প্রকাশ্যে মাতলামি এবং দণ্ডবিধির ৫১০ ধারা

বিবিধ আইন

মদ খাওয়া বা মাতলামি করা সম্বন্ধে আমাদের অনেকের মনে অনেক ধরনের কৌতুহল রয়েছে। আজকে আমরা দন্ডবিধি ১৮৬০ অনুসারে মদ খাওয়া বা মাতলামি করার অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। শুরুতেই বলে রাখি যে, অন্য কোন আইনে মদ খাওয়া সংক্রান্ত বিষয় বা মাতলামি করার সংক্রান্ত বিষয়ে যা কিছু থাকুক না কেন আমরা আজকে শুধুমাত্র দন্ডবিধি ১৮৬০ অনুসারে আলোচনা করব। 

দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৫১০ ধারা অনুসারে, প্রকাশ্যে মাতাল লোকের অসদাচরণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি মাতাল অবস্থায় কোন প্রকাশ্য স্থানে বা এমন কোন জায়গায় যেখানে তার প্রবেশ করার অধিকার নেই কিন্তু সে অনুধিকার প্রবেশ করেছে এবং এমন কোন আচরণ করেছে তার ফলে কোন লোকের বিরক্তির উদ্যোগ হয়, তাহলে সে লোক বিনাশ্রম কারাদণ্ডে যার মেয়াদ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে বা জরিমানা দন্ডে যার পরিমাণ ১০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে বা উভয় দণ্ডিত হতে পারে। 

দণ্ডবিধির ৫১০ ধারা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাবো যে, এখানে মাতাল লোক যদি কোন প্রকাশ্য স্থানে যাকে আমরা পাবলিক প্লেস বলে থাকি, সেখানে মাতলামি করে এবং তার ফলে অন্য কোন ব্যক্তি ব্যক্তির বিরক্তি উদ্যোগ হয়, সেক্ষেত্রে সেটি অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। আবার, মদ খেয়ে এমন কোন জায়গায় সে প্রবেশ করল যে জায়গায় তার প্রবেশ করার অধিকার নেই অর্থাৎ সে অনধিকার প্রবেশ করল, সেক্ষেত্রে অনধিকার প্রবেশ করে এমন কোন কাজ করলো যার ফলে ওই স্থানের কোন ব্যক্তির বিরক্তি উদ্যোগ হয়, তখন তিনি ৫১০ ধারার বিধান অনুসারে অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবে। 

কিন্তু ৫১০ ধারাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এখানে মদ খাওয়াটাকে অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়নি বরং মদ খেয়ে মাতলামি করাটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, তাও যদি সেটা প্রকাশ্য স্থানে হয় বা অনধিকার প্রবেশ করে কোন জায়গাতে হয়, যার ফলে কোন ব্যক্তির বিরক্তির উদ্যোগ তৈরি করে। এতে বুঝা যায় যে, কোন ব্যক্তি যদি নিজ বাড়িতে নিজ ঘরে বসে মদ খায় সেক্ষেত্রে সেটি সমস্যা নেই। পাশাপাশি সে যদি প্রকাশ্য স্থানে বা অন্য কারো বাড়িতে যেখানে তার প্রবেশ করার অধিকার নেই, সেখানে গিয়েও সে যদি কোন প্রকার মাতলামি না করে বা এমন কোন কাজ না করে যাতে অন্যদের বিরক্তির উদ্যোগ হয় না, তাহলে সেটি উক্ত ধারা অনুসারে অপরাধ করেছে বলে বিবেচিত হবে না। 

দন্ডবিধি এই জায়গায় স্পষ্ট আছে, আপনি মদ খেয়ে আপনার ঘরে মাতলামি করেন কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সেটি কোনভাবেই যাতে অন্যের বিরক্তির কারণ না হয়ে থাকে। ৫১০ ধারাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কারো কারো মতে, কোন ব্যক্তি তার নিজের ঘরে বসে মাতলামি করলে তার দণ্ডনীয় না হলেও, একই কার্য অপর কারো সামনে করলে দণ্ডযোগ্য হতে পারে। এতে এটিও প্রতীয়মান হয় যে, যদি কোন ব্যক্তি তার নিজ ঘরে বসে মদ খেয়ে মাতলামি করে এবং তার সম্পত্তিতে অনধিকার প্রবেশ করেনি এমন কোন ব্যক্তির যদি বিরক্তির উদ্যোগ তৈরি করে, সেক্ষেত্রেও বিরক্ত ব্যক্তি চাইলে উক্ত ধারায় অভিযোগ আনতে পারে। 

উল্লেখ্য যে, দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৫১০ ধারার অধীন প্রকাশ্যে মাতাল লোকের অসদাচরণের অপরাধটি আমলযোগ্য নয়, ওয়ারেন্ট যোগ্য, জামিনযোগ্য কিন্তু আপন যোগ্য নয়।

প্রকাশ্যে মাতাল লোকের অসদাচরণকে অনেকেই শান্তি ভঙ্গের অপরাধের সাথে মিলিয়ে ফেলার চেষ্টা করে থাকেন, কিন্তু বিভিন্ন মামলার রায় এটি স্পষ্ট যে ৫১০ ধারার অপরাধটি শান্তি ভঙ্গের অপরাধের সমতুল্য নয়। তাছাড়া এই ধারা থেকে এটি স্পষ্ট যে, মদ খেয়ে মাতাল হওয়াটা দন্ডবিধি অনুসারে আইনত অপরাধ নয় কিন্তু মাতাল হওয়ার পর প্রকাশ্য স্থানে বা অনধিকার প্রবেশ করে কোথাও মাতলামি করলে এবং সেটি কারো বিরক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করলে, তখন সেটি আইনত অপরাধ হবে। তাছাড়া, কেউ মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে গেলে সেটি অন্য আইনে অন্য ধারায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে কিন্তু কোন মাতাল ব্যক্তি যদি গাড়ির ড্রাইভ না করে গাড়িতে এমনিতে আরোহন করে, সেক্ষেত্রে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না। 

কিন্তু মদ খাওয়ার পর সাধারণত যেহেতু আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকি না, তখন আমাদের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়, তখন আমরা এমন অনেক কাজ করি যেগুলো স্বাভাবিক থাকাবস্থায় অর্থাৎ মদ না খেয়ে থাকাবস্থায়  আমরা ওই কাজ করি না। তাই মদ পরিত্যাগ করাটাই উত্তম। 

পাশাপাশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে এবং মুসলিম আইন অনুসারে যেহেতু মদ হারাম, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন অতি উত্তম হচ্ছে মদ পরিত্যাগ করা। কারণ আপনি এমন কোন কাজ করতেন না স্বাভাবিক সুস্থ অবস্থায় কিন্তু ওই কাজ মদ খাওয়ার পর আপনি হয়তো করে ফেলতে পারেন; তাই কেন শুধু শুধু এমন কোন অপরাধের বোঝা বহন করবেন যে অপরাধ আপনি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় বা ঠান্ডা মস্তিষ্কে কখনোই করতেন না। সুতরাং, ধর্মীয় আইন এবং রাষ্ট্রীয় আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যাদি পরিত্যাগ করাই শ্রেয়। 

আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আমাদের দন্ডবিধি ১৮৬০ এ যতগুলো অপরাধ এবং যতগুলো শাস্তির বিধান রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম পরিমাণ দন্ড বা জরিমানা হচ্ছে ৫১০ ধারায়, যা কিনা মাত্র ২৪ ঘন্টার বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা দশ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড। 

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.