প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে দলিল সম্পাদন এবং দলিল রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
দলিল সম্পাদন হচ্ছে কোন একটি দলিলের উদ্দেশ্য এবং বিষয়বস্তু লেখালেখির যে কাজটা রয়েছি, সেই কাজটি সম্পন্ন করা। অর্থাৎ, আপনি দলিল লেখক কিংবা উকিল বা অন্য যে কারো সাথে বসে একটি দলিলের যে বিষয়বস্তু রয়েছে সেই বিষয়বস্তু যখন লেখালেখি শেষ করবেন, তখন সেই দলিলটিকে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। আর দলিল রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে যখন আপনি দলিলটি নিয়ে অর্থাৎ, সম্পাদিত বা সম্পাদন কৃত বা সম্পাদন করা যে দলিলটি রয়েছে সেটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করবেন, তখন তাকে বলা হবে দলিল রেজিস্ট্রেশন।
এখন একটি দলিল আপনি যদি সম্পাদন করে থাকেন, সেক্ষেত্রে সেটি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপনাকে সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিষ্ট্রেশন করাতে হবে। রেজিস্ট্রেশনবিহীন কোন সম্পাদিত দলিলের সাধারণত কোন মূল্য থাকে না। যে সময়ের মধ্যে একটি দলিল রেজিস্ট্রেশন করার কথা, সেই সময়ের মধ্যে যদি কোনো দলিল রেজিস্ট্রেশন করা না হয়, শুধু সম্পাদন করা অবস্থা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সেই দলিলের আইনগত ভিত্তি বা মূল্য অপেক্ষাকৃত অনেক কম থাকবে।
কিন্তু যখন একটি দলিল সম্পাদনের পর নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করা হবে, তখন ওই দলিলের আইনগত ভিত্তি বা আইনগত মূল্য সর্বোচ্চ থাকবে। এখন কথা হচ্ছে কোন দলিল কত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে?
সেই সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদের প্রথমেই যেতে হবে রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ২৪, ২৫, ২৬ তিনটি ধারাতে। আমরা যদি একসাথে ৩ টি ধারা পড়ি সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে, উইল এবং বায়না পত্র দলিল ছাড়া অন্য যত ধরনের দলিলগুলো রয়েছে সেই দলিলগুলো যেদিন সম্পাদন করা হবে অর্থাৎ সম্পাদনের তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে সাব রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।
যেহেতু এখানে উইল এবং বায়না পত্র ব্যতীত বাকি সকল দলিল বলেছে সেক্ষেত্রে আদালতের রায়ের মাধ্যমে যদি কোন দলিলের বিষয়বস্তু উঠে আসে, সেক্ষেত্রেও সেটাও তিন মাসের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। প্রশ্ন জাগতে পারে যে, তাহলে উইল কত দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে? রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ২৭ ধারা অনুযায়ী উইল সম্পাদনের তারিখ থেকে যেকোন সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, উইলকারী ক্যারি যদি মারা যায় সেক্ষেত্রে যেহেতু উনি জীবিত অবস্থায় রেজিস্ট্রেশন করেননি সেক্ষেত্রে সেটি আইনগত মূল্য রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মূল্য সমান হবে না।
অন্যদিকে।রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ১৭(ক)২ অনুসারে, বায়নাপত্র বা বিক্রয় চুক্তি দলিল সম্পাদনের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ বায়না দলিল যদি করে থাকেন আপনি কোন ব্যক্তির সাথে কোন সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। আপনি একটি জমি ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বায়না পত্র তো সম্পাদন করলেন করার ৩০ দিনের মধ্যে সেটিকে রেজিস্ট্রেশন করবেন এবং এর মধ্যে বাকি টাকা পয়সা পরিশোধ করার ফলে ওই জমিটি বিক্রয়ের দলিল করে ফেললেন। এখন বিক্রয় দলিল অর্থাৎ সাফ কবলা দলিল যে হবে সেই দলিলটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনি হাতে সময় থাকবে সম্পাদনের তারিখ থেকে ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাস।
তাছাড়া রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ২৬ ধারা অনুযায়ী বিদেশে সম্পাদিত কোনো দলিল বাংলাদেশে প্রবেশ করার তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ, যদি বাংলাদেশের বিষয়বস্তু নিয়ে কোন দলিল বিদেশে সম্পাদন করা হয়ে থাকে, সেই সম্পাদিত দলিলটি বাংলাদেশে যখন প্রবেশ করবে, প্রবেশ করার চার মাসের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রেশন করার জন্য এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে এই ব্যবহার যে বিদেশে দলিলটি কবে সম্পাদন করা হয়েছে, সেদিন থেকে দিন গণনা শুরু না করে বরং দলিলটি কবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সেই তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করার কথা বলা হয়েছে।
যদিও সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে জরিমানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের উচিত হবে আমরা অবশ্যই যাতে আইনে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সম্পাদিত দলিলকে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটি দলিল যখন রেজিষ্ট্রেশন করা হবে এবং তার পূর্বে সম্পাদন করা হয়ে থাকবে, সেক্ষেত্রে ওই দলিলটির যেহেতু দুই তারিখ রয়েছে, একটি সম্পাদনার তারিখ আরেকটা হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ; সেক্ষেত্রে ওই দলিলটি কবে থেকে কার্যকর হবে বা হয়েছে বলে আমরা ধরে নিব। উত্তর হচ্ছে, একটি দলিল যখন সম্পাদন করার পরে আইনে বর্ণিত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে উক্ত দলিল যেদিন সম্পাদন করা হয়েছে সেদিন থেকেই কার্যকর হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৪৭ ধারা অনুযায়ী কোনো দলিলের কার্যকারিতার সাথে দলিলটি রেজিস্ট্রেশনের তারিখের কোন সম্পর্ক নেই। বরং কোন রেজিস্ট্রিকৃত দলিল সেই দিন থেকে কার্যকর হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে দলিলটি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন না থাকলে যে দিন থেকে কার্যকর হতো।
অর্থাৎ কোন একটি দলিল যদি রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন না হতো, তাহলে সাধারণত ধরে নেওয়া হতো যেদিন দলিলটি সম্পাদন করা হয়েছে সেদিন থেকেই সেটি কার্যকর হবে, সেই হিসেবে কোনো দলিল যদি রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সেটি যেদিন সম্পাদন করা হয়েছে সেদিন থেকেই সেটি কার্যকর হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। অতএব, দলিল রেজিস্ট্রেশন এবং দলিল সম্পাদন উভয় তারিখের মধ্যে দলিল সম্পাদনের তারিখটি ধরে নিতে হবে দলিল কার্যকরের দিন হিসেবে।

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন।
( এই আর্টিকেলটি নিয়ে আরো কোনো প্রশ্ন থাকলে, যোগাযোগ করুনঃ 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )