আইনগত যোগ্যতা

আইনগত অক্ষমতা – কি, কেন, কিভাবে?

তামাদি আইন বিবিধ আইন

আমরা সাধারণত অক্ষমতা বলতে বুঝি, সক্ষমতার অভাব বা অপারগতা। কোন বিষয়ে কোনো মানুষ যদি অক্ষম হয়ে থাকে তার অর্থ হচ্ছে, সে ওই বিষয়ে অপারক। তেমনিভাবে আইনগত ক্ষমতা বলতে বুঝায়, কোন ব্যক্তি যখন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অপারক হয়ে থাকে অর্থাৎ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না, তখন তাকে আইনগত ক্ষমতা বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আইনগত অক্ষমতা থাকলেও তামাদি আইন ১৯০৮ অনুসারে তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে আইনগত অক্ষম হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে; তারা হচ্ছে নাবালক, উন্মাদ এবং জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি।

আইনগত অক্ষমতা রয়েছে যাদের, যেমন নাবালক বা উন্মাদ বা জড় বুদ্ধিসম্পন্ন কোন ব্যক্তি যদি কোন মামলা বা আইনি কোন কার্যধারা ধরুন ডিক্রি জারি করার মত কোন আবেদন দাখিলের অধিকারী হয়ে থাকেন, কিন্তু স্বীয় অক্ষমতার ধরুন সেই আইনি অধিকার চর্চা করতে পারছে না বলে তার আইনগত অধিকার চর্চার তামাদি মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে না। সে যেহেতু আইনগত অক্ষম তাই তার ক্ষেত্রে তামাদি আইনের বিশেষ সুবিধাটি হচ্ছে, উক্ত মামলা বা আইনি কার্যক্রম করা বা ডিক্রি জারি করার আবেদনের জন্য তার তামাদি মেয়াদ শুরু হবে না ততদিন পর্যন্ত বজায় থাকবে, যতদিন পর্যন্ত নাবালক ব্যক্তি সাবালক হচ্ছে না, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি যতদিন পর্যন্ত সুস্থ হচ্ছে না। তামাদি মেয়াদ গণনা ততদিন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

 

এখানে তামাদি নিয়ে আগে একটু কথা বলে রাখি, যারা তামাদি আইন সম্বন্ধে কোন ধারণা রাখেন না তাদের জন্য সংক্ষেপে তামাদি আইন কি সেটা জানা দরকার। ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল যে মামলাগুলো থাকে সেগুলো বাদে দেওয়ানি বা সিভিল প্রকৃতি যত মামলার হয়েছে যেমন জমি-জমা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি দাবি সংক্রান্ত যে মামলাগুলো রয়েছে বা অধিকার আদায়ের জন্য যে মামলা গুলো রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা গুলো করতে হয়, সেটা ১ বছর, ৩ বছর, ৬ বছর, ১২ বছর ইত্যাদি মেয়াদের রয়েছে। উক্ত মামলাগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে দায়ের করা না হলে আদালত ওই মামলাগুলো তামাদিতে বারিত হওয়ার কারণে খারিজ করে দিয়ে থাকেন।

 

এখন যেহেতু একজন নাবালক কিংবা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি একটি মামলা পরিচালনা করার মত অবস্থায় থাকে না, সেহেতু তার সম্পত্তিতে বা যে কোন বিষয়ে তার অধিকার আদায় করার জন্য তার নিজের মামলায় নিজের বিবেক বুদ্ধি খরচ করে মামলা পরিচালনা করার সক্ষমতা না থাকার কারণে আইন অনুসারে সে ওই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ আইনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের করতে না পারলেও আদালত তার মামলা খারিজ করে দিবে না। তবে, যেই মাত্র তার আইনগত অক্ষমতা দূর হবে বা অবসান হবে, সাথে সাথেই থাকে আদালতের অধিকার আদায়ের জন্য বা সম্পত্তি আদায়ের জন্য সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট রয়েছে আমরা সেগুলো নিম্নে একে একে আলোচনা করব।

আমরা শুরুতেই জেনেছি যে, যখন একজন নাবালক বা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি কোন দেওয়ানি মোকদ্দমা দায়ের করার জন্য অধিকারী হয়, তখন তার আইনগত অক্ষমতার কারণে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে না এবং এর জন্য তার তামাদি মেয়াদও স্থগিত থাকে। কিন্তু যখনই নাবালক ব্যক্তি সাবালক হয়ে যায় বা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায় তখনই তার তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি একই ব্যক্তি নাবালক হয়ে থাকে এবং উন্মাদ হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে তার তামাদি মেয়াদ কতদিন পর্যন্ত স্থগিত থাকবে?–এক্ষেত্রে তার উভয় অক্ষমতা শেষ হতে হবে। অর্থাৎ যদি সে আগে সাবালক হয় এবং সাবালক হওয়ার পরও তার উন্মাদ অবস্থা থেকে যায়, সে ক্ষেত্রে উন্মাদ অবস্থা থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তার আইনগত অক্ষমতা বজায় থাকবে। অন্যদিকে, নাবালক থাকা অবস্থাতেই যদি সে উন্মাদ অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে নাবালক থেকে সাবালক হওয়ার সাথে সাথেই তার আইনগত অক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে।

আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি আইনগত ক্ষমতা নিয়েই মৃত্যুবরণ করে। যেমন, বয়সের সাথে সাথে একজন মানুষ নাবালক থেকে সাবালক হয় কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি অবস্থা থেকে আর সুস্থ হয় না, বরং উন্মাদ অবস্থাতেই মারা যায়। তাহলে তার আইনগত অধিকারের কি হবে?– এমতাবস্থায় তার যে বৈধ প্রতিনিধি রয়েছে সে তার পক্ষে মামলা দায়ের করতে পারবে। এখানে আবার আরেক ধরনের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে যে, একজন উন্মাদ ব্যক্তি উন্মাদ অবস্থায় যদি মারা যায় এবং মৃত্যু কালে তার যে বৈধ প্রতিনিধি রয়েছে সেও যদি আইনগত অক্ষম হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে কতদিন পর্যন্ত তার তামাদি মেয়াদ স্থগিত থাকবে?–এই ক্ষেত্রে যদি তার মৃত্যুর পর তার বৈধ প্রতিনিধি নাবালক বা উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে থাকে, সেই ক্ষেত্রে তারাও আইনগত অক্ষমতার যে সুবিধা গুলো রয়েছে, তারাও সেই সুবিধাগুলো ভোগ করবে। অর্থাৎ তারাও আইনগত ভাবে সক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে না।

 

উল্লেখ্য, যদি দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সাথে একজন আইনগত অক্ষম ব্যক্তির কোন যৌথ সম্পত্তি বা যৌথ স্বার্থ থেকে থাকে সেই ক্ষেত্রে সেই অক্ষম ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া যদি মামলা চালানো যায় সে ক্ষেত্রে বাকি সক্ষম ব্যক্তিরা মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু যদি ওই অক্ষম ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া মামলা চালানো না যায় সেই ক্ষেত্রে ওই অক্ষম ব্যক্তির অক্ষমতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের সকলের বিরুদ্ধে তামাদি মেয়াদ গণনা স্থগিত থাকবে।

 

আইনগত অক্ষমতার কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন, অন্যান্য সকল মামলাতে আইনগত অক্ষমতার সুবিধা থাকলেও আপনি আইনগত অক্ষমতা অগ্রক্রয়ের মামলার ক্ষেত্রে পাবেন না। অগ্রক্রয়ের মামলা সম্বন্ধে আশা করি আপনাদের ধারণা রয়েছে যাদের ধারণা নেই তারা আমাদের ওয়েবসাইটে অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন মামলা সম্বন্ধে ধারণা নিতে পারবেন এই লিংকের মাধ্যমে: অগ্রক্রয়ের মামলা

আইনগত ক্ষমতার ক্ষেত্রে সময় গণনার বেলায় কিছু জটিলতা রয়েছে, তবে সেই জটিলতায় না গিয়ে এতোটুকু মনে রাখুন, যখনই আইনগত ক্ষমতার অবসান ঘটবে তখনই যত দ্রুত সম্ভব আদালতে দ্বারস্থ হবেন, মামলা করার জন্য। কেননা কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত যেকোন মামলাতেই কমপক্ষে তিন বছরের মতো সময় আইনগত অক্ষম ব্যক্তিরা পেয়ে থাকবেন। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, আপনার যখনি মামলা করার অধিকার তৈরি হয়েছে, তখনি যদি আপনি সুস্থ থাকেন কিন্তু আপনি মামলা না করেন এবং তামাদি মেয়াদ শুরু হয়ে যায়, এরপরে যদি আপনি কোনভাবে উম্মত বা জড়বুদ্ধি হয়ে পড়েন সেই ক্ষেত্রে বা আইনগত অক্ষম হয়ে পড়েন সেই ক্ষেত্রে কখনোই আপনার মেয়াদ আর স্থগিত হবে না। তামাদি মেয়াদের একটি ধর্ম হচ্ছে, একবার যদি তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হয়ে যায়, সেটি আর স্থগিত হয় না। অতএব সময় এবং সুযোগ তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই বা তামাদি মেয়াদ শুরু হওয়ার সাথে সাথে আদালতের দ্বারস্থ হোন। কেননা আদালত কখনোই অলস ব্যক্তিকে বা যে ব্যক্তি তৎপর নয় তাকে আইনগত সহায়তা করে না। আজকে এ পর্যন্তই, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.