উপর নির্ভর করবে আপনার মামলাটি কোন দেওয়ানী আদালতে দায়ের করতে হবে। এখন এই পরিস্থিতিতে যদি কেউ সৎ বিশ্বাসে অর্থাৎ কোন প্রকার শয়তানী মতলব না নিয়ে যদি ভুল আদালতে মামলা দায়ের করে তবে মামলাতে তো প্রতিকার পাবেই না বরং সঠিক আদালতে মামলা দায়েরের যে তামাদি মেয়াদ সেটাও হারাবে। কেননা বাদী ভুল আদালতে মামলা করে নিজে তো মনে মনে ঠিক আদালতে মামলা করেছে বলে মনে করে, রিলেক্সে চলে যাবে। অন্যদিকে যে তার সঠিক আদালতে মামলা করার তামাদি মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তো কোন খেয়ালই নেই। কিন্তু যখন হুশ ফিরবে অর্থাৎ ভুল আদালত থেকে মামলাকে ফেরত দেওয়া হবে, তখন হয়ত সঠিক আদালতে মামলা করার তামাদি মেয়াদ থাকবে না। যদি তামাদি মেয়াদ থাকে, তাহলে তো কোন সমস্যাই রইলো না, সরাসরি গিয়ে সঠিক আদলতে গিয়ে মামলা করার কারণে তামাদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে বাদী যে সরল বিশ্বাসে ভুল আদালতে মামলা দায়ের করেছে বা আপীল করেছে তা প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি মামলার বিষয়বস্তু একই, পক্ষসমূহ সহ সকল কার্যক্রম একই হয়। যা দেখে আদালত সন্তুষ্ট হন যে, সরল বিশ্বাসে ভুল আদালত তথা এখতিয়ার বিহীন আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তখন, উক্ত মামলা বা আপীল বা দরখাস্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় যতদিন ছিল, ততদিন তামাদি মেয়াদ গণনা থেকে বাদ দিতে হবে। উল্লেখ্য যেদিন ভুল আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেদিন এবং যেদিন ভুল আদালতে কার্যধারা শেষ হয়েছে সেদিন; এই উভয় দিনকেও গণনা করে তামাদি মেয়াদ থেকে বাদ দিতে হবে। কখনো কখনো আদালত কোন আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা দ্বারা যে কোন ধরণের মামলা বা ডিক্রিজারীর দরখাস্ত দায়ের বা ডিক্রী জারীকে স্থগিত করে দেন। আর আপনাকে ঐ স্থগিত করে দেওয়া মামলাই দায়ের করতে হবে। তখন, যতদিন পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে ততদিন পর্যন্ত আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত মামলা দায়ের করতে পারবেন না। এমতাবস্থায়, ঐ নিষেধাজ্ঞা বা আদেশ যেদিন প্রদান করা হয়েছে এবং যেদিন প্রত্যাহার করা হবে, তার মাঝের পুরো সময়টাই তামাদির মেয়াদকাল থেকে বাদ দিতে হবে।

আজকে এই পর্যন্তই; বাকী রীতিনীতিগুলো পরবর্তী পর্বে আলোচনা করা হবে।

 

[ বাকি পর্বগুলোঃ  পর্ব ২পর্ব ৩পর্ব ৪  ]

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.