কাবিন নামা

কাবিননামায় যে বিষয়গুলো লেখা থাকে

পারিবারিক আইন

বিবাহ বা বিয়ের আরবী শব্দ হলো নিকাহ। নিকাহের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, একত্রিত হওয়া; নারী পুরুষ মিলিত হওয়া। পারিভাষিক অর্থে নিকাহ বা বিয়ে বা বিবাহ বলা হয়ে থাকে। নিকাহনামা বা কাবিননামা বলতে আবার একই বিষয় বুঝানো হয়ে থাকে। কাবিননামা বা নিকাহনামা বলতে বিবাহ সম্পাদনের লিখিত চুক্তিকে বুঝানো হয়। মুসলিম আইন অনুসারে নিকাহ বা বিয়ে সম্পাদনের জন্য ‘নিকাহনামা বা কাবিননামা’ বাধ্যতামূলক নয়; বরং এটি রাষ্ট্রীয় আইনে বাধ্যবাধকতা।

nikahnama nikahnama

আজকে আমরা আলোচনা করবো নিকাহনামা বা কাবিননামার প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে।
তো চলুন শুরু করা যাকঃ

শুরুতেই দেখবেন ‘নিকাহনামা’ শব্দটি লেখা আছে, তারপর [বিধি ২৭ (১) (ক) দ্রষ্টব্য]-এটি মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা, ২০০৯ এর বিধি নাম্বার। যাই হোক এরপর দেখবেন, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা, ২০০৯ এর বিধি ২৮ (১) (ক) অনুযায়ী বিবাহ ফরম। এরপর ক্রমিক নাম্বার দিয়ে শুরু হবে একে একে তথ্য বিবরণী।

১। ওয়ার্ড, শহর ইউনিয়ন, তহসিল, থানা ও জেলার নাম যেখানে বিবাহ কার্য নিষ্পন্ন হইয়াছেঃ এখানে স্বভাবতই বিবাহ সম্পাদনের ঠিকানার কথা উল্লেখ করতে হবে।

 

২। নিজ নিজ বাসস্থানসহ বর ও তাহার পিতা এবং মাতার নামঃ জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্ট অনুযায়ী এগুলো সম্পন্ন করতে হবে।

 

৩। বরের বয়সঃ বরের বয়স ২১ বছর হতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্ট বা শিক্ষাগত সার্টিফিকেট অনুযায়ী।

 

৪। নিজ নিজ বাসস্থানসহ কন্যা ও তাহার পিতা এবং মাতার নামঃ ২ নং পয়েন্টের মত একই।

 

৫। কন্যা কুমারী, বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত নারী কি না?- বিবাহের কণে কুমারী নাকি বিধবা নাকি তালাকপ্রাপ্ত সেটি উল্লেখ করতে হবে। তবে কুমারী কিনা এই পয়েন্টটি শীঘ্রই বাতিল হয়ে যাবে, কেননা এই বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এসেছে।

 

৬। কন্যার বয়সঃ কণের বয়স ১৮ বছর হতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন বা পাসপোর্ট বা শিক্ষাগত সার্টিফিকেট অনুযায়ী।

 

৭। কন্যা কর্তৃক উকিল নিযুক্ত হইলে ঐ উকিলের নাম এবং তাহার পিতা ও মাতার নামসহ বাসস্থানের ঠিকানাঃ কনের কোন উকিল (উকিল বাবা বলে থাকে অনেকেই) নিয়োগ করা হলে ওনার বিস্তারিত বিবরণ।

 

৮। পিতার নাম, বাসস্থান ও কন্যার সহিত সম্পর্কের বর্ণনাসহ কন্যার উকিল নিয়োগে সাক্ষীদের নামঃ ৭ নাম্বার পয়েন্টের সাথে সম্পর্কিত।

 

৯। বর কর্তৃক উকিল নিযুক্ত হইলে ঐ উকিলের নাম এবং তাহার পিতা ও মাতার নামসহ বাসস্থানের ঠিকানাঃ ৭ নাম্বার পয়েন্টের অনুরূপ তবে বরের ক্ষেত্রে।

 

১০।পিতা এবং মাতার নাম ও বাসস্থানসহ বরের উকিল নিয়োগের ব্যাপারে সাক্ষীদেরঃ ৮ নাম্বার পয়েন্টের অনুরূপ তবে বরের ক্ষেত্রে।

 

১১। বিবাহের সাক্ষীদের নাম, তাহাদের পিতা এবং মাতার নাম ও বাসস্থানের ঠিকানাঃ যারা যারা বিবাহের সাক্ষী তাদের বিস্তারিত। মনে রাখবেন, অন্তত ২ জন পুরুষ সাক্ষী লাগবে। আর ২ জন পুরুষ সাক্ষী না থাকলে, ১ জন পুরুষের সাথে ২ জন মহিলা সাক্ষী লাগবে।

 

১২। যে তারিখে বিবাহের কথাবার্তা ঠিক হইয়াছিল সেই তারিখঃ বিয়ের দিনক্ষণ যেদিন বসে ঠিক করেছিলেন, সেদিনটির তারিখ।

 

১৩। দেনমোহরের পরিমাণঃ দেনমোহর কত টাকা বা প্রচলিত ভাষায় কাবিন কত টাকা, সে সম্বন্ধে লিখতে হবে।

 

১৪। দেনমোহরের কি পরিমাণ মুয়াজ্জল এবং কি পরিমান মু’অজ্জলঃ দেনমোহরের ২ টি অংশ রয়েছে। যথাক্রমে, (১) মুয়াজ্জল (আশু) দেনমোহর (২) মু’অজ্জল (বিলম্বিত) দেনমোহর।

