পিতা-মাতার জীবদ্দশায় মৃত ভাই বোনের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার

আমরা জানি যে, পিতা মাতা জীবিত থাকাবস্থায় যদি কোন সন্তানের মৃত্যু হয় এবং সেই ক্ষেত্রে সন্তান যদি অবিবাহিত হয় এবং তার যদি কোন বৈধ উত্তরাধিকার না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার কোন অধিকার নেই।
তবে পিতা মাতা জীবিত থাকাবস্থায় যদি কোন সন্তানের মৃত্যু হয় এবং সেই ক্ষেত্রে সন্তান যদি বিবাহিত হয় এবং তার যদি কোন বৈধ উত্তরাধিকার থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে মৃত সন্তানের বৈধ উত্তরাধিকাররা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুসারে দাদা-দাদী, নানা-নানীর কাছ থেকে সম্পত্তি পাওয়ার অধিকারী হয়। ১৯৬১ সালের পূর্বে যদিও পেতো না, লা-ওয়ারিশ প্রথার কারণে। তবে উক্ত সালে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৪ ধারা অনুযায়ী, লা-ওয়ারিশ প্রথা বাতিল করা হয়।

লা-ওয়ারিশ প্রথা বাতিলের কারণে বর্তমানে কোন ব্যক্তি যদি তার পিতা-মাতা জীবিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে থাকে, সেক্ষেত্রে সে জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতো, ঠিক ততটুকু সম্পত্তি তার সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এতটুকু আমাদের প্রায় সকলেরই জানা, কেননা ইতিমধ্যে একাধিক আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়ে খুব সহজ ভাষায় আলোচনা করেছি। তারপরও আবার দেখে নিতে পারেন নিম্নের লিংকে ক্লিক করে।
কেন লা-ওয়ারিশ প্রথা বাতিল করা হল? 

 

কিন্তু, এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, কোন ব্যক্তি যদি তার বাবা-মা জীবিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং সে ক্ষেত্রে তার কোন স্ত্রী সন্তান না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সে সম্পত্তি তার ভাই বোন পাবে কিনা?
এখন এক্ষেত্রে দু’টো পরিস্থিতি হতে পারে। প্রথমত, সেই ব্যক্তি অবিবাহিত; অবিবাহিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তার কোন বৈধ স্ত্রী, সন্তান থাকছে না।
আবার দ্বিতীয় আরেকটি পরিস্থিতি এমন হতে পারে, যেক্ষেত্রে সে হচ্ছে বিবাহিত ছিল কিন্তু কোন কারণে সেটি বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং সন্তান নেই। অর্থাৎ ঐ ব্যক্তির মৃত্যুকালে তার কোন স্ত্রী বা স্বামী বা কোন সন্তান ছিল না। উভয় পরিস্থিতিতে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন কিভাবে হবে?

আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা হচ্ছে এই যে, সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানই তার বাবা-মায়ের সম্পত্তি হতে উত্তরাধিকার সূত্রের সম্পত্তি পাবে। স্বাভাবিক ভাবে ঠিক আছে, কিন্তু আপনাকে পরিস্থিতি বুঝতে হবে খুবই ঠাণ্ডা মাথায় এবং থেমে থেমে।
আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে, আপনি যার কাছ থেকে সম্পত্তি পাবেন সেই ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করবে তখন আপনাকে জীবিত থাকতে হবে। যদি কখনো আপনি কারো কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার কথা এবং সেই ব্যক্তি আপনি জীবিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে থাকে, সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি থেকে আপনি সম্পত্তি পাবেন। ক্লিয়ার?

কিন্তু ঐ ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় যদি আপনি মৃত্যুবরণ করেন, অর্থাৎ আপনি যদি ঐ ব্যক্তির আগে মৃত্যুবরণ করেন, সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তি পাবেন না। এই পয়েন্টটি অনেকেই বুঝতে বিলম্ব করে থাকেন। কারো সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে আপনাকে সম্পত্তি পেতে হলে, ঐ ব্যক্তির মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত জীবিত থাকতে হবে। ঐ ব্যক্তি জীবিত, কিন্তু আপনি দুনিয়াতে নাই, তখন আপনার উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তিতে অধিকারও নেই।

