স্বামীর জীবদ্দশায় স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে, ওই স্বামীকে আমরা বিপত্নীক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। আমাদের সমাজে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারী দ্বিতীয় বিবাহ করলে সেটাকে সাধারণত আড় চোখে দেখা হলেও স্ত্রীর মৃত্যুর পরে স্বামীর দ্বিতীয় বিবাহ করাকে কখনো বাঁকা চোখে দেখা হয় না। স্ত্রীর মৃত্যুর প্রয়োজন হয় না, স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থাতেও স্বামী একাধিক বিয়ে করতে পারে। যাই হোক স্বামী বর্তমান থাকা অবস্থায় স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে, স্ত্রীর নামে যদি কোনো সম্পত্তি থেকে থাকে, সেই ক্ষেত্রে স্বামী তার মৃত স্ত্রীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবেন। এই ক্ষেত্রে যদি উক্ত স্ত্রীর সন্তান থেকে থাকে, তাহলে স্বামী ১/৪ (চার ভাগের এক ভাগ) অংশ পাবে কিন্তু স্ত্রীলোকটির যদি কোনো সন্তান না থেকে থাকে সেই ক্ষেত্রে স্বামী তার স্ত্রী রেখে যাওয়া সম্পত্তির ১/২ (অর্ধেক) অংশ পাবে। এক্ষেত্রে একটা বিষয়ে আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে যে, এখানে যে সন্তানের কথা বলা হয়েছে সেই সন্তান উক্ত স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের বায়োলজিক্যাল হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যদি স্ত্রীলোকটির পূর্বের সংসারের কোনো সন্তান থেকে থাকে সেই ক্ষেত্রে ও বর্তমান স্বামী চার ভাগের এক ভাগ অংশ পাবে। আমরা অনেক সময় উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে সন্তান আছে কি নাই এটা হিসাব করার সময় কার সন্তান সেটা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে, যেখানে যে ধরনের সম্পর্কের কথা গুলো বলা হচ্ছে, তার প্রত্যেকটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক। এই ক্ষেত্রে যদি বলা হয় সন্তান থাকলে চারভাগের একভাগ সন্তান বা সন্তান না থাকলে অর্ধেক, ধরে নিতে হবে যে মৃত স্ত্রীর সন্তান, যা বর্তমান স্বামীর ঔরসজাত হতে পারে কিংবা তার পূর্বের কোন স্বামীর ঔরসজাত হতে পারে। উত্তরাধিকার সূত্রেই স্ত্রীর অধিকার সম্বন্ধে দেখতে গিয়ে আমরা আরেকটি বিষয় জেনেছি যে, স্ত্রীর যদি দেনমোহরের অর্থ অপরিশোধিত থেকে থাকে, তাহলে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের পূর্বেই স্বামীর সম্পত্তি থেকে স্ত্রীকে তার দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অংশ পরিশোধনের সময় এ ধরনের কোনো জটিলতা নেই।
তবে যে জায়গায় জটিলতা রয়েছে তা হচ্ছে স্ত্রীর নামে সম্পত্তি যদি তার বাপের বাড়ির সম্পত্তি হয়ে থাকে; তখন তো লঙ্কা কাণ্ড ঘটে যেতে পারে। স্ত্রীর নিজের নামে কোন সম্পত্তি থেকে থাকলে কিংবা ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত থাকলে, সেই ক্ষেত্রে স্বামী উত্তরাধিকার সনদ দেখিয়ে খুব সহজেই নিজের প্রাপ্য আদায় করতে পারবে। কিন্তু যদি স্ত্রীর নামে কোন সম্পত্তি সরাসরি না থেকে থাকে বরং স্ত্রীর বাবার বাড়িতে বাবার মৃত্যুর পর বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশ থেকে তিনি প্রাপ্য হয়ে থাকেন, তাহলে স্বামী ঐখান থেকে ও সম্পত্তি আদায় করতে পারবে। কিন্তু এটা আমি যতটা