ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা প্রাইভেট ডিফেন্স

বিবিধ আইন

ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা প্রাইভেট ডিফেন্স (Private Defence) সম্বন্ধে আমরা প্রায় শুনে থাকি। কিন্তু, কখন আপনি এই ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence প্রয়োগ করতে পারবেন, সেই সম্বন্ধে আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব। উল্লেখ্য আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence প্রয়োগকালে আপনি কোন ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারবেন, যদি সেটা প্রয়োজন হয়ে থাকে। বলা চলে যে, আইনগত ভাবে আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence চর্চা করতে গিয়ে কারো মৃত্যু ঘটালেও এর জন্য আপনার বিরুদ্ধে খুনের চার্জ আনা হবে না। তাই, চলুন জানি কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence এর অধিকার চর্চা করতে পারবেন।
সাধারণত, দেহের ক্ষেত্রে আপনি ৬ পরিস্থিতিতে আর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৪ টি পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence এর অধিকার চর্চা করতে পারবেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মোট ১০ টি পরিস্থিতিতে আপনি ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence এর অধিকার চর্চা করতে পারবেন। চলুন দেখি ১০ টি পরিস্থিতির কোনটির কি অবস্থা…

শুরুতেই দেহের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence এর অধিকার গুলো দেখে নেওয়া যাক:

  • প্রথমত, মৃত্যুর আশঙ্কা অনিবার্য হলে; অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি আপনার উপর এমন ভাবে আক্রমণ করে যাতে আপনার মৃত্যু অনিবার্য, তখন আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে পারবেন। কথায় আছে না, জীবন বাঁচানো ফরজ।
  • দ্বিতীয়ত, গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা; অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি আপনার উপর এমন ভাবে আঘাত বা আক্রমণ করে যার ফলে আপনি গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হওয়া অনিবার্য, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা বা Private Defence এর অধিকার চর্চা করতে পারবেন।
  • তৃতীয়ত, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে আক্রমণ; এই বিষয়টি বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীকে ধর্ষণ করার জন্য আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারবেন।
  • চতুর্থত, অস্বাভাবিক কাম লালসা উদ্দেশ্যে আক্রমণ; অস্বাভাবিক কাম লালসার উদ্দেশ্যে কেউ যদি আপনাকে কোনরূপ আঘাত বা আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এখানে অস্বাভাবিক কাম লালসা বলতে স্বাভাবিক নিয়মের বাহিরে অস্বাভাবিক ভাবে যারা যৌন কামনা করে, তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। যেমন, ছেলের সাথে ছেলে, মেয়ের সাথে মেয়ে, যাদেরকে এখন গে, লেসবিয়ান বলা হয়; এরা কেউ যদি অস্বাভাবিক কাম লালসার উদ্দেশ্যে আপনাকে কোনরূপ আঘাত বা আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
  • পঞ্চমত, কিডন্যাপ বা অপহরণ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হলে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করা যাবে।
  • ষষ্ঠত, অবৈধ আটক; কোন ব্যক্তি যদি আপনাকে অবৈধভাবে আটক করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে আপনি তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে পারবেন।

 

এবার দেখি আমরা সম্পত্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার সম্বন্ধে

  • প্রথমত, দস্যুতা; আপনার সম্পত্তি কেউ যদি দস্যুতার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়, সেক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষার উদ্দেশ্যে উক্ত দস্যুতা প্রতিরোধ করার জন্য আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে পারবেন। ওই দস্যুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারবেন, প্রয়োজনে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারবেন।
  • দ্বিতীয়ত, রাতের বেলায় ঘর ভেঙ্গে প্রবেশ; রাতের বেলা যদি অপরাধীরা আপনার ঘর ভেঙে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে অপরাধীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারবেন আপনি আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে গিয়ে।
  • তৃতীয়ত, আপনার সম্পত্তি সংরক্ষণের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত গৃহ বা তাঁবু বা যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন করা হলে উক্ত ক্ষতিসাধন প্রতিরোধকল্পে আক্রমণকারী বা অপরাধকারীর বিরুদ্ধে আপনি ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে পারবেন। প্রয়োজনে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাবে।
  • চতুর্থত, মৃত্যু বা গুরুতর জখমের আশঙ্কা; যদি কোন চুরি বা ক্ষতি বা অনধিকার গৃহে প্রবেশের জন্য পরিস্থিতি এমন হয় যে আপনি বাধা না দিলে আপনার মৃত্যু বা গুরুতর জখম অনিবার্য, সেক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আপনি অপরাধীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারবেন।

 

দেহ এবং সম্পত্তি উভয় ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার চর্চার ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যখনই আপনার উপর উক্ত ১০ পরিস্থিতির কোন একটিতে আক্রমণ বা হুমকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখনই শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার জন্ম নেয়, এর আগেও নয়, এর পরেও নয়। কোন অপরাধী আপনাকে উপরের ১০ টি উপায়ের কোন একটি উপায়ে আক্রমণ করতে পারে বলে আপনি সন্দেহ করছেন, অথচ সেটা অনিবার্য নয়, সেক্ষেত্রে আপনার কিন্তু ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার শুরু হয়নি। আবার অপরাধী যা করার তা করে চলে গেছে, তখন আপনি তার বাড়িতে গিয়ে বা তাকে খুঁজে বের করে প্রতিশোধমূলক ভাবে আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করবেন, তাও কিন্তু হবে না; তখন সেটা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হবে। অর্থাৎ, ঠিক যখন আপনার উপর আক্রমণ অনিবার্য, তখনি আপনার অধিকার তৈরি হবে এবং সেটি বলবত থাকবেও ততক্ষণ, যতক্ষণ আক্রমণ অনিবার্য।

ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই আপনি চর্চা করতে পারবেন। আপনি যদি কাউকে আঘাতের মাধ্যমে আপনার আত্মরক্ষা করতে পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার আঘাত দেওয়া পর্যন্তই আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা, এর বেশী নয়। কাউকে যদি আপনি পায়ে গুলি করে বা পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আপনার আত্মরক্ষা করতে পারেন, সেক্ষেত্রে ওই লোকের বুকে বা মাথায় গুলি করা বা মাথায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা, আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষা চর্চার অতিরিক্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে গিয়ে উল্টো অপরাধী হয়ে যেতে পারেন। তাই যতটুকু আঘাত করলে আপনি নিজের দেহ এবং সম্পত্তি বা অন্যের দেহ বা সম্পত্তি রক্ষা করতে পারবেন, ঠিক ততটুকু আঘাতই আপনার ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার আওতাধীন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.