মৃত্যুদন্ড

যে অপরাধ গুলোর জন্য আপনার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে

ফৌজদারি আইন

বাংলাদেশে কোন ব্যক্তি কোন crime বা ফৌজদারি অপরাধ করলে সে ক্ষেত্রে তাকে সাধারণত ৫ (পাঁচ) ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়। এই ৫ ধরনের সাজা গুলো হচ্ছে,

  • প্রথমত, মৃত্যুদণ্ড।
  • দ্বিতীয়ত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। (আমৃত্যু কারাদণ্ড)
  • তৃতীয়ত, যেকোনো মেয়েদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড।
  • চতুর্থত, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং
  • পঞ্চমত, অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা।

এই ৫ ধরনের সাজার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন তথা সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। আজকে আমরা জানবো, ফৌজদারি আইন গুলোর মধ্যে মূল আইন তথা দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুসারে কোন কোন অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যায় সেগুলো নিয়ে।

ভূমিকায় একটু বলে রাখা ভালো যে, সাজা প্রদান করার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরাধীকে সংশোধন করা এবং সমাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করা যাতে সমাজে অপরাধ আপনাআপনি দমন হয়। অপরাধীকে সাজা দিলে সে নিজে পুনরায় ঐ অপরাধ করবে না, আর একজন অপরাধীকে সাজা প্রদান করা হলে তাকে দেখে অন্যরাও অপরাধ করতে নিরুৎসাহিত তথা ভয় পাবে। কিন্তু, মৃত্যুদণ্ড এমন এক সাজা যেটিতে অপরাধীর আর সংশোধন হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় এমন সব অপরাধের জন্য, যেগুলো এতটাই গুরুতর প্রকৃতির যে, উক্ত অপরাধীর আর সংশোধনের সুযোগ নেই বা যে অপরাধ করেছে তাতে মৃত্যুদণ্ড ব্যতীত অন্য কোন লঘু দণ্ড প্রদান বাস্তবসম্মত নয়; এককথায় মৃত্যুদণ্ড বাঞ্ছনীয়।

প্রথমেই বলে রাখি দণ্ডবিধি ছাড়াও আরো বিভিন্ন স্পেশাল বা বিশেষ আইন রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়। কিন্তু আমরা আজকে আলোচনা করব শুধুমাত্র দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুসারে যেসব অপরাধের জন্য একজন অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা যায় সেইসব অপরাধ সম্বন্ধে। রেফারেন্সের হিসেবে আমরা যথাসম্ভব ধারা সমূহও উল্লেখ করে আলোচনা করবো।

  • প্রথমত, খুনের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। এটা আমাদের সকলেরই মোটামুটি জানা। বাংলা সিনেমার বদৌলতে আমরা জানতে পারি যে, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা মোতাবেক খুনের সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে সর্বোচ্চ শাস্তি বলতে বুঝায় খুনের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানা ও প্রদান করা যেতে পারে।
  • দ্বিতীয়ত, খুন সহকারে ডাকাতি করা হলে সেই ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড। অর্থাৎ, কেউ ডাকাতি করতে গিয়ে যদি খুনও করে ফেলে তাহলে দণ্ডবিধির ৩৯৬ ধারা মোতাবেক সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যাবে।
  • তৃতীয়ত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত কোন ব্যক্তি কর্তৃক খুনের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি যদি ইতিমধ্যে কোন অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকে এবং এমতাবস্থায় সে অন্য কোন ব্যক্তিকে খুন করে সেই ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
  • চতুর্থত, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি যদি কোন ব্যক্তিকে খুনের চেষ্টা করে সে ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত থাকাবস্থায় যদি অন্য কোন ব্যক্তিকে খুনের চেষ্টা করে ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি, attempt to murder (এটেম্পট টু মার্ডার) সে ক্ষেত্রে এই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড।
    তৃতীয় এবং চতুর্থ উভয় ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম যে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি কোন ব্যক্তি খুন করলে কিংবা খুনের চেষ্টা করলে তার সাজা হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড; এটাই স্বাভাবিক, তাই না? ব্যাটা এমনিতেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত, তার ওপর আবার আরেক জনকে খুন করার চেষ্টা বা খুন করবে, তাকে কি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন সাজা দেওয়া যায়?
  • পঞ্চম, ১০ বছরের কম বয়স্ক কাউকে অপহরণ করা হলে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। যদিও আদালত চাইলে উক্ত অপরাধের জন্য আসামিকে যাবজ্জীবন বা অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারেন এবং সাথে জরিমানা দণ্ডও প্রদান করতে পারেন।
  • ষষ্ঠ, কোন আসামী যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে দুটি চোখ উঠিয়ে ফেলা বা এসিড জাতীয় পদার্থের মাধ্যমে চোখ দুটির দৃষ্টি নষ্ট করে ফেললে বা মুখমণ্ডল এসিড দ্বারা বিকৃত করে ফেলে, সেই ক্ষেত্রে আসামিকে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেন।
  • সপ্তম, কোন ব্যক্তি যদি কোন শিশু বা উন্মাদ লোকের আত্মহত্যায় সহায়তা করে বা প্ররোচনা প্রদান করে সেই ক্ষেত্রে উক্ত অপরাধীকে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেন। যদিও উক্ত অপরাধের জন্য দণ্ডবিধির ৩০৫ ধারা মোতাবেক আদালত চাইলে যাবজ্জীবন বা অনধিক দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন এবং জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন।
  • অষ্টম, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যদি কোন ব্যক্তির যুদ্ধ ঘোষণা করে বা যুদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করে বা যুদ্ধ ঘোষণার সহায়তা প্রদান করে সেই ক্ষেত্রে উক্ত অপরাধীকে আদালত সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেন কিংবা যাবজ্জীবন এবং জরিমানা দণ্ড প্রদান করতে পারেন।
  • নবম, কোন ব্যক্তি যদি কোন বিদ্রোহে সাহায্য করে এবং ওই সাহায্যের ফলে বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয় সেই ক্ষেত্রে আদালত উক্ত অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেন। যদিও দণ্ডবিধির ১৩২ ধারা অনুসারে আদালত চাইলে উক্ত অপরাধের জন্য আসামিকে যাবজ্জীবন বা অনধিক দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ড প্রদান করতে পারেন।
  • দশম কারণটি একটু ইন্টারেস্টিং। যদি কোন ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করে যার ফলে কোন নির্দোষ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয় এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, সেই ক্ষেত্রে উক্ত অপরাধীকে অর্থাৎ যে ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করেছে বা মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করেছে তাকে আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯৪ ধারা অনুসারে উক্ত অপরাধের জন্য আদালত মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন বা অনধিক ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা প্রদান করতে পারেন।

 

অন্যান্য বিশেষ আইনের কোথায় কেন মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়, সেগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা অন্য কোন আর্টিকেলে লেখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্‌, ততক্ষণ পর্যন্ত লিগ্যাল ফিস্টের সাথেই থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.