Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধার প্রয়োগ

Estoppel নীতি

মোস্তফা সাহেবের একাধিক বাড়ি, শহরেও বাড়ি আছে, গ্রামেও বাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে কালেভদ্রে যাওয়া হয়ে থাকে; কেউ মারা গেলে বা মন চাইলে কোন ঈদের ছুটিতে। কিন্তু গ্রামের বাড়ি হোক আর শহরের, কেউ যদি না থাকে তখন বাড়ির অবস্থা দিন দিন নষ্ট হতে থাকে। তাছাড়া, শহর থেকে গ্রামে নিজ বাড়িতে ২ দিনের জন্য বেড়াতে গেলেও যদি বাড়িতে কেউ না থাকে তাহলে বাড়িতে গিয়ে উঠা যায় না, ২ দিন লেগে যায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে থাকার উপযোগী করতেই। তাছাড়া রয়েছে চোর ডাকাতে ভয়। এজন্য অনেকের মতই মোস্তফা সাহেবও তার গ্রামের বাড়ির জন্য কেয়ারটেকার হিসেবে জাকির নামের এক লোককে নিয়োগ করেন। জাকির ঐ বাড়ির নীচ তলায় পরিবার নিয়ে থাকে। মোস্তফা সাহেবও জাকিরের উপর বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে শহরে বসবাস করতে লাগলেন এবং জাকিরকে সময়ে সময়ে তার বেতনের সাথে যাবতীয় বাড়ির খরচ ও ট্যাক্স পৌঁছে দেন। জাকিরের কাছে দায়িত্ব দেওয়ার পর মোস্তফা সাহেব বেশ রিল্যাক্স হয়ে গেছেন এবং মোস্তফা সাহেবের পরিবারের লোকজনও গ্রামের বাড়ি সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে পড়েন। মোস্তফা সাহেব মারা যাওয়ার পর ওনাকে কবরস্থ করার পর ওনার ছেলে মেয়েরা অনেকদিন বাড়িতে আসেন নাই। এভাবে অনেকদিন যাওয়ার পর যখন মোস্তফা সাহেবের ছেলে মেয়েরা গ্রামের বাড়িতে আসলে দেখে যে, জাকির পুরো বাড়ির দখল নিয়ে নিছে এবং দাবী করছে যে এই বাড়ি তার। মোস্তফা সাহেবের ছেলে মেয়েরা যখন তাকে কেয়ারটেকার বলে এবং নিজেদের বাড়ি দাবী করে, তখন জাকির বলে যে, এই বাড়ি তার। সে জবরদখলের ভিত্তিতে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই বাড়িতে দখল বজায় রাখছে। সেই হিসেবে এই বাড়ি এখন তার এবং মোস্তফা সাহেবের ছেলে মেয়েদের কোন অধিকার নেই। অথচ, আমরা জানি যে, মোস্তফা সাহেব জাকিরকে এই বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কেয়ারটেকার যেমন বাড়ির মালিকের ন্যায় আচরণ করে, তাই আশপাশের মানুষরাও জাকিরের ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিল। তাছাড়া, কিছু লোককে ঘুষ দিয়ে সে তার পক্ষে কথা বলার জন্য রেখে দিয়েছে যাতে কেউ জিজ্ঞাসা করলে সে বলতে পারে যে, সে শুরু থেকেই এই বাড়িতে জবরদখল করে আছে। সকল পরিস্থিতি যখন জাকিরের পক্ষে আর মোস্তফা সাহেবের বিপরীতে, তখনি পুরনো কাগজ ঘেঁটে একটি চুক্তিপত্র পাওয়া গেলো যেখানে মোস্তফা সাহেব আর জাকির একটি চুক্তিপত্র করেছেন যেখানে মোস্তফা সাহেব জাকিরকে কেয়ারটেকার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ঐ বাড়িতে বিনা মূল্যে অনুমতি প্রদান করেছেন। যেহেতু জাকির ঐ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর/টিপসই প্রদান করেছেন, সেহেতু জাকির অনুমতি নিয়েই এই বাড়িতে থাকা শুরু করেছেন; যার ফলশ্রুতিতে

এখন জাকির চাইলেও ঐ অনুমতি নিয়ে বসবাস করা অস্বীকার করতে পারবে না; এটিই হচ্ছে সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারা অনুযায়ী, Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধার প্রয়োগ। উক্ত ধারায়, দুইটি ক্ষেত্রে Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ক্ষেত্র ২ টি নিম্নরূপ:

