দাদীর সম্পত্তিতে কি এতিম নাতনির হক আছে?

উত্তরাধিকার আইন

সাবিহার দাদীর নামে বসুন্ধরা এলাকায় একটি বিশাল ফ্ল্যাট আছে। সাবিহার দাদীর বয়স ৭৫ বছর। সাবিহার কোন ভাই বোন নেই, সে একমাত্র মেয়ে। সাবিহার বাবা মারা গেছেন গত বছর, বর্তমানে দুই চাচা জীবিত আছেন, কোন ফুফু নেই, আর দাদা অনেক আগেই মারা গিয়েছে। সাবিহার মা জীবিত আছে। দাদার সম্পত্তিতে সাবিহার বাবা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেয়েছিল। কিন্তু, দাদীর সম্পত্তি থেকে সাবিহা বা তার মা কোন অংশ পাবে কিনা?

প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পূর্বে আমাদেরকে ফারায়েজের মৌলিক বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে জানি যে, মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে মৌলিক একটি সূত্র হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যুকালে ওনার যেসব উত্তরাধিকার জীবিত আছেন, তারাই কেবল ওনার সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অংশ পাবে। ওনার উত্তরাধিকার যারা ওনার পূর্বেই মারা গেছেন, তারা কিন্তু কখনোই ওনার সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করবে না। বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ সম্পত্তি বণ্টনের যে মৌলিক বিষয়টি না জানার কারণে আপনি হিসেবে ভুল করছেন – Article – Legal Fist

 

এই মৌলিক সূত্রে অনুসারে হিসেব করলে আমরা দেখতে পাবো যে, মৃত ওয়ারিশ কখনো উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পায় না, যার ফলে সাবিহার দাদী জীবিত অবস্থায় সাবিহার বাবা মারা যাওয়ায় সাবিহার বাবা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এবং বাবা যেহেতু বঞ্চিত সেহেতু নাতনি হিসেবে সাবিহাও বঞ্চিত; এটাকে বলা হয় লা-ওয়ারিশ প্রথা। কিন্তু, এই লা ওয়ারিশ প্রথা বাতিল করা হয়েছে ১৯৬১ সালে আইয়ুব খানের আমলে একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, যার নাম দেওয়া হয় Muslim Family Law Ordinance 1961 বা মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১।

মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারায়, লা-ওয়ারিশ প্রথাকে বাতিল করা হয়। যার ফলে ১৯৬১ সালের পর থেকে কোন ব্যক্তির দাদা/দাদী জীবিত অবস্থায় যদি বাবা মারা যায় বা নানা/নানী জীবিত অবস্থায় যদি মা মারা যায়, সেক্ষেত্রে বাবা/মা জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতো, উক্ত এতিম নাতি-নাতনি ঠিক ততটুকু সম্পত্তি পাবে। এতিম নাতি-নাতনি এমন ভাবে সম্পত্তি পাবে যাতে মনে হবে যে তাদের বাবা/মা মারা যায় নি; বাবা মা জীবিত থাকলে যে অংশ পেতো, তা সরাসরি তাদের কাছে চলে যাবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ কেন লা-ওয়ারিশ প্রথা বাতিল করা হল? – Article – Legal Fist

 

যার ফলে, সাবিহা তার দাদীর কাছ থেকে তার বাবা জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতো, ঠিক ততটুকু সম্পত্তিই পাবে। এখন কথা হচ্ছে, সাবিহা কতটুকু পাবে?

সাবিহার বাবা যদি জীবিত থাকতো, তাহলে সাবিহার বাবা এবং তার দুই চাচা, এই ৩ জন হচ্ছে সাবিহার দাদীর ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার। সেই হিসেবে সাবিহার দাদীর মৃত্যুর পর ওনার নামে থাকা বসুন্ধরার সেই বিশাল ফ্ল্যাট সমান ৩ ভাগে ভাগ হবে এবং ওনার ৩ ছেলে সমান ভাবে ভাগ পাবে। এখন যেহেতু, সাবিহার বাবা জীবিত নেই, সেহেতু লা ওয়ারিশ প্রথা বাতিল এবং মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারা অনুসারে সাবিহার বাবা যতটুকু সম্পত্তি পেতো সাবিহা এখন ততটুকু সম্পত্তি পাবে। মেয়ে এবং একমাত্র মেয়ে বলে সে এখানে বাবার অর্ধেক সম্পত্তি পাবে, এই কথা এখানে বলা যাবে না। কেননা, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারার এই বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তির দাদা/দাদী জীবিত অবস্থায় যদি বাবা মারা যায় বা নানা/নানী জীবিত অবস্থায় যদি মা মারা যায়, সেক্ষেত্রে বাবা/মা জীবিত থাকলে যতটুকু সম্পত্তি পেতো, উক্ত এতিম নাতি-নাতনি ঠিক ততটুকু সম্পত্তি পাবে।

 

ছেলে হলে পুরোটা পাবে, মেয়ে হলে অর্ধেক পাবে, এমন কিছু কিন্তু বলা হয়নি। যার ফলে সাবিহা তার বাবার ন্যায় সম্পত্তি পাবে। এখানে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, সাবিহার বাবা যদি জীবিত থাকতো এবং সাবিহার দাদী যদি মারা যেতো তাহলে সাবিহার বাবা যা পেতো, সেটা তো আবার তার মৃত্যুর পর সাবিহা অর্ধেক পেতো, তার মা ১/৮ অংশ পেতো, বাকি আসাবা সম্পত্তি ঠিকই সাবিহার চাচাদের কাছে চলে যেতো। তাহলে এখানে কেন সাবিহার বাবার পুরো সম্পত্তি সাবিহা পাচ্ছে?- আপনার প্রশ্নটি যৌক্তিক কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারায় যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে চললে সাবিহা তার বাবার পুরো সম্পত্তিই পাবে, যদিও সেটি ফারায়েজের নিয়মিত আইন অনুসারে পাওয়ার কথা না। কিন্তু, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারায় যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে সাবিহা তার বাবার হয়ে বাবার মতো করে পুরো সম্পত্তিই পাবে। এই বিষয়ে আরও বিশদ জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ ভাতিজী কখন চাচার সমপরিমাণ সম্পত্তি পেতে পারে? – Article – Legal Fist

সাবিহার মা কি পাবে?

সাবিহার মা সাবিহার দাদীর কাছ থেকে কোন সম্পত্তি পাবে না। উত্তরাধিকার সূত্রে শাশুড়ির কাছ থেকে পুত্রবধূ কোন সম্পত্তি পায় না। আর, মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারায় শুধুমাত্র এতিম নাতি নাতনির অধিকার নিয়ে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী অধিকার নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

এতক্ষণ যা কিছুই বলা হয়েছে, সবকিছুই অনুসরণ করা হবে যদি, সাবিহার দাদী কাউকে উক্ত ফ্ল্যাটের কোন অংশ বা পুরো ফ্ল্যাট নিজের জীবদ্দশায় লিখে দিয়ে না যায় বা কোন উইল বা অসিয়ত করে না যায়। তিনি নিজে উক্ত ফ্ল্যাটের মালিক থাকাবস্থায় যদি মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে পুরো আর্টিকেলে যে যুক্তিতে সাবিহাকে তার বাবার ন্যায় সম্পত্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেভাবেই সাবিহা তার দাদীর কাছ থেকে উক্ত ফ্ল্যাটে অংশ পাবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.