When a daughter alone can own the entire property of her parents

কখন কন্যা সন্তান একাই পিতা মাতার পুরো সম্পত্তির মালিক হতে পারে

উত্তরাধিকার আইন

একদিন হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহ আপনি যখন খুশি হন তখন কি করেন?’

আল্লাহ তখন উত্তরে বললেন, ‘আমি তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি’।

তখন মুসা (আঃ) পুনরায় প্রশ্ন করলেন, ‘আর যখন আপনি এর চেয়ে বেশি খুশি হন তখন কি করেন?’ আল্লাহ তখন বললেন, ‘তখন আমি তোমাদের ঘরে মেহমান প্রেরণ করি’।

মুসা (আঃ) আবার প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহ আপনি যখন সবচাইতে বেশি খুশি হন তখন কি করেন?’ তখন আল্লাহ তায়ালা জবাব দেন, ‘আমি তোমাদের ঘরে কন্যা সন্তান দান করি’।

চিন্তা করেছেন, আল্লাহ যখন সবচেয়ে বেশি খুশি হন আমাদের উপর তখন আমাদের ঘরে কন্যা সন্তান দান করেন। অথচ আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যার কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার সাথে সাথে সে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। যুগে যুগে কন্যা সন্তানকে এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে। যে নারী কন্যা সন্তান জন্ম দেয় তাকেও উপেক্ষা করে দেখা হয়। আর যে, পুরুষ ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারে না, শুধু কন্যা সন্তান জন্ম নেয়, তাকে সমাজে অনেকে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। 

অন্যদিকে, আমাদের সমাজে এখনো পর্যন্ত ছেলে সন্তান জন্ম দেওয়াটাকে এক ধরনের বীরত্ব মনে করা হয়। অথচ ছেলে কিংবা মেয়ে কি জন্ম নিবে, তার সাথে স্বামী কিংবা স্ত্রীর কোন ধরনের কোন অবদান বা হাত নেই। সেটা সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ আল্লাহ যেটা নির্ধারণ করেছেন সেটাই হবে। কিন্তু তারপরও আমাদের সমাজে এই বিষয়টিকে এখনো পর্যন্ত বৈষম্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। এর জন্য সামাজিক অনেকগুলো কারণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে।

ছেলে সন্তান জন্ম নিলে সে উপার্জন করে পিতা মাতাকে দেখাশোনা করতে পারবে কিন্তু কন্যা সন্তানকে উপার্জনের জন্য পাঠানো যায় না বা কন্যা সন্তান উপার্জন করতে অক্ষম হয়ে থাকে। আবার দেখা যাক কন্যা সন্তান স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে করে বাবা-মাকে ছেড়ে স্বামীর সংসারে চলে যাবে, সেক্ষেত্রে বাবা-মা মেয়ে সন্তান বা কন্যা সন্তান থেকে কোন ভাবেই উপকারিত হয় না বলেই কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে একটা কৃত্রিম অপরাধবোধ কাজ করে।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুসারে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি পুরুষরা নারীদের চাইতে দ্বিগুণ সম্পত্তি পেয়ে থাকে বা ঘুরিয়ে বললে নারীরা পুরুষদের চাইতে অর্ধেক সম্পত্তি পেয়ে থাকে। আমরা ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে দেখেছি ছেলেরা মেয়েদের যদি দ্বিগুণ পেয়ে থাকে এবং একই কন্ডিশনে বাবা মায়ের কাছ থেকে সম্পত্তি বেশি থাকে পেয়ে থাকে কিংবা স্বামী স্ত্রীর থেকে বেশি পেয়ে থাকে। যদিও হিসাব করে দেখলে দেখা যায়,  নারীরা পুরুষদের চাইতেও অংশ কম পেলেও সুবিধা বেশি পেয়ে থাকে।

কেননা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুসারে পুরুষ যতই নারীর চেয়ে বেশি সম্পত্তি পেয়ে থাকুক না কেন, পুরুষকেই নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়। নারীকে কিন্তু কখনোই তার নিজের কিংবা তার স্বামীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয় না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে নারী যে সম্পত্তি পেয়ে থাকুক না কেন তার পুরোটাই তার নিজের মতো করে খরচ করতে পারে। কিন্তু পুরুষকে সর্বদাই তার স্ত্রীর জন্য খরচ করতে হয়।

যাই হোক আজকে আমরা আলোচনা করব, কখন কন্যা সন্তান একজন হউক বা একাধিক; তারা তাদের বাবা-মায়ের পুরো সম্পত্তির মালিক হতে পারে?

যদি একজন ছেলে থাকে সেক্ষেত্রে সে তার বাবা-মায়ের পুরো সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারে। কিন্তু যদি কন্যা সন্তান হয় এবং তা একজন একজন হোক বা একাধিক, তারা বাবা মায়ের পুরো সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। একজন হলে বাবা-মায়ের কাছ থেকে অর্ধেক সম্পত্তি পেয়ে থাকে আর একাধিক হলে তিন ভাগে দুই ভাগ অংশ পেয়ে থাকে; যার ফলে অবশিষ্ট সম্পত্তি বাহিরে চলে যায়। অর্থাৎ পিতা-মাতার ভাই-বোনদের কাছে চলে যায়। যার ফলে অনেকেই তাদের কষ্টার্জিত সম্পত্তি চায় না বাহিরে যাক, চায় শুধুমাত্র তার সন্তানরাই পেয়ে থাকুক। কিন্তু যদি ছেলে সন্তান না থাকে শুধু মেয়ে সন্তান থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সম্পত্তি যেহেতু বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই অনেকেই তাদের জীবিত অবস্থায় পুরো সম্পত্তি তাদের এক বা একাধিকন্যাকে হেবা বা দানপত্র দলিল করে দিয়ে যায়। কিন্তু এর বাহিরেও আরেকটি মাধ্যম রয়েছে, যে মাধ্যমটি প্রাকৃতিক। যার মাধ্যমে বাবা-মায়ের পুরো সম্পত্তির মালিক এক বা একাধিক কন্যা পেতে পারে; আর সেটি হচ্ছে লা-ওয়ারিশ প্রথা বাতিলের ফলে।

আমরা জানি, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৪ ধারার মাধ্যমে লাওয়ারিশ কথা বাতিল করা হয় এবং যার ফলে দাদা/দাদী জীবিত অবস্থায় বাবার মৃত্যু হলে বা নানা/নানি জীবিত অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হলে বাবা/মা জীবিত থাকলে যেমন সম্পত্তি পেতো, ঠিক ততটুকু সম্পত্তি তার সন্তানরা পাবে। অর্থাৎ, আপনার দাদা/দাদী যার সম্পত্তি সে জীবিত অবস্থায় যদি আপনার বাবা মারা যায়, সেক্ষেত্রে আপনার বাবা যদি জীবিত থাকতো তাহলে দাদা/দাদীর কাছ থেকে যতটুকু সম্পত্তি পাওয়ার কথা, ঠিক ততটুকু সম্পত্তি আপনি পাবেন। একইভাবে আপনার নানা/নানি জীবিত অবস্থায় যদি আপনার মা মারা যায়, সেক্ষেত্রে আপনার মা জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতেন ঠিক ততটুকু সম্পত্তি আপনি পাবেন।

এখন আইনে, দাদা/দাদী বা নানা/নানী জীবিত অবস্থায় মা/বাবা মারা যাওয়ার এতীম যে সন্তান রেখে যাবে এবং যে সম্পত্তি পাবে, সেই সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে বা তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের অনুপাত কেমন হবে, এসব বিষয়ে আলাদা করে কিছুই বলা হয়নি। যার ফলে, একমাত্র কন্যা সন্তান হলেও সে বাবা/মা জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতো, তার পুরোটাই সে পাবে।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.