How to get married as a minor

অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায়ও যেভাবে বিয়ে করা যায়

পারিবারিক আইন

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ২ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে যে, “বাল্যবিবাহ” অর্থ এমন বিয়ে যার কোন এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাকে বা কাদেরকে আমরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলবো?  

এর উত্তর অবশ্য উক্ত আইনেই দেওয়া আছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ২ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে যে, “অপ্রাপ্ত বয়স্ক” অর্থ বিয়ের ক্ষেত্রে ২১ (একুশ) বছর পূর্ণ করেন নাই এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ (আঠারো) বছর পূর্ণ করেন নাই এমন কোনো নারী। 

এখন আবার প্রশ্ন করতে পারেন যে, তাহলে প্রাপ্ত বয়স্ক কারা?

উত্তর, যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক নয়, তারা সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক। আর আইনের ভাষায় বললে, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ২ ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে যে, “প্রাপ্ত বয়স্ক” অর্থ বিয়ের ক্ষেত্রে ২১ (একুশ) বছর পূর্ণ করেছে এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ (আঠারো) বছর পূর্ণ করেছে এমন কোনো নারী।

তাহলে আমরা এখন অন্তত একমত হতে পারলাম যে, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের বয়স হতে হবে ২১ এবং মেয়ের ১৮। কোন বিয়েতে ছেলের বয়স ২১ এর কম বা মেয়ের বয়স ১৮ এর কম বা উভয়েরই যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ এর কম হয়, তবে সেটাকে বলা হবে বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ একটি শাস্তি যোগ্য অপরাধ। বাল্যবিবাহের শাস্তি কি, সে সম্বন্ধে জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ বাল্যবিবাহ এবং এর শাস্তি – Article – Legal Fist

কিন্তু, এই শাস্তিযোগ্য অপরাধেরও রয়েছে একটি ব্যতিক্রম। চলুন জানি, ব্যতিক্রমটা কি…

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, বিধিদ্বারা নির্ধারিত কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে,  অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিয়ে সম্পাদিত হলে, তা এই আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না। 

অর্থাৎ, ১৯ ধারার বিশেষ বিধান অনুসারে আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোন বিয়েতে ছেলের বয়স ২১ এর কম বা মেয়ের বয়স ১৮ এর কম বা উভয়েরই যথাক্রমে ২১ এবং ১৮ এর কম হলেও আইনত বিয়ে দেওয়া যাবে এবং সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে না। তবে, শর্ত হচ্ছে, উক্ত বিয়ে হতে হবে…

১। অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে;

২। আদালতের নির্দেশ এবং

৩। পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে।

বিশেষ বিধান করে বাল্যবিবাহের অনুমোদন দেওয়ার কারন কি?

স্কুল, কলেজে পড়াশোনা বা একই এলাকায় বসবাস বা এখনকার দিনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা একে অন্যকে ভালো লাগে এবং এক সময় মনের আদান প্রদান করে ফেলতে পারে। কিন্তু বয়সের কারনে বিয়ে করতে জটিলতা তৈরি করে। আইনত তারা তখন বিয়ে করতে পারবে না, কিন্তু বাস্তবতা এমন হতে পারে যে, তাদের বিয়ে না হলে তাদের দুইজনের মানসিক অবস্থা বা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। পারিবারিক সমস্যা থেকে শুরু আত্নহননের ঘটনাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এখনকার দিনে আত্নহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েরা ভুল পথে পা বাড়াতে পারে। তাছাড়া, বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা সহ যাবতীয় প্রেম ঘটিত ব্যাপারে উভয় পরিবার এবং সমাজে যে বিরূপ প্রভাব পড়ে, সেটা সম্বন্ধে সকলেই আমরা অবগত এবং অনেকেরই রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। তাই, বাল্যবিবাহ আইনের কঠোরতাকে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে ১৯ ধারার বিশেষ বিধানের মাধ্যমে। 