ব্যতিক্রম কেবল, দাদা, দাদী, নানা, নানী জীবিত অবস্থায় যদি বাবা বা মা মারা যায়, তখন নাতি, নাতনির জন্য; আর কারো জন্য নয়। লা ওয়ারিশ প্রথা বাতিল করে নাতি নাতনিকে এই সুবিধা দেওয়া হয়, যাতে এতীম নাতি নাতনি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে, উক্ত ক্ষেত্রে অর্থাৎ বাবা মা জীবিত অবস্থায় যেসব ভাই বোন মারা যায়, তাদের সম্পত্তিতে জীবিত ভাই বোনের উত্তরাধিকার সূত্রে অধিকার আছে কিনা?

মৃত ভাই বোনের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আমরা জানি যে, অবিবাহিত কিংবা বিবাহিত কিন্তু পুত্র সন্তান নেই এমন ভাই বোন মৃত্যুবরণ করার পর ঐ ভাই বোনের সম্পত্তিতে তার বাকি জীবিত ভাই-বোনদের উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তিতে অধিকার রয়েছে। এখন এই উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার জন্য অনেক সময় দেখা যায় যে, তার ভাই বা বোন যারা অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের সম্পত্তিগুলো তার জীবিত ভাই বোন অধিকার বলে আদায় করতে চায়।
এখন কোন ভাই বোন যদি অবিবাহিত অবস্থায় বা পুত্র সন্তান না থাকা অবস্থায় মারা যায় এবং তাদের নামে সম্পত্তি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তার ভাইবোনরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবে। তবে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে; এই বিষয়ে আমাদের আর্টিকেল গুলো পড়ে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন।

কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে যখন কোন অবিবাহিত বা পুত্র সন্তান না থাকা অবস্থায়, কোন ভাই বোন মারা যায় এবং তাদের ব্যক্তি নামে কোন সম্পত্তি না থেকে থাকে, সেই ক্ষেত্রে তার ভাই বোনেরা সম্পত্তি পাবে কিনা?
উত্তর হচ্ছে, না। কেননা আমরা জানি যে, যদি বাবা মা জীবিত অবস্থায় কোন অবিবাহিত সন্তান মারা যায়, সেক্ষেত্রে সে তার বাবা-মার কাছে কোন সম্পত্তি পায় না। কিংবা কোন ছেলে বা মেয়ে যদি তার কোন সন্তান থাকাবস্থায় বাবা-মায়ের জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতো সেটি তার সন্তানরা পাবে। এক্ষেত্রে তার ভাই বোন কোনভাবেই কোন অংশ পাবে না; এমনকি যদি শুধুমাত্র কন্যা সন্তানও থেকে থাকে তাহলেও ঐ কন্যা সন্তান তার বাবা বা মা যতটুকু পেতো, ঠিক ততটুকু সম্পত্তি পাবে। ঐ অংশ থেকে কোনভাবে তার চাচা, ফুফু, মামা, খালা কোন অংশ পাবে না।

 

পুরো আর্টিকেলকে সংক্ষিপ্ত করে বললে, বাবা মায়ের জীবদ্দশায় যদি কেউ অবিবাহিত অবস্থায় বা নিঃস্ব সন্তান অবস্থায় মারা যায়, তবে বাবা মায়ের কাছ থেকে তার উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পত্তি পাওয়া হবে না এবং তার কাছ থেকেও কেউ পাবে না; যদি না তার ব্যক্তি নামে কোন সম্পত্তি থেকে থাকে।

আবার, বাবা মায়ের জীবদ্দশায় যদি কেউ কোন বৈধ সন্তান রেখে মারা যায়, তবে বাবা মায়ের কাছ থেকে তার উত্তরাধিকার সূত্রে যে সম্পত্তি পাওয়ার কথা, তার পুরোটাই তার সন্তান পাবে; তার ভাই বোন কিছুই পাবে না। একটু জটিল মনে হলেও ঠাণ্ডা মাথায় একাধিক বার পড়লে আশা করি বুঝতে সক্ষম হবেন, ধন্যবাদ।

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

ব্যাংকের নমিনি কাকে করবেন? 

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সময় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ভাই থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী: মুসলিম উত্তরাধিকারে স্ত্রী-কন্যা ও ভাইয়ের লড়াই