ক) মুয়াজ্জল বা আশু দেনমোহর হচ্ছে, স্ত্রী চাহিবামাত্র যে দেনমোহর পরিশোধ করতে স্বামী বাধ্য থাকে। এটি বিয়ের আসরে বা সংসার করা অবস্থায় যেকোনো সময় স্ত্রী চাইতে পারে।

খ) মু’অজ্জল বা বিলম্বিত দেনমোহর হচ্ছে, দেনমোহরের সেই অংশ যেটি স্বামী পরে দিতে পারে বা স্ত্রী চাইলে স্বামীর মৃত্যুর পর/স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা তালাকের পর আদায় করতে পারে।

 

১৫। বিবাহের সময় দেনমোহরের কোন অংশ পরিশোধ করা হইয়াছে কিনা? যদি হইয়া থাকে তবে উহার পরিমান কত?- বিয়ের দিন বা সময় দেনমোহরের কোন অংশ পরিশোধ করা হয়েছে কিনা, হলে কত টাকা দেওয়া হয়েছে সে সম্বন্ধে।

 

১৬। বিশেষ বিবরণ ও পক্ষগণের মধ্যে চুক্তিসূত্রে নির্ণীত মূল্যসহ কোন সম্পত্তি সম্পূর্ণ দেনমোহর বা উহার অংশ বিশেষের পরিবর্তে প্রদত্ত হইয়াছে কি না?-দেনমোহর হিসেবে কোন সম্পত্তি প্রদান করা হয়েছে কিনা সে প্রসঙ্গে।

 

১৭। বিশেষ শর্তাদি থাকিলে তাহাঃ বিশেষ শর্ত ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি নির্ভর করে।

 

১৮। স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করিয়াছে কি না? করিয়া থাকিলে কি কি শর্তেঃ এটি একটি বিশেষ পয়েন্ট, এখানে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ক্ষমতা দিয়ে থাকেন এবং প্রয়োজনে শর্ত আরোপ করতে পারেন যে কি কি শর্তে তালাক দিতে পারবেন সে সম্বন্ধে বিস্তারিত।

 

১৯। স্বামীর তালাক প্রদানের অধিকার কোন প্রকারে খর্ব হইয়াছে কি না?- স্বামীর তালাক প্রদানের অধিকার খর্ব হচ্ছে কিনা কোন ভাবে, সে প্রসঙ্গে।

 

২০। বিবাহের সময় দেনমোহর, খোরপোষ ইত্যাদি সম্পর্কে কোন দলিল করা হইয়াছে কি না? যদি হইয়া থাকে উহার সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ অনেকেই আছেন, বিবাহের সময়ই খোরপোষ মাসিক বা বার্ষিক কত করে দিবেন বা দেনমোহর কিভাবে পরিশোধ করবেন সেটি উল্লেখ করে কাগজপত্র করে রাখেন; সে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।

 

২১। বরের কোন স্ত্রী বর্তমানে আছে কি না এবং থাকিলে অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য বর ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ মোতাবেক সালিসী কাউন্সিলের অনুমতি লইয়াছে কি না?- প্রথম স্ত্রী বলবত থাকাবস্থায় পুনরায় বিয়ে করার ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর যে অনুমতি লাগে সে প্রসঙ্গে।

 

২২। অন্য বিবাহে আবদ্ধ হইবার জন্য সালিসী কাউন্সিলের নিকট হইতে বরের নিকট প্রেরিত অনুমতিপত্রের নম্বর ও তারিখঃ ২১ নাম্বার পয়েন্ট অনুযায়ী, অনুমতিপত্রের নাম্বার ও তারিখ।

 

২৩। যে ব্যক্তির দ্বারা বিবাহ পড়ান হইয়াছে তাহার নাম ও তাহার পিতা এবং মাতার নামঃ যিনি বিবাহ পড়িয়েছেন, ওনার বিবরণ।

 

২৪। বিবাহ রেজিস্ট্রী করার তারিখঃ এখানে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

 

২৫ । পরিশোধিত রেজিস্ট্রী ফিসঃ …/=………টাকা (কথায়….টাকা)- দেনমোহর বা কাবিনের পরিমাণের ১.৪% হচ্ছে বিবাহের নিকাহনামা রেজিস্ট্রি ফি। তবে তা কেবল ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহর পর্যন্ত, এর উপর গেলে প্রতি লাখে ১০০ টাকা করে যোগ হবে শুধু।

এরপর শুধু একগাদা স্বাক্ষর আর সীল। আশা করি কাবিননামার নমুনাপত্র দেখে এখন সহজেই বুঝতে পারবেন কোন পয়েন্টটিতে কোন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। ধন্যবাদ।

 

বরের স্বাক্ষর ।

কন্যার স্বাক্ষর।

বিবাহের স্বাক্ষীর স্বাক্ষর।

 

বরের উকিলের স্বাক্ষর ।

কন্যার উকিলের স্বাক্ষর।

নিকাহ রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর ও সীল।

 

বরের উকিল নিয়োগের ব্যাপারে স্বাক্ষীর স্বাক্ষর ।

কন্যার উকিল নিয়োগের ব্যাপারে স্বাক্ষীর স্বাক্ষর।

যে ব্যক্তির দ্বারা বিবাহ পড়ানো হইয়াছে তাহার স্বাক্ষর ।

সীল

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.