এখানে উল্লেখ্য যে, মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। তাই, মানুষের স্বার্থে বা পরিস্থিতির বিবেচনায় আইনকে পরিবর্তন বা আইনের মধ্যে ব্যতিক্রম রাখা হয়ে থাকে। সব মানুষ যেমন এক সমান নন, তেমনি প্রতিটি পরিস্থিতি একে অন্যের চেয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।

তাই, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ১৯ ধারার বিশেষ বিধানের আলোকে কেউ বিয়ে করতে চাইলে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা ২০১৮ এর ১৭ বিধি মোতাবেক, আদালতে উভয়পক্ষের পিতামাতা/আইনগত অভিভাবক বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্কসহ উভয়পক্ষ অথবা বিয়ের পাত্রপাত্রী উভয়ে যৌথ আবেদনের ভিত্তিতে কারণ উল্লেখপূর্বক দালিলিক প্রমাণসহ (যদি থাকে) আবেদন করতে পারবে। আদালত আবেদনটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ‘যাচাই কমিটি’র নিকট প্রেরণ করবেন। যাচাই কমিটি বিষয়টি যাচাই বাছাইয়ের অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

যাচাই কমিটি অনুসন্ধান করে বিয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র/পাত্রীর সর্বোত্তম স্বার্থে এবং সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে হচ্ছে মর্মে নিশ্চিত হলে, নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বে আবেদিতকৃত বিয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতসহ উপযুক্ত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

যাচাই কমিটি লিখিত প্রতিবেদন সিলমোহরকৃত খামে করে আদালতে প্রেরণ করবেন। আদালত প্রয়োজন মনে করলে যাচাই কমিটিকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ দিতে পারেন। যাচাই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত যদি এই মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থেই বিশেষ বিধানের আওতায় উক্ত আবেদনকৃত বিয়ে হওয়া সমীচীন, সেক্ষেত্রে আদালত উক্ত আবেদনকৃত বিয়ের অনুমতি প্রদান করতে পারবেন; অথবা আদালত প্রয়োজন মনে করলে উক্ত বিষয়ে অধিকতর তদন্ত/পুনঃতদন্তক্রমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

যাচাই কমিটি অনুসন্ধান করে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের স্বার্থেই তাদের বিয়ে হওয়া আবশ্যক মনে করেন, তাহলে যেমন সুস্পষ্ট মতামত প্রতিবেদন আকারে দাখিল করবেন, একই ভাবে যদি যাচাই কমিটি অনুসন্ধান করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পেয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু যাচাই কমিটি নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বে, অর্থাৎ ছেলের ২১ এবং মেয়ের ১৮ হওয়ার পূর্বে বিয়ে সম্পাদন না করার বিষয়ে মতামত প্রদান পূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেন। যাচাই কমিটির প্রতিবেদন নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বেব বিয়ে না করার মতামত দিবেন যখন যাচাই কমিটি দেখেন যে…

১। আবেদনকৃত বিয়েটি জোরপূর্বক সংঘটিত হচ্ছে;

২। আবেদনকৃত বিয়েটি নিম্নোক্ত কারণে সংঘটিত হচ্ছেঃ

  • ধর্ষণ,
  • অপহরণ,
  • জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি।

৩। আবেদনকৃত বিয়েতে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে নিম্নোক্ত বিষয়ে মামলা বিচারাধীন আছেঃ

  • ধর্ষণ,
  • অপহরণ,
  • জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন।

ভয়ের কিছু নেই, যাচাই কমিটির প্রতিবেদন নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বেব বিয়ে না করার মতামতের অর্থ কিন্তু এই নয় উক্ত অপ্রাপ্ত বয়স্ক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিয়ে সম্ভব নয়; বরং, অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় সম্ভব নয়। পক্ষদ্বয়কে বিয়ের জন্য কেবল প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যেইমাত্র তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হবে, তখনি তারা বিয়ে করতে পারবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

মুসলিম বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ মুসলিম আইনে বিয়ের যত নিয়ম-কানুন – Article – Legal Fist 

পালিয়ে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আরও বিশদভাবে জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেনঃ পালিয়ে বিয়ে এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থা – Article – Legal Fist 

close

Subscribe

Subscribe to get an inbox of our latest blog.