সহজে বলছি ততটা সহজে আদায় করা সম্ভব হয় না। কেননা আমাদের সমাজে কোন ভাই তার বোনের মৃত্যুর পরে বোনের স্বামীকে তাদের বাড়ি থেকে বোনের পাওনা সম্পত্তি থেকে বোনের স্বামীকে তার প্রাপ্য ভাগ দিবে, এটা এখনো সহজলভ্য হয়নি। যদি সন্তান থেকে থাকে সেই ক্ষেত্রে হয়তো একটা আবেগ কাজ করবে পাশাপাশি সন্তানদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সম্পত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু নিঃসন্তান বোন মারা যাওয়ার পরে বোনের স্বামীকে সম্পত্তি দেওয়ার বিষয়টা খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে স্বামী বেচারা সত্যিকার অর্থেই উত্তরাধিকারসূত্রে বৈধ হকদার, এজন্য তাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে তার স্ত্রীর মৃত্যু সনদ এবং ওয়ারিশান সনদ নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে নিজের হক আদায় করার জন্য দাবি জানানো। ঘরোয়া ভাবে যদি সেটি আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে আদালতে মামলার মাধ্যমে সেটা আদায় করা যাবে।
উপরের অংশটুকু পড়ার পরে আমাদের অনেকেরই মনে হতে পারে যে স্বামীর জীবদ্দশায় স্ত্রীর মৃত্যু হলে স্বামীরই লাভ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী বেচারা স্ত্রীর নামে সম্পত্তি ক্রয় করে বা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যৌথ নামে সম্পত্তি ক্রয় করে কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পরে ওই সম্পত্তিতে স্ত্রীর ভাই,বোন, বাবা, মাও উত্তরাধিকারসূত্রে মালিক হয়ে যায়। যেহেতু সম্পত্তি স্ত্রীর নামে ক্রয় করা হয়েছে এবং বর্তমানে বেনামী সম্পত্তি ক্রয় করা যায় না, তাই স্বামীর টাকা হলেও স্ত্রী উক্ত সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে ফেলে। তখন স্বামীর অধিকারের চাইতেও স্ত্রীর বাবা, মা, ভাই, বোনদের অধিকারটা বেশি প্রভাব বিস্তার করে। কেননা স্বামী সন্তান থাকলে ১/৪ (চার ভাগের এক ভাগ) পাবে, সন্তান না থাকলে ১/২ (অর্ধেক) পাবে, স্বামীকে দেওয়ার পরে বাকি পুরো অংশটাই কিন্তু চলে যাবে তার নিজের বাবা, মা, ভাই, বোনদের কাছে। সুতরাং, স্ত্রীর মৃত্যুতে সর্বদা স্বামীকে লাভবান বলা ঠিক নয়। সম্পত্তির লোভে অনেকেই বিবাহ করলেও কেউই কারও মৃত্যু কামনা করে বিবাহ করে না। মোট কথা আমরা জানতে পারলাম সন্তান স্ত্রীলোকটির যদি সন্তান থেকে থাকে তাহলে স্বামী পাবে চার ভাগের এক ভাগ আর স্ত্রীলোকটির যদি কোনো সন্তান না থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে স্বামী পাবে অর্ধেক। স্বামীর যদি অন্য সংসারের ছেলেও থাকে কিন্তু বর্তমান স্ত্রীর সাথে কোন সন্তান না থাকে বা বর্তমান স্ত্রীর অন্য কোন সংসারের সন্তানও না থেকে থাকে, তাহলে কিন্তু স্বামী অর্ধেক সম্পত্তি পাবে।
আশা করি, মৃত স্ত্রীর সম্পত্তিকে স্বামীর অধিকার নিয়ে আরও কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়, তারপরও কারো কোন প্রশ্ন, পরামর্শ বা অভিযোগ থাকলে আমাদেরকে ইমেইল করে জানাতে পারেন। আজ এতটুকুই, ধন্যবাদ।
চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেলটি নিয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে, যোগাযোগ করুনঃ 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )