তামাদি আইন

তামাদি আইনের ব্যতিক্রম: বৈধ অপারগতা

তামাদি আইন

তামাদি সম্বন্ধে আমরা জানতে পেরেছি যে, কোন মামলা দায়েরের জন্য যে নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের করা না হলে উক্ত মামলা খারিজ বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ গণনার ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। প্রত্যেকটি আইন বা নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম থেকে থাকে, তেমনি তামাদি আইনের কিছু ব্যতিক্রম হচ্ছে, নাবালক, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন কোন ব্যক্তির কোন মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে যে তামাদি মেয়াদ পেয়ে থাকে, সেই মেয়াদ প্রাপ্তির সময় যদি তার এই বৈধ অপারগতা থাকে, অর্থাৎ সেই ব্যক্তি যদি নাবালক, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়, তবে এই বৈধ অপারগতা শেষ বা অবসান হওয়া পর্যন্ত, নাবালক, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির মামলা দায়েরের তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে না। যখনি নাবালক সাবালক হবে, উন্মাদ এবং জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি সুস্থ হবে, তখন তামাদির মেয়াদ তাদের জন্য যেটি ছিল সেটির মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। তবে, এর মধ্যেও কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে। নাবালক বলতে ১৮ বছরের নীচের শিশুদেরকে বুঝানো হবে এবং এটি মোটামটি নির্দিষ্ট যে ১৮ অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে এই অপারগতার অবসান ঘটবে। কিন্তু উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি বলতে যা বুঝায় অর্থাৎ পাগল বা অপ্রকৃতস্থ ব্যক্তি যার কিনা কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই যে কখন সে সুস্থ হবে বা প্রকৃতস্থ হবে। কখনো কখনো দেখা যায় যে, একজন উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি তার পুরো জীবনই উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন থাকে। প্রকৃতস্থ না হওয়ার আগ পর্যন্ত যেহেতু মামলা দায়ের করতে পারবে না, সেহেতু যদি কোন উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন থাকে, তাহলে তার মৃত্যুর পর তার বৈধ প্রতিনিধি শর্ত সাপেক্ষে তামাদির মেয়াদ পাবে। কিন্তু, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধির বৈধ প্রতিনিধিও যদি একই অপারগতা সম্পন্ন হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রেও বৈধ অপারগতার যেসকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে, তা উপভোগ করতে পারবে। এখানে বৈধ প্রতিনিধি বলতে, আপনার সম্পত্তি আপনার অবর্তমানে যারা মালিক হবে তাদেরকেই আসলে বুঝানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে তো নাবালক ব্যক্তি সাবালক হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করতে পারে। তখন তার মামলা দায়েরের দায়িত্ব কে নিবে?-এই প্রশ্নের উত্তর যদি আপনি সহজ উপায়ে খুঁজতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে একদম মূলে যেতে হবে। যে সম্পদ বা অধিকার আদায়ের জন্য নাবালক বা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন কোন ব্যক্তি মামলা করার তামাদি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, সে সম্পদ বা অধিকার ঐ নাবালক বা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির মৃত্যুতে বা অবর্তমানে যে বা যারা স্থলাভিষিক্ত হবে বা অধিকারী হবে তারাই বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে উক্ত সম্পদ বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে। এখানে, অনেকের মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কেন নাবালক, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেদের সম্পত্তি বা অধিকার রক্ষার্থে মামলা দায়ের করতে পারবে না?- এই প্রশ্নের উত্তর অনুচ্ছেদের পড়ার শুরুতেই দিয়ে ফেলা যেত, কিন্তু তাতে বাকী লেখাটুকু পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যেতে পারে বলে অনুচ্ছেদের শেষে এসে লিখলাম। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রকৃতস্থ ব্যক্তি ব্যতীত কোন নাবালক বা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি তার দেওয়ানী অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনি লড়াই লড়তে পারে না, কেননা এই টাইপের লোকরা নিজেদের অধিকার সম্বন্ধেই তো সচেতন বা ওকিবহাল নয়। তাই, মামলা করার জন্য যে তামাদির মেয়াদ রয়েছে, তা তাদের অপারগতা অবসানের পরেই কেবল শুরু হবে।

 

আবার, কোন ব্যক্তির যদি একই সাথে দুইটি বা তিনটি অপারগতা থাকে, তবে একটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর যদি অন্যটি থেকে যায়, তবে বাকী অপারগতাটাও অবসান ঘটতে হবে, অন্যথায় তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে না। যেমন, কোন নাবালক সে আবার উন্মাদ। এখন এই নাবালক তো ১৮ বছর বয়সে সাবালক হয়ে যাবে, তাই বলে কি তার তামাদি মেয়াদ শুরু হবে?- না। সাবালক হলেও সে যদি উন্মাদ থেকে যায়, তবে তার তামাদি মেয়াদ শুরু হবে না। কিন্তু, যদি নাবালক ব্যক্তি সাবালক হওয়ার পর কিছুদিন পর উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে কিন্তু ঐ ব্যক্তি তামাদির ব্যতিক্রমের সুবিধা পাবে না। কেননা, তামাদি আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, “একবার তামাদির মেয়াদ অতিবাহিত হতে আরম্ভ হলে পরবর্তীতে কোন অপারগতা বা অক্ষমতার দ্বারা তা আর বন্ধ হবে না।” অর্থাৎ, একজন নাবালক ব্যক্তি যদি সাবালক হওয়ার কিছুদিন পর উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে এই যে সাবালক হওয়ার পর কিছুদিন সুস্থ ছিলেন, তখনি তামাদি মেয়াদ চালু হয়ে গেছে, যা পরবর্তীতে উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি বা অন্য কোন অপারগতা বা অক্ষমতার জন্য আর বন্ধ হবে না। এখানে, উল্লেখ্য যে, আইন কখনো অলস ব্যক্তিকে সহায়তা করে না। অন্তত তামাদিতে তো কোন মতেই না। অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে অধিকার আদায় করে নিতে হবে।

 

আরেকটি সমস্যার জন্ম নেয় যখন কোন যৌথ মালিকানায় বা যৌথ অধিকারী থাকে, তখন তাদের মাঝে যদি এক বা একাধিক ব্যক্তি সাবালক এবং প্রকৃতস্থ থাকে এবং অপরাপরে সম্মতি ছাড়াই দায়মুক্ত করা চলে, তবে এই ক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ চালু থাকবে। কিন্তু যদি সকলেই অপরাগ থাকে বা দায় মুক্ত করার মত কারো যোগ্যতা না থাকে, তবে সেক্ষেত্রে তামাদির মেয়াদ অতিবাহিত হবে না। যখনি অপারগতার অবসান ঘটবে বা দায়মুক্তির ভার নেওয়ার মত কেউ একজন যোগ্যতা অর্জন করবে, তখনি কেবল তামাদির মেয়াদ অতিবাহিত হবে।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.