  • ১। ভাড়াটিয়া এবং মালিকের মধ্যে Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধা: একজন বাড়িওয়ালা (landlord) ভাড়ার বিনিময়ে একজন ভাড়াটিয়া (tenant)’কে তার দোকানে ভাড়া প্রদান করলে, ভাড়াটিয়া পরবর্তীতে উক্ত সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারবে না। প্রায়ই দেখা যায় যে, ভাড়াটিয়ারা গায়ের জোরে মালিকানা দাবী করে। তাই, অবশ্যই কাউকে বাড়ি কিংবা দোকান ভাড়া দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই চুক্তিপত্র করে নিবেন।
  • ২। অনুমতি প্রাপক (licensee) এবং অনুমতি দাতা (licensor)’র মধ্যে Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধা: আমরা শুরুতেই মোস্তফা সাহেব এবং জাকিরের মধ্যে যে ঘটনা বর্ণনা করেছিলাম, সেটিই হচ্ছে, অনুমতি প্রাপক (licensee) এবং অনুমতি দাতা (licensor)’র মধ্যে Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধা। সংক্ষেপে, অনুমতি নিয়ে কেউ দখল ফেলে পরবর্তীতে সেই অনুমতির বিষয়টি অস্বীকার করতে পারবে না। যদি কেউ অনুমতি নিয়ে কোন রাস্তাও ব্যবহার করে, পরবর্তীতে সেটিকে সরকারী বা অধিকার বলে দাবী করতে পারবে না, কেননা অনুমতি নিয়ে পরে সেটি অস্বীকার করলে সাক্ষ্য আইনে ১১৬ ধারার Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধার নীতিতে বাধা প্রাপ্ত হবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারা অনুযায়ী, Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধার নীতি শুধুমাত্র স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন, বাড়ি, জমি ইত্যাদির ভাড়াটিয়াকে মালিকের মালিকানা স্বত্ব অস্বীকার করা হতে বাধা প্রদান করা হয়েছে। কেননা, বাড়ির মালিকের সাথে ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি থাকে এবং অনুমতি প্রদানকারীর সাথেও অনুমতি দাতার একটি চুক্তি থাকে। উল্লেখ্য, সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারার Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধা হচ্ছে চুক্তি থেকে সৃষ্ট এস্টপেল। Estoppel by Deed/চুক্তি থেকে সৃষ্ট এস্টপেল একজন ব্যক্তিকে তাদের সম্পাদিত একটি চুক্তিতে বর্ণিত যেকোনো সত্যের সত্যতা অস্বীকার করতে বাধা দেয়। আপনি যখন কারো সাথে চুক্তি করবেন, তখন চুক্তিতেই উল্লেখ করে দিবেন যাতে কেউই চুক্তিতে বর্ণিত যেকোনো সত্যের সত্যতা অস্বীকার করতে না পারে।

 

সাক্ষ্য আইনের ১১৬ ধারার প্রয়োগ করতে হলে, মালিক পক্ষ স্থাবর সম্পত্তির দখল অবশ্যই ভাড়াটিয়া বা প্রজাকে প্রদান করতে হবে। অথবা, মালিক পক্ষের অনুমতি নিয়ে স্থাবর সম্পত্তির দখল ভাড়াটিয়া বা প্রজা গ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধা সাক্ষ্য আইনের একটি নীতি যা কিনা শুধু মাত্র দেওয়ানী কার্যক্রমে প্রয়োগ করা হয়। ফৌজদারি কার্যক্রমে Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধার কোন ব্যবহার নেই। ফৌজদারি কার্যক্রমের পাশাপাশি আইনসভায় যেসব আইন বা বিধি প্রণয়ন করা হয়, তাদের বিরুদ্ধেও Estoppel (এস্টপেল) বা স্বকার্যজনিত বাধা প্রয়োগ হবে না।

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.

এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন

Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )
Picture of Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

Advocate Chowdhury Tanbir Ahamed Siddique

চৌধুরী তানবীর আহমেদ ছিদ্দিক আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাকোত্তর (এলএল.এম) সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি আইন বিষয়ে লেখালেখি চর্চা করে আসছেন। ( এই আর্টিকেল সম্বন্ধে আপনার কোন মতামত জানাতে, মোবাইল: 01882-689299, ই-মেইল: tanbiradvocate@gmail.com )

আরো পড়ুন

সাক্ষীর স্মৃতি

আদালতে সাক্ষীর স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া

false testimony

কিভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য উদ্ভাবন করা হয়?

false witness statement

কিভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দান করা হয়?