তিন স্ত্রী কে কতটুকু সম্পত্তি পাবে?

উত্তরাধিকার আইন

মকবুল সাহেবের তিন স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী রিনা বেগম এক ছেলে রেখে মৃত্যু বরণ করে। দ্বিতীয় স্ত্রী আলেয়া বেগম দুই ছেলে এক মেয়ে রেখে মৃত্যু বরণ করে। তৃতীয় স্ত্রী সুমি বেগমের এক ছেলে এক মেয়ে। তৃতীয় স্ত্রী সুমি বেগমকে রেখে মকবুল মৃত্যুবরণ করেন। এখন প্রশ্ন হলো তিন স্ত্রী কে কতটুকু সম্পত্তি পাবে?

উপরের নামগুলো ছদ্মনাম হলেও প্রশ্নটি বাস্তব। আমরা ছদ্মনাম দিয়েই এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো। প্রথমত, মকবুল সাহেবের ৩ জন স্ত্রী। কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুকালে যদি একজন স্ত্রী জীবিত থাকে, তাহলে ঐ স্ত্রী লোক দুইটি উপায়ের যেকোনো একটি উপায়ে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেতে পারেন।

প্রথম উপায় হচ্ছে, যদি মুসলিম ব্যক্তির সন্তান থাকে, তাহলে স্ত্রী পাবেন ১/৮ (আটের এক) অংশ বা শতাংশের হিসেবে ১২.৫% (সাড়ে বারো পার্সেন্ট)। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে, যদি মুসলিম ব্যক্তির সন্তান না থাকে, তাহলে স্ত্রী পাবেন ১/৪ (চারের এক) অংশ বা শতাংশের হিসেবে ২৫% (পঁচিশ পার্সেন্ট)। বলা বাহুল্য যে, এখানে সন্তান বলতে মুসলিম পুরুষ ব্যক্তি হতে হবে। উক্ত সন্তান জীবিত স্ত্রীর হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। মুসলিম পুরুষ ব্যক্তির অন্য কোন সংসারের সন্তান হলেও এই ক্ষেত্রে মুসলিম ব্যক্তির সন্তান আছে বলে গণ্য হবে। এমনও হতে পারে যে, মুসলিম ব্যক্তির সাথে জীবিত স্ত্রীর কোন সন্তান নেই, কিন্তু পূর্বের বা অন্য কোন স্ত্রীর সাথে মুসলিম পুরুষ ব্যক্তির সন্তান আছে, সেক্ষেত্রেও জীবিত স্ত্রী পাবেন ১/৮ (আটের এক) অংশ বা শতাংশের হিসেবে ১২.৫% (সাড়ে বারো পার্সেন্ট)।

 

এখন আমাদের উপরে উল্লেখিত প্রশ্নে, মকবুল সাহেবের ৩ জন স্ত্রী, যথাক্রমে রিনা বেগম, আলেয়া বেগম এবং সুমি বেগম। উক্ত ৩ স্ত্রীর মধ্যে রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগম মকবুল সাহেবের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। মকবুল সাহেব যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন স্ত্রীদের মধ্যে কেবল সুমি বেগম জীবিত ছিল। এখন মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে মৌলিক একটি সূত্র হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যুকালে ওনার যেসব উত্তরাধিকার জীবিত আছেন, তারাই কেবল ওনার সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অংশ পাবে। ওনার উত্তরাধিকার যারা ওনার পূর্বেই মারা গেছেন, তারা কিন্তু কখনোই ওনার সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করবে না। বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ সম্পত্তি বণ্টনের যে মৌলিক বিষয়টি না জানার কারণে আপনি হিসেবে ভুল করছেন 

এখন মকবুল সাহেবের দুই স্ত্রী রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগম যেহেতু ওনার জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেছেন, সেহেতু ওনারা ২ জন স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও স্বামী মকবুল সাহেবের কাছ থেকে কোন সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাবেন না। তাই, এখানে স্ত্রী হিসেবে মকবুল সাহেবের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কেবলমাত্র সুমি সম্পত্তি পাবে। যেহেতু, মকবুল সাহেবের সন্তান রয়েছে, তাই সুমি বেগম সম্পত্তি পাবেন ১/৮ (আটের এক) অংশ বা শতাংশের হিসেবে ১২.৫% (সাড়ে বারো পার্সেন্ট)।

 

আশা করি উত্তরটা বুঝতে পেরেছেন। যারা বুঝতে পারেননি, তাদের জন্য বলছি, মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তি যখন মারা যায় ঠিক তখনি ওনার ফারায়েজের হিসেবটি খোলা হয়। আর ঠিক সেই মুহূর্তে মৃত ব্যক্তির যেসব উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ জীবিত থাকে, কেবল তারাই উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেয়ে থাকেন। স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার হিসেবে অবশ্যই অধিকার রয়েছে, কিন্তু সেই অধিকারটি তৈরি হয় যখন স্বামীর মৃত্যুকালে স্ত্রী জীবিত থাকে। এখানে যেহেতু রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগম মকবুল সাহেবের মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন, সেহেতু ওনারা কোন সম্পত্তি পাবেন না। ওনারা দুইজন যদি সুমি বেগমের ন্যায় জীবিত থাকতেন, তাহলে ওনারা ৩ স্ত্রী একসাথে মকবুল সাহেবের রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে ১/৮ (আটের এক) অংশ বা শতাংশের হিসেবে ১২.৫% (সাড়ে বারো পার্সেন্ট) পেতেন, যা ৩ জনের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করা হতো।

এখানে, ভুল বুঝার কারনে রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগমের সন্তানরা তাদের মৃত মায়ের অধিকার দাবী করে। রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগমের সন্তানদের এটা বুঝতে হবে যে, তাদের বাবা মকবুল সাহেব যখন মারা যান, তখন তাদের মায়েরা জীবিত থাকলে সম্পত্তি পেতো কিন্তু ওনারা মৃত বলেই ওনারা স্ত্রী হয়েও বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা ভালো ভাবে মনে গেঁথে রাখুন যে, মৃত ওয়ারিশ কখনোই মুসলিম উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পায় না।

উল্লেখ্য, রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগম স্বামী মকবুলের কাছ থেকে সম্পত্তি না পেলেও পিতা মকবুলের সম্পত্তি থেকে রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগমের সন্তানদের সম্পত্তি পেতে কোন বাঁধা নেই।

 

তবে হ্যাঁ, যদি মকবুল সাহেবের মৃত্যুর পর রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগম মারা যেতো এবং সুমি বেগম জীবিত অবস্থায় মকবুল সাহেবের সম্পত্তি বণ্টন করা হতো, তখন কিন্তু রিনা বেগম এবং আলেয়া বেগম সম্পত্তি পেতো। ওনারা তখন মৃত হলেও সম্পত্তি পেতো, কেননা মকবুল সাহেবের মৃত্যুকালে ওনারা জীবিত ছিল। ফারায়েজটা চালু হয় যখন সম্পত্তি রেখে ব্যক্তি মারা যায়, তখন নয় যখন আপনারা ঐ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের কাজে হাত দিয়েছেন। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের কাজে যখনি হাত দিন না কেন, মাথায় রাখতে হবে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর তারিখ এবং সময়। ঠিক মৃত্যুর সময় যেসব ওয়ারিশ জীবিত ছিল, তারাই কেবল সম্পত্তি পাবে। ওয়ারিশরা এরপর মারা গেলেও সমস্যা নেই, মৃত ওয়ারিশের উত্তরাধিকাররা মৃত ওয়ারিশের প্রাপ্য অংশ নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নিবে।

তবে, উল্লেখ্য কোন স্ত্রীর সাথে যদি তালাক বা ডিভোর্স কার্যকর হয়ে থাকে, তখন স্বামীর মৃত্যুকালে ঐ স্ত্রী জীবিত থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি কোন সম্পত্তি পাবেন